হাতুরাসিংহে এবং সাকিবকে নিয়ে কিছু কথা

সালেক সুফী

ছাত্র-জনতা সূচিত গণবিস্ফোরণে সৃষ্ট নতুন বাংলাদেশে পাকিস্তানে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় বিশাল অর্জন। কঠিন সময়ে জাতির বিপর্যস্ত মুহূর্তে (শতাব্দীর ভয়ঙ্করতম বন্যা) ক্রিকেটের এই জয় দেশবাসীকে সাহস অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে সন্দেহ নেই। সরকার পরিবর্তনের সূত্রে পরিবর্তনের ছোয়া লেগেছে ক্রিকেট অঙ্গনে। দীর্ঘ দিনের বিসিবি সভাপতি এবং অধিকাংশ পরিচালক পলাতক। নতুন সভাপতি এবং পরিচালকরা দায়িত্বে আসছেন।

পাকিস্তান সিরিজের শুরু থেকেই সঙ্গত কারণেই হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহেকে পরিবর্তন করার কথাবার্তা চলছিল। বিশেষ করে বিসিবির একটি সিন্ডিকেট হাতুরাকে প্রশ্রয় দেওয়ায় অনেকটা স্বেচ্ছাচারী হয়ে পড়েছিল বেতনভুক কোচ।

বিতর্ক ছিল এবং আছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের পোস্টার বয় খ্যাত সাকিব আল হাসানকে নিয়ে। বিশেষ করে তরুণ সমাজ গণআন্দোলন চলাকালে তার নীরব থাকা সহজে মেনে নিতে পারেনি। পাকিস্তানে সিরিজ চলাকালে সাকিবের বিরুদ্ধে দেশে হত্যাকাণ্ডের প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয়। কথিত মামলার অভিযোগ মাথায় নিয়ে সাকিব দুটি টেস্ট খেলে এবং দলের জয়ে অবদান রাখে। এমনকি সিরিজ জয়ের শেষ স্টোকসটিও আসে সাকিবের ব্যাট থেকে।

সাকিব বিসিবির অনুমতি নিয়ে ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট খেলছে সারে দলের হয়ে। অচিরেই বাংলাদেশের হয়ে ভারতের বিরুদ্ধে টেস্ট এবং টি২০ সিরিজে অংশগ্রহণের কথা আছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে হাতুরাসিংহে এবং সাকিব বিষয়ে প্রেক্ষাপট পাল্টে গেছে। বিসিবির বা বাংলাদেশের পক্ষে এখন ব্যবস্থা গ্রহণ এখন অনেক কঠিন হয়ে গাছে। দুই জনের অনুকূলেই  একতাবদ্ধ দলের সমর্থন আছে।

ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ এবং পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সামনে রেখে হাতুরাকে পরিবর্তন করার সুযোগ আছে বলে মনে করি না। হয়ত ওর দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এসেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অশুভ সিন্ডিকেটের বিরাট অংশ বিসিবি থেকে বিদায় নিয়েছে। যারা আছে তারা এখন নিষ্ক্রিয়। আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে হাতুরাকে পরিবর্তনের কোন সুযোগ দেখি না। ফারুক, ফাহিম, লিপুদের কাছে হাতুরা কোন প্রশ্রয় পাবে না।

সাকিব প্রসঙ্গ ভিন্ন। সাকিবের দক্ষতা এবং যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। কিন্তু মাঠের বাইরে বেপরোয়া এবং উশৃঙ্খল সাকিবের বখে যাওয়ার জন্য মেরুদণ্ডহীন বিসিবি এবং সরকার প্রধান অনেকটা দায়ী। সকল চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের কোড অফ কন্ডাক্ট মেনে চলতে হয়। সাকিবের বেলায় কেন সেটি শিথিল ছিল? খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি না টেনে জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ওর বিরাট ভুল হয়েছে। সঙ্গত কারণেই শাসক দলের সংসদ সদস্য হিসেবে আন্দোলনের সময় নীরব ছিল সাকিব।

তবে ওর বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ অমূলক।  অভিযোগটি নিতান্তই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণীত। অন্য কোন অভিযোগ প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত সাকিবের বাংলাদেশের হয়ে ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাওয়ার কোনো বাধা নেই। এতো সহজেই জাতি ক্রিকেটে সাকিব এবং সেই সূত্রে সোনালি প্রজন্মের ক্রিকেটারদের অবদান ভুলে যেতে পারে না।

তবে সাকিবের বিষয়টি অন্য সকল অঙ্গনের সেলিব্রিটিদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় হয়ে থাকবে। সাকিব নিঃসন্দেহে আন্দোলনের সময় নিজস্ব মতামত দিতে পারতো। কিন্তু নিজের দুর্বলতার কারণেই ভীত হয়ে কাজটি করেনি। এখনো কিন্তু দুঃখ প্রকাশ করেনি। কেউ চিরদিন কোনো কিছুর জন্য অপরিহার্য থাকে না। পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট পাল্টে দেয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

thirteen − 1 =