‘হাড়কিপটে’ নাটকে ভুল, দায় স্বীকার বৃন্দাবনের

সমাজে সচেতনতার আলো জ্বালতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে নাটক-সিনেমা। দর্শককে বিনোদিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন অবক্ষয় তুলে ধরে। চোখে আঙুল দিয়ে ধরিয়ে দেয় ভুল। কিন্তু সেই নাটকের মাধ্যমে যখন ভুল তথ্য ছড়ানো হয় তখন তা সত্যিই বিব্রতকর। তা-ও আবার সেটা যদি হয় দেশের জনপ্রিয় নাট্যকার বৃন্দাবন দাসের নাটকে মাধ্যমে। তাহলে যারপরনাই অবাক হতে হয়।

‘কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর? মানুষেরই মাঝে স্বর্গ-নরক মানুষেতে সুরাসুর।’ কবিতাটির সঙ্গে পরিচিত নন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। জনপ্রিয় এই কবিতাটি লিখেছেন কবি শেখ ফজলল করিম। কিন্তু বৃন্দাবন দাস রচিত জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটক ‘হাড়কিপটে’র ৮৯ পর্বের শেষ দৃশ্যে কবিতাটি চালিয়ে দেওয়া হয়েছে কবি কাজী নজরুল ইসলামের নামে। সেখানে ভুপেনকে (নাটকের চরিত্র) বলতে শোনা যায়, ‘কবি নজরুলের ওই লাইনডা আমি খুব বিশ্বাস করি। মানুষের মাঝেই স্বর্গ-নরক, মানুষই সুরাসুর।’

অনেক বছর আগে টেলিভিশনে নাটকটি প্রচার হলেও ইউটিউবের কল্যাণে চাইলেই দেখে নিতে পারছেন যে কেউ। সেখান থেকেই ভুলটি চোখে পড়ছে অনেকের। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এক নেটিজেন। শেখ ফজলল করিমের জনপ্রিয় কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামের নামে চালিয়ে দেওয়ায় প্রকাশ করেছেন ক্ষোভ।

এ প্রসঙ্গে কথা বলতে নাট্যকার বৃন্দাবন দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে শুরুতেই ভুল স্বীকার করেন তিনি। ঢাকা মেইলকে বৃন্দাবন দাস বলেন, ‘সংলাপটি যে দিয়েছে সে চরিত্রটি তো শিক্ষিত না। ভুলই বলেছে সে। গ্রামের অনেকে হয়তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম ছাড়া কোনো কবির নাম-ই জানে না। এই চরিত্রটিও তেমন। ক্লাস সিক্স-সেভেন পর্যন্ত পড়ালেখা করা অর্ধ শিক্ষিত। তার থেকে এরকম ভুল তথ্য বের হওয়াটা স্বাভাবিক।’

এক্ষেত্রে নাট্যকার হিসেবে পরের দৃশ্যে এই ভুলটির সংশোধন দেওয়া কি উচিত ছিল না— জানতে চাইলে বৃন্দাবন বলেন, ‘হ্যাঁ, দরকার ছিল। যেহেতু ভুল দেখিয়েছি। এখন ওই নেটিজেন যদি এটা ধরে বসে থাকেন তাহলে তো মুশকিল। এই যে উনি ভুল খুঁজে বের করেছেন সেটাই তো যথেষ্ট। আমি মনে করি মানুষ যে মনোযোগ দিয়ে দেখছে এবং ভুলটা ধরছে সেটিই যথেষ্ট।’

এরপর বৃন্দাবন বলেন, ‘এখানে ভুপেন চরিত্রটি সংলাপ দিচ্ছে। এটা বুঝতে হবে। আর সে যার সঙ্গে কথা বলছিল সে চরিত্রের নাম গোল্লা। সেও তো অতো পণ্ডিত না যে এটা বুঝবে, ভুল ধরিয়ে দিতে পারবে। কারণ কবিতাটি যিনি লিখেছেন সেও তাকে জানে না। কেননা এটা যে যেভাবে পারে চালিয়ে দেয়। কেউ বিবেকানন্দের বলে, কেউ নজরুলের বলে। অর্থাৎ হয়তো আসল কবির নাম কেউ জানেন-ই না।’

কিন্তু একজন নাট্যকার হিসেবে আপনি দায় এড়াতে পারেন না। ভুল সংশোধন না করায় আপনার দায় থেকে যায় বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সেক্ষেত্রে আপনি কী বলবেন? এ প্রশ্নের উত্তরে ভুলটি ইচ্ছাকৃত উল্লেখ করে দায় স্বীকার করে ‘হাড়কিপটে’র নাট্যকার বলেন, ‘হ্যাঁ, তাদের দিক থেকে তারা ঠিক আছেন। তারা যদি মনে করেন এ দায় আমার তবে আমি মেনে নিচ্ছি। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আমি ভুল হিসেবেই এটা উপস্থাপন করেছি। তবে তাদের কথাও এড়িয়ে যাচ্ছি না। আমি মনে করছি এটাই আমার এক ধরনের স্বার্থকতা যে এত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তারা নাটক দেখেন এবং ভুলটা তাদের চোখে পড়েছে। আমি তো ইচ্ছাকৃত ভুলটি দিয়েছি। তারা যে সনাক্ত করেছেন এটা আমার জন্য স্বার্থকতা।’

নিজের ইচ্ছাকৃত ভুলের গভীরতা উপলব্ধি করে জনপ্রিয় এ নাট্যকার বলেন, ‘তাদের যুক্তি ফেলে দিচ্ছি না। কারণ এখন যারা নাটকটি দেখছেন তারাও এই ভুলকে সত্যি বলে গ্রহণ করবেন। এ কারণে দরকার ছিল অন্য একটি সংলাপের মাধ্যমে একটি সংশোধনী দেওয়া। এই সময় করলে সেটা করতাম। কিন্তু সেটি তো সম্ভব না। কারণ আমরা যখন নাটকটি বানিয়েছি তখন তো ইউটিউব, সোশ্যাল মিডিয়া ছিল না। এখন এত বছর পর এই প্রজন্ম হয়তো এখান থেকে ভুলই শিখবে। কারণ নাটক সিনেমা থেকে অনেক মানুষ অনেক কিছু শেখে। এটা আমি মেনে নিচ্ছি। কারণ নতুন প্রজন্ম এখান থেকে ভুল শিক্ষাই পাবে। তারা হয়তো ভাববে কবিতাটি কাজী নজরুল ইসলামেরই লেখা। পরীক্ষার খাতায়ও যদি প্রশ্ন আসে, কবিতাটি কার লেখা। তখন এমনও হতে পারে এই নাটকের কথা মনে করে ভুল উত্তর লিখে দেবে।’

সবশেষে বৃন্দাবন সংশোধনী না দেওয়াটা উচিত হয়নি উল্লেখ করে বলেন, ‘এখন হলে সেটা করতাম। কিন্তু সেটা সম্ভব না। তাই এখন যারা দেখছেন তাদের ভাবতে হবে নাটকটি দশ বারো বছর আগের। তখন আমরা ইউটিউবের কথা ভেবে নাটক করতাম না। তবে তাদের দাবি যৌক্তিক। আমি অবনত মস্তকে মেনে নিচ্ছি এটি।’

এদিকে নাটকটি প্রচারের এতদিন হয়ে গেলেও ভুলটি কারও চোখে পড়েনি। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নেটাগরিকরা। ‘হাড়কিপটে’ নাটকটির পরিচালক সালাউদ্দিন লাভলু। নাটকটিতে ভুপেনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন বৃন্দাবন দাস নিজেই। গোল্লা চরিত্রে ছিলেন মোশাররফ করিম। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী, আ খ ম হাসান, শামীম জামান, শাহানাজ খুশি প্রমুখ।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

13 − 4 =