হাইব্রিড গাড়ির জ্বালানি খরচ অর্ধেক

এস এম আলাউদ্দিন আল আজাদ

জ্বালানি খরচ বাঁচাতে এবং পরিবেশবান্ধব গাড়ি হিসেবে হাইব্রিড গাড়ির জনপ্রিয়তা বেশ। হাইব্রিড গাড়িগুলোতে জ্বালানি শক্তির পাশাপাশি বৈদ্যুতিক শক্তি ব্যবহৃত হয়। সাধারণত বৈদ্যুতিক মোটরের সাহায্যে ব্যাটারি থেকে জমানো শক্তি খরচ করে হাইব্রিড গাড়ি পরিচালিত হয়। এসময় ইঞ্জিন বন্ধ থাকার কারণে তেল খরচ হয় না। গাড়ি বৈদ্যুতিক শক্তিতে এগিয়ে যায়। হাইব্রিড গাড়িকে আলাদা কোনো চার্জারের সাহায্যে চার্জ দিতে হয় না। হাইব্রিড গাড়ির উন্নত সংস্করণ হচ্ছে প্লাগ ইন হাইব্রিড ভেহিক্যাল বা পিএইচইভি। এই ধরনের গাড়িগুলো চার্জারের সাহায্যে বৈদ্যুতিক শক্তি সঞ্চয় করে ব্যাটারির মাধ্যমে কোনো ধরনের জ্বালানি খরচ না করে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে ৮০-৯০ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে। হাইব্রিড গাড়িতে কতটা জ্বালানি সাশ্রয় করা যায় তা নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।

বৈদ্যুতিক এবং জ্বালানি তেলের সমন্বয়ে চালিত বাহনের নাম হাইব্রিড গাড়ি। এসব গাড়িতে মূল চালিকা শক্তি হিসেবে হাইব্রিড ব্যাটারি এবং বিকল্প শক্তি হিসেবে জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হয়। হাইব্রিড ব্যাটারির সাহায্যে এ ধরনের গাড়ি চালু হয় এবং ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন চালু হয়। ব্যাটারির শক্তি গাড়ির জন্য যথেষ্ট না হলে হাইব্রিড ব্যাটারি এবং ইঞ্জিন যৌথভাবে শক্তি উৎপাদন করে এবং গাড়ির চাকাকে গতিশীল রাখে। ব্যাটারি চাকার ঘূর্ণন গতি এবং ইঞ্জিনের পরিত্যক্ত কর্মশক্তি থেকে চার্জ সংগ্রহ করে। পাওয়ার কন্ট্রোল ইউনিট বা পিসিইউ নামের অত্যাধুনিক যন্ত্রটি এই পুরো কাজ করে থাকে। এ জন্য চালককে আলাদা কোনো সুইচ চাপতে হয় না।

ব্যাটারিতে চলা অবস্থায় গাড়িটির ইঞ্জিন যেহেতু বন্ধ থাকে, সেহেতু তখন পরিবেশদূষণের মাত্রাও কমে যায়। সাধারণ গাড়ির তুলনায় হাইব্রিড গাড়ি কতটা জ্বালানি সাশ্রয় করে তা গাড়ির কর্মক্ষমতার পাশাপাশি গাড়ির সার্বিক অবস্থা, চালনার ধরন, রাস্তা এবং আসল যন্ত্রাংশ ও অয়েল ব্যবহার করার উপর নির্ভর করে। হাইব্রিডের মধ্যে টয়োটার আকুয়াকে মাইলেজের রাজা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। আকারে ছোট এবং ওজন কম হওয়াতে সাধারণ গাড়ির তুলনায় এই গাড়িগুলোর জ্বালানি খরচ প্রায় অর্ধেক।

মহাসড়ক এবং শহর এই দুই জায়গায় গাড়ি কতটা জ্বালানি খরচ করবে তার উপর নির্ভর করে গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো গাড়ি প্রতি কিমি পাড়ি দিতে কতটা জ্বালানি খরচ করবে তা নির্ধারণ করে। এক্ষেত্রে শহরের যানজট এবং মহাসড়কের রাস্তার অবস্থা অনুসারেও মাইলেজের তারতম্য হয়। হাইব্রিড গাড়ি নির্মাণে জাপানি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টয়োটা এবং হোন্ডা পথিকৃৎ হিসেবে স্বীকৃত। টয়োটা বা হোন্ডার নির্মিত নন হাইব্রিড গাড়ি ১ লিটার জ্বালানি খরচ করে যতটা পথ অতিক্রম করতে পারে একই প্রস্তুতকারকের হাইব্রিড গাড়ির মাইলেজ সেক্ষেত্রে দ্বিগুণ হয়।

দেশের বাজারে মধ্যম বাজেটে টয়োটার এক্সিও মডেলের রাজত্ব লক্ষণীয়। একটি নন হাইব্রিড এক্সিও ঢাকার রাস্তায় প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে সাধারণত ৭ থেকে ৯ কিমি পথ পাড়ি দিতে পারে। মহাসড়কে যা ১৫-১৬ কিমি পর্যন্ত বেড়ে যায়। অনুরুপভাবে একটি এক্সিও হাইব্রিড গাড়ি প্রতি লিটার জ্বালানি খরচ করে সাধারণত ১৫ থেকে ১৭ কিমি শহরে এবং ২৭ থেকে ৩০ কিমি মহাসড়কে পথ পাড়ি দিতে পারে। নিয়মিত পরিচর্যা, নিরবচ্ছিন্নভাবে থ্রটল চেপে রাখা অথবা ক্রইজ কন্ট্রোলের ব্যবহার, গাড়ির সঠিক টায়ার প্রেশার, অতিরিক্ত মালামাল বা যাত্রী বহন না করে টয়োটা বা হাইব্রিড গাড়ি প্রতি লিটার জ্বালানিতে ৩৫ কিমি পর্যন্ত পথ পাড়ি দেয়ার অভিজ্ঞতাও রয়েছে চালকদের।

গাড়ির আকার এবং ওজন অনুসারে টয়োটা অ্যাকুয়ার পরে বেশি মাইলেজ মিলে হোন্ডা ফিটে। এছাড়াও ১৫০০ সিসি বা ১.৫ লিটার ঘরানার গাড়িতে টয়োটা এক্সিও, ফিল্ডার, সিয়েন্টা, হোন্ডা গ্রেসেও ভালো মাইলেজ মিলে। ১৮০০ সিসি বা ১.৮ লিটার সেগমেন্টেও রয়েছে বেশ কিছু জ্বালানি সাশ্রয়ী হাইব্রিড গাড়ি। টয়োটা প্রিয়াস, প্রিয়াস আলফা, প্রিয়াস প্লাগ-ইন হাইব্রিড (পিএইচইভি), নোয়াহ, এসকুয়ার, ভক্সি, করোলা অলটিস, করোলা ক্রস, র‌্যাভফোর অন্যতম। ২৫০০ সিসি বা ২.৫ লিটার সেগমেন্ট রয়েছে টয়োটা কেমরি, ভেলফায়ার এবং আলফ্রাডসহ বিভিন্ন মডেলের গাড়ি। মিতশুবিশির রয়েছে আউটল্যান্ডার পিএইচইভি। টয়োটার বানানো হাইব্রিড গাড়িতে পঞ্চম প্রজন্মের হাইব্রিড সিস্টেম তথা হাইব্রিড সিনের্জি সিস্টেম (এইচএসডি) ব্যবহৃত হয়। এতে ব্যাটারির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার পাশাপাশি অপেক্ষাকৃত কম ওজনের নিকেল মেটাল বা লিথিয়াম ব্যাটারি ব্যবহারের ফলে অধিক মাইলেজ পাওয়া যায়।

হাইব্রিড গাড়িগুলোর ব্যাটারিতে গাড়ি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ২ লাখ কিমি পর্যন্ত বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদান করে থাকে। একটি হাইব্রিড ব্যাটারির জীবনকাল সর্বোচ্চ ১০ বছর। সে হিসেবে হাইব্রিড গাড়ি জ্বালানি খরচকে অর্ধেকে নামিয়ে দিতে পারে। দশ বছর নিয়মিতভাবে গাড়ি চালালে জ্বালানি খরচের পরিমাণ কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত সাশ্রয় হবে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন:অটোমোবাইল

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

9 + four =