সালেক সুফী
কত কাছে তবু দূরে স্বপ্ন ছোয়ার মাহেন্দ্রক্ষণ। বাংলাদেশ ভারত টেস্ট দ্বৈরথের ঢাকা টেস্ট চতুর্থ দিনশেষে আশা নিরাশার দোলায় দুলছে। ব্যাটিং করার জন্য দুরূহ উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৫/৪ করা ভারতের সিরিজ জয় আর বাংলাদেশকে ভারত ওয়াশ করার জন্য প্রয়োজন ১০০। বাংলাদেশ ৬ উইকেট তুলে নিলে ভারতের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক প্রথম টেস্ট জয়ের মাইল ফলক অর্জন করবে।
উইকেটে বাঁক নিচ্ছে বল, নিচু হয়ে আসা বলগুলো ব্যাকফুটে খেলা বিপদজনক। বাংলাদেশের ২২৭ রানের প্রথম ইনিংসের জবাবে ভারত করেছিল ৩১৪। দ্বিতীয় ইনিংসে জাকির (৫১), লিটন (৭৩), সোহান (৩১), তাসকিনের (৩১*) সংগ্রামী ইনিংসগুলোর সম্মিলনে বাংলাদেশের সংগ্রহ হয় ২৩১। শেষ বিকেলে ভঙ্গুর উইকেটে ১৪৪ রান লিড নিয়ে বেঙ্গল টাইগারস চেপে ধরে টিম ইন্ডিয়াকে। মেহেদী মেরাজ (৩/১২), সাকিবের (১/২১) সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে রাহুল, সুবমান গিল, চেতসার পূজারা, বিরাট কোহলি ফিরেছে তাঁবুতে। দিনশেষে আকসার প্যাটেল (২৬*) আর নৈশ প্রহরী উনাদকাত (৩*) নিয়ে লড়ছে।
ঐতিহাসিক জয় বাংলাদেশের হাত ছোঁয়া দুরত্বে। কতবার দেখেছি বাংলাদেশের কত স্বপ্ন হাতছানি দিয়ে মরীচিকা হয়ে যেতে। উইকেটের যে অবস্থা, ম্যাচের যে পরিস্থিতি তিন বিশ্বসেরা স্পিনার নিয়ে রয়েল বেঙ্গল অভয়ারণ্যে জয় না পেলে হৃদয় ভেঙে যাবে। বিজয়ের মাসে ভারতকে পরাজিত করতে পারলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অরুণোদয়ের অগ্নি সাক্ষী হিসাবে গর্বিত হবো।
আজ সকালে বিশেষ কাজে আমি ব্যস্ত ছিলাম। ভেবেছিলাম টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলে বাংলাদেশকে একটি স্বস্তির স্থানে নিয়ে যাবে। শান্ত, মোমিনুল, শাকিব, মুশফিক হতাশ করায় ৪/৭০ রান হলে অনেক গুরুত্বপূণ কাজ ফেলে ছুটে যাই মাঠে। টাইগারদের সঙ্গী হয়ে লিটন, জাকিরদের জন্য গলা ফাটাই। ১৩৫ বল খেলে ৫১ রান করে জাকির। আমি ওর ব্যাটিংয়ের মাঝে আগামীর সম্ভাবনা দেখি। লিটনের (৭৩) রানের পরিণত ব্যাটিং বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা না দিলেও সংগ্রাম করার পুঁজি যোগান দেয়।
বলতেই হবে এই উইকেটে ভারতের বোলিং ছিল বিশ্বমানের। তবে বাংলাদেশ ইনিংসের মোমেন্টাম এনে দেয় সোহান (৩১) আর তাসকিন (৩১*) । আমি তাসকিনের হার না এমন ইনিংসটিকে অমূল্য বলবো। ভারতের উঁচুমানের বোলিং সামাল দিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩১ রান ১৪৪ রানে এগিয়ে দেয় বাংলাদেশকে। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি ১৭৫-১৮০ রানে এগিয়ে থাকলে আরো স্বস্তি পেতাম।
শীতের পড়ন্ত বিকেলে ভঙ্গুর উইকেটে শেরেবাংলা অভয়ারণ্যে হুঙ্কার করে ওঠে বেঙ্গল টাইগার্স। একে একে রাহুল, পূজারা, গিল, কোহলি বলি হয়। ৪৫ রান তুলতেই টপ অর্ডারের চার স্তম্ভ ধ্বসে পড়ে। শেষ দিনের সকালে বাংলাদেশ ব্যাঘ্র বিক্রমে লড়াই করলে জয় আসবে বাংলাদেশের। এই উইকেটে বাংলাদেশ সাকিব-মেরাজের আগ্রাসী বোলিংয়ে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড হেরেছে। এবার সঙ্গে আছে তাইজুল। কাল থাকবো টাইগারদের সাথে টাইগার হয়ে হুঙ্কার তুলতে।