সীমানা পেরোনো আলমগীর কবিরের জন্মদিন আজ

চলচ্চিত্র পরিচালক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলমগীর কবিরের জন্মদিন আজ। তিনি ১৯৩৮ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাঙামাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক বাসস্থান ছিল বরিশালের বানারিপাড়ায়। তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে বেশ কিছু প্রভাবশালী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার তিনটি চলচ্চিত্র ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের ‘বাংলাদেশের সেরা ১০ চলচ্চিত্র’ তালিকায় স্থান পেয়েছে।

আলমগীর কবির ১৯৫২ সালে ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৫৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি গ্রহণের পরে, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড চলে যান। এই সময়ে তিনি ইংগনমার বার্গম্যানের সেভেনথ সিল সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি চলচ্চিত্রটি বেশ কয়েকবার দেখেন এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি এ সময়ে চলচ্চিত্রশিল্পের ইতিহাস, চলচ্চিত্র পরিচালনা এবং কলাশাস্ত্রের উপর বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেন।

১৯৬৬ সালে আলমগীর স্বদেশে ফিরে আসেন। বামপন্থী আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে আইয়ুব সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। পরবর্তীতে, তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে তার পেশাজীবন শুরু করেন এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই একজন চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার যুদ্ধ নির্মাণ শুরু সময়ে, তিনি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইংরেজি বিভাগে প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তিনি নির্বাসিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধান প্রতিবেদক হিসেবেও কাজ করেন। এ সময় তিনি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের মাধ্যমে তার পরিচালক জীবন শুরু করেন। স্বাধীনতার যুদ্ধের পরে, তিনি পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। তার চলচ্চিত্রগুলো বেশ সমালোচিত এবং জনপ্রিয়তা লাভ করে।

আলমগীর কবির ১৯৭৩ সালে নির্মাণ করেন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র ধীরে বহে মেঘনা। এই চলচ্চিত্রটির নির্মাণশৈলী বাংলাদেশে নির্মিত যেকোনো মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্র থেকে আলাদা। এটিতে কবির যুক্ত করেছেন মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজ ও ফিকশন যেমন- মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহণ, মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধযাত্রা, ১৬ ডিসেম্বর ট্রাকভর্তি মুক্তিযোদ্ধাদের জয়ধ্বনি এবং ঘরে ফেরার দৃশ্য।

আলমীগর কবিরের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে ধীরে বহে মেঘনা  (১৯৭৩), সূর্য কন্যা (১৯৭৫), সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), রূপালী সৈকতে  (১৯৭৯), মোহনা  (১৯৮২), পরিণীতা  (১৯৮৪), মহানায়ক  (১৯৮৫) অন্যতম।

শিল্পকলায় অসাধারণ অবদানের জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার হিসাবে পরিচিত ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ প্রদান করা হয় তাকে। তিনি তার প্রথম পরিচালিত চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার (বাচসাস) এবং জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন পাঁচবার; শ্রেষ্ঠ পরিচালক সূর্য কন্যা (১৯৭৫), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার  সূর্য কন্যা (১৯৭৫), শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭), শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা সীমানা পেরিয়ে (১৯৭৭) এবং শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিণীতা (১৯৮৬)।

আলমগীর কবির বগুড়া জেলায় একটি চলচ্চিত্র বিষয়ক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ঢাকা ফিরে আসার পথে ২০ জানুয়ারি ১৯৮৯ সালে নগরবাড়ি ফেরি ঘাটে এক দুর্ঘটনায় মারা যান।

বার্তা২৪

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 + nineteen =