সুন্দরবনের অন্য রূপ

সুনসান নীরবতায় সুন্দরবন যেন প্রকৃতির নিজস্ব অপরূপ সাজে সেজেছে। দীর্ঘ ৫ মাসেরও অধিক সময় ধরে বনে দর্শনার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকায় বনের উপর চাপ কমেছে। তাই এখন ভিন্ন রূপ সুন্দরবন ও বনের বন্যপ্রাণীর মাঝে।
মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দ না থাকায় বনের বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণীর ঝাঁকের দেখা মিলছে বনের নদ-নদী ও খালের পাড়গুলোতে। যেখানে ১০ বছরেও বাঘের দেখা মেলেনি, সেখানেও দিনে দুপুরে আসছে বাঘ।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সুন্দরবন দেখার আগ্রহ রয়েছে দেশ-বিদেশের সকল বয়সের মানুষের কাছেই। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে সুন্দরবনে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসেন পর্যটকেরা। কিন্তু চলমান করোনা প্রাদুর্ভাবের দুই বছরে দর্শনার্থীদের সেই ভ্রমণ সুযোগ অনেকাংশেই কমে গেছে।
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে গত ৩ এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে সুন্দরবনে পর্যটকদের ভ্রমণ। তাই বনে নেই মানুষের পদচারণা, পরিবেশ দূষণকারী নৌযান বিকট শব্দ ও চলাচল।
সুনসান নীরবতায় বনের প্রকৃতিতে ভিন্ন রূপের সৃষ্টি হয়েছে। ৫ মাসের অধিক সময় ধরে বন জুড়ে নীরবতায় গাছপালা যেন হাত বাড়িয়ে ডাকছে, পাখির কলকাকলীতে মুখর সুন্দরবন। ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর দেখা মিলছে।
দীর্ঘ ১০ বছরেও বনের করমজল পর্যটন কেন্দ্রে বাঘের দেখা না মিললেও এখন প্রায় দিনে দুপুরে বাঘ দেখা যাচ্ছে সেখানে।
নানা প্রজাতির গাছপালা, পশুপাখি ও প্রাণীর বিচরণস্থল এ সুন্দরবনে সারা বছর ধরে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে দর্শনার্থীরা শুধু দেখা পান হরিণ, বানর, কচ্ছপ ও কুমিরের। বাকি সব প্রাণী মানুষের কোলাহল ও নৌযানের শব্দে বনের ভেতরের দিকেই বিচরণ করতো। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে মানুষের পদচারণা ও নৌযানের শব্দ না থাকায় প্রাণীর ঝাঁক চলে আসছে বনের নদী ও খালের পাড়সহ পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। যদিও এমন পরিবেশই বন্যপ্রাণীর প্রজনন উপযোগী।
করমজল পর্যটন কেন্দ্রের বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংগ্রহকারী কর্মচারী মো. লিটন মুন্সী ও মো. সুজন হাওলাদার বলেন, সুন্দরবনের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে আমরা হরিণের খাদ্য অর্থাৎ পাতা সংগ্রহ করে।
এখন দেখছি বনের নদী ও খালের পাড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে হরিণ, বানর, বন্য শূকর, শজারু, সাপ ও পাখি। আগে এগুলো দেখতাম না। নৌযান ও পর্যটকদের চলাচল না থাকায় এসব প্রাণী এখন কাছাকাছি দেখা যাচ্ছে।
করমজল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আবুল হাসান বলেন, আগে যখন নিয়মিত পর্যটক ও ট্রলার আসতো তখন দুই একটি হরিণ ছাড়া কিছু দেখা যেত না। কিন্তু এখন বিভিন্ন পশুপাখি ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা যাচ্ছে। বনের ভেতর থেকে লোকালয়ের কাছাকাছি পর্যন্ত চলে আসছে।
পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, দীর্ঘ নীরবতার কারণেই আগে যে সকল প্রাণী অহরহ দেখা যেতো না, এখন সে সকল প্রাণীর ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলছে। আর বাঘ বিশেষ করে বনের গহিনেই বিচরণ করলেও এখন তাও দেখা যাচ্ছে পর্যটন কেন্দ্রের উপরই। মূলত সুনসান নীরবতার কারণেই বনের রূপ বদলে গেছে।
পুরো সুন্দরবনে বছরে প্রায় ৫ লাখ মানুষ ভ্রমণ করে থাকেন। আর তাদের পরিবহনে ব্যবহৃত হয়ে থাকে প্রায় ২৫ হাজার ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের নৌযান।
করোনার কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় মানুষ ও নৌযান চলাচল না থাকায় বনের পরিবেশ পাল্টে গেছে।

দেশরূপান্তর

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × five =