সাবাশ খুদে বাঘের দল 

সালেক সুফী

ক্রমাগত পরাজয়ে যখন টিম টাইগার্সদের করুন অবস্থা তখন গোটা টুর্নামেন্ট দাপটের সঙ্গে খেলে অনায়াসে অনুর্ধ ১৯ এশিয়া কাপ জয় করলো বাংলাদেশ। টুর্নামেন্টে কোনো ম্যাচে ওদের সামান্যতম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পড়তে হয়নি। আজ ইউএইকে ফাইনালে ১৯২ রানের বিশাল ব্যাবধানে পরাজিত করে বাংলাদেশ পরবর্তী অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপের সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কঠোর বার্তা পৌঁছে দিলো।

প্রথমে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভারে করেছিল ২৮২/৮। জবাবে বাংলাদেশের তুখোড় বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ের মোকাবিলায় ২৪.৫ ওভারে ৮৭ রানে সাঙ্গ হয় ইউএই দলের ইনিংস। মাইলফলক স্থাপনকারী ১৯২ রানের বিশাল ব্যাবধানে জয়। টিম টাইগার্স এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে সমর্থক অনুরাগীদের স্বপ্ন ভঙ্গ করেছে। নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

এমনি অবস্থায় খুদে বাঘদের দাপুটে জয় অনুরাগীদের নতুন স্বপ্ন বোনার উপলক্ষ্য হিসাবে বিবেচিত হবে। স্মরণীয় যে আজ থেকে ৪ বছর আগেই অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। যেভাবে খেলেছে এই টুর্নামেন্ট পরবর্তী অনুর্ধ ১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের দাবিদার হিসাবে অবশ্যই বিবেচিত হতে পারে।

বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন বিদেশি কোচের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি বাংলাদেশ ক্রিকেটে বয়সভিত্তিক দলগুলো বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে তুলনীয়।  কিন্তু দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সার্বিক মান অনেক পিছিয়ে পড়ায় তরুণ ক্রিকেটারদের বিকাশ যথাযথ হয় না।

সঠিক সময়ে সঠিকভাবে ওদের জাতীয় দলে এবং সুযোগ দেওয়া হয় না। সঠিক পরিচর্যার অভাবে অনেক মেধাবী ক্রিকেটার জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পায় না।  তাই বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে সমমানের ভারতীয়, শ্রীলংকান, পাকিস্তানী ক্রিকেটার জাতীয় দলে প্রতিষ্ঠিত হলেও অনেকের প্রতিভা অনাদরে ঝরে পড়ে।

বাংলাদেশ জাতীয় দল সেমিফাইনালে যেভাবে শক্তিশালী ভারত দলকে কোনঠাসা করে হারিয়ে দেয় সেখান থেকেই অনুমান করেছিলাম ফাইনালে স্বাগতিক ইউএই দাঁড়াতেই পারবে না। আজ প্রথম ব্যাটিং করে এই টুর্নামেন্টে দারুন ফর্মে থাকা আশিকুর রহমান শিবলীর অনবদ্য ১২৯ রানের উপর ভোর করে ৮ উইকেটে ২৮২ রান করে বাংলাদেশ। চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ানের ৬০ এবং আরিফুল ইসলামের ৫০ বড় স্কোর গড়ায় সহায়কের ভূমিকা পালন করে।

ইনিংস বিরতিতে আজ খ্যাতনামা ভাষ্যকার আলফাজ আহমেদের সঙ্গে ছিলাম। দুজনই নিশ্চিত ছিলাম বাংলাদেশের তুখোড় বোলিংয়ের মুখে ধসে যাবে ইউএই। তবে সেটি যে ২৪.৫ ওভারে মাত্র ৮৭ রানে গুটিয়ে যাওয়া সেটি ভাবিনি।

বাংলাদেশের তিন পেসার মারুফ মৃধা (৩/২৬)। রোহানাৎ বর্ষণ (৩/২৬ ) এবং ইকবাল হোসেন ইমনের (২/১৫) আগ্রাসী বোলিং গুড়িয়ে দেয় ইউএই দলকে।  অথচ এই ইউএই দল এই টুর্নামেন্টে শ্রীলংকা এবং পাকিস্তান দলকে হারিয়ে ফাইনালে এসেছে।

বাংলাদেশ দলের দুটি ম্যাচ দেখার পর মনে হয়েছে এই দলকে যথাযথ পরিচর্চা করা হলে এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার সুযোগ দেওয়া হলে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতীয় দলে খেলানোর জন্য যেন তাড়াহুড়ো করা না হয়। যথাসময়ে যথাযথ পরিবেশে জাতীয় দলে সুযোগ দেওয়া হলে এই দলের অনেকেই দীর্ঘ সময় জাতীয় দলকে সেবা দিবে।

অভিনন্দন খুদে বাঘ বাহিনীকে জাতিকে বিজয়ের মাসে বিজয় উপহার দেওয়ার জন্য।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়াি বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × two =