সালেক সুফী
আইসিসি টেস্ট র্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা দল দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল নবম র্যাংকিংয়ের বাংলাদেশের সাথে। দেশের মাটিতে চট্টগ্রাম আর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ম্যাচ দুটি একপেশে হয়েছে বলবো না। প্রথম টেস্ট সহজে জিতলেও আজ শেষ হওয়া দ্বিতীয় ম্যাচটিতে জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি করেও কিছুটা দুর্ভাগ্য, কিছুটা বড় দলের বিরুদ্ধে জয়ের নিয়মিত জয়ের মেজাজ না থাকায় ৩ উইকেটে টেস্ট হারলো বাংলাদেশ। পরিণতি আবারো ভারত ওয়াশ হলো বাংলাদেশ। স্মরণীয় টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ ২-১ জিতে নিয়েছিল বাংলাদেশ।
ভারত হয়তো ভাবেনি ঢাকা টেস্টে শেয়ানে শেয়ানে লড়াই হবে। বলতে পারেন অপেক্ষাকৃত ধীর গতির স্পিনিং ট্র্যাক। এই ধরনের উইকেট ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া বা নিউ জিল্যান্ডের অপরিচিত হলেও ভারতের জন্য নতুন কিছু নয়। চতুর্থ দিন শেষে উভয় দলের সম্ভাবনা সমানে সমান ছিল।
পেন্ডুলামের দোলক বাংলাদেশের দিকে কিছুটা হেলে ছিল। ১৪৫ রান করে জয়ের লক্ষে খেলা শুরু করে ৪৫ রান করতেই রাহুল, শুভমান গিল, চেতেশ্বর পূজারাকে হারিয়ে ভারত কোণঠাসা ছিল। বিপুল উৎসাহ নিয়ে টাইগার সমর্থক গ্যালারিতে হাজির হয়ে সকাল থেকেই গলা ফাটালাম। উনাদকাত, রিশাব প্যান্ট, আকসার প্যাটেলের উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশে জয়ের পেছনে দ্রুত আগুয়ান হয়েছিল।
শেষ ভরসা স্রেস আয়ার আর রবিচন্দ্র অশ্বিন টাইগারদের হুংকারে কাঁপছিলো। দুই একটি ক্যাচ ফস্কালো। এই ধরনের পরিস্থিতিতে বড় দলের বিরুদ্ধে জয় পেতে প্রয়োজন মানসম্পন্ন লেগ স্পিনার বা দ্রুতগতির বল করে ইয়র্কার করতে প্রমাণিত পেস বলার। তবুও বাংলাদেশ বোলিং মন্দ করেনি। বরং আমি ভাবলেশহীন দৃঢ়চেতা স্রেস আয়ার (২৯*) আর রবি অশ্বিন (৪২*) অজেয় ৭১ রান করে তিন উইকেটে কৃতিত্বপূর্ণ জয় তুলে নিলো। দুই ম্যাচে পূর্ণ ২০ পয়েন্ট নিয়ে ভারত এখন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে সুবিধাজনক স্থানে।
কাল খেলা শেষে লিখেছিলাম ‘স্বপ্ন সম্ভাবনা বিলীন হওয়ার দেশে তবুও স্বপ্ন দেখি’। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ২২৭ রান করেছিল। একটু বাড়তি কমিটমেন্ট নিয়ে ব্যাট করলে ৫/২১২ থেকে ২২৭ অল আউট হয়তো হতো না বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে বাড়তি ৫০ রান বাংলাদেশকে আরো শক্তিশালী অবস্থানে নিতে পারতো।
এর পরেও বাংলাদেশ ভালো বোলিং করে ভারতকে ৪/৯৪ অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলো। সেখান থেকে দুর্বল ফিল্ডিংয়ের সুযোগ কাজে লাগিয়ে রিশাব প্যান্ট (৯৩) এবং স্রেস আয়ার (৮৭) ৫ম উইকেট জুটিতে ১৫৯ যুক্ত করে এগিয়ে দিলো দলকে। উইকেটের বাড়তি স্পিন কাজে লাগিয়ে সাকিব (৪/৭৯) আর তাইজুল (৪/৭৪) তুখোড় বোলিং করে ভারত ইনিংস গুটিয়ে দিলো ৩১৪ রানে। এই উইকেটে ৮৭ রানে এগিয়ে থাকা বিশাল অর্জন। উইকেটে ব্যাটিং করা কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে শান্ত, মোমিনুল, সাকিব, মুশফিক দায়িত্ব নিয়ে না খেলায় ৪/৭০ পরিণত বাংলাদেশের সামনে আরো একটি বড় পরাজয় সম্ভাবনা দেখা দিলো। একদিকে যখন সিনিয়র ব্যাটসম্যানদের আসা যাওয়া সেই সময় তরুণ জাকির ছিলেন ধীর স্থির আস্থাশীল। লিটনকে সঙ্গী করে বিপদ এড়ালেন কিছুটা। কিন্তু ৫১ রান করে দুর্বল স্ট্রোকে আউট হয়ে গেলে লিটন খেললেন ৭৩ রানের একটি দৃষ্টি নন্দন ইনিংস। পাশাপাশি নুরুল হাসান (৩১) আর তাসকিন (৩১*) দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলায় বাংলাদেশের লিড দাঁড়ায় ১৪৪।
হয়তো আরো ৩০ রান ম্যাচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। হয়নি সেটা। মামুলি পুঁজি নিয়েও দারুন লড়াই করলো বাংলাদেশ। তৃতীয় দিন শেষে ৪৫/৪ ভারতকে নিশ্চয় নিশ্চিন্তে ঘুমাতে দেয়নি। অনেক আশা নিয়েই চতুর্থ দিন সকালে বাংলাদেশের দর্শকরা এসেছিলো। দ্রুত আরো তিন উইকেট পতনে ভারত যখন ৭/৭৪ তখন বাংলাদেশ স্বপ্ন সম্ভাবনা সুদৃঢ় হয়েছিল।
বলবো ভারতের যুব প্রজন্মের বিকাশমান স্রেস আয়ার আর ব্যাট হাতে অনেক জয়ের নায়ক রাবি অশ্বিন দুর্যোগের মুহূর্তে লড়াই করে ম্যাচ জয় করলো। আবারো স্বপ্ন ভঙ্গ বাংলাদেশের। আবারো তীরে এসে তরী ডোবা। বহুদিন পর অনেক উৎসাহ নিয়েই দেশের মাটিতে বাংলাদেশের খেলা দেখলাম। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তীব্র লড়াই করেছে বাংলাদেশ।
স্বপ্ন ভঙ্গের আঘাত পেলেও আসার আলো দেখেছি। জাকিরের খেলা ভালো লেগেছে, মমিনুলের ফর্মে ফেরা স্বস্তি দিয়েছে। বাংলাদেশকে দেশে বা দেশের বাইরে টেস্ট জয় করতে টেস্ট ম্যাচ জয়ের অন্যতম উপকরণ লেগ স্পিনার খুঁজে পেতে হবে। অবশ্য দেশের অধিকাংশ উইকেটে স্থানীয় ক্রিকেটে লেগ স্পিনার্স বা পেসার্সদের জন্য কিছুই থাকে না। একই কথা সব সময় বলছেন স্থানীয় বা প্রবাসী ক্রিকেট অনুরাগীরা। কুম্ভকর্ণের ঘুম না ভাঙলে এভাবেই টেস্ট ম্যাচ হারতেই থাকবে বাংলাদেশ।