হৃদয় ভাঙার ম্যাচে হারলো বাংলাদেশ

সালেক সুফী

(ভারত ১৮৪/৬ ( বিরাট কোহলি ৬৪*, কে এল রাহুল ৫০, সূর্য কুমার যাদব ৩০, হাসান মাহমুদ ৩/৪৭, সাকিব আল হাসান ২/২৮)

বাংলাদেশ ১৬ ওভারে ১৪৫/৬ ( লিটন কুমার দাস ৬০, নুরুল হাসান সোহান ২৫*, হার্দিক পান্ডিয়া ২/২৮, অর্শদীপ সিংহ ২/৩৮)

ডাকওয়ার্থ লুইস হিসাবে ভারত ৫ রানে জয়ী।

হারজিতের নদীর একুল ভাঙা ওকুল গড়ার চিরায়ত বাস্তবতায় কাল এডিলেড ওভালে ৫ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। জয়ী ভারত অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গেছে সেমি ফাইনাল খেলার জন্য। অনেকে বলবেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়েছে বিশ্বক্রিকেট মোড়ল ভারতের। খেলার বিশেষ অংশ জুড়েই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের হুঙ্কার কাঁপিয়ে দিয়েছিলো শত কোটি ভারতীয়দের অন্তরাত্মা। বেশ কিছু সময়ের বৃষ্টি শেষে মাঠ বিশেষত ভেজা আউট ফিল্ড খেলার উপযুক্ত ছিল কি না সেই বিতর্কিত প্রসঙ্গে যাবো না। এটিও আলাপ করবো না কেন বার বার কোহলির ইশারার জন্য আম্পায়ার অপেক্ষা করে নো বল ঘোষণার। তবে শেষ কথা বৃষ্টি আইনে জয়ের জন্য নির্ধারিত ১৫১ রানের বিপরীতে ১৬ ওভার শেষে ১৪৫/৬ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ফলাফল ভারতের নাভি গলানো জয় ৫ রানের। আমার মতো মন ভেঙেছে ১৬ কোটি প্রত্যাশী বাংলাদেশিদের।

চলমান টি২০ বিশ্বকাপের কাল ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ খেলা। দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এডিলেড শহরের নয়ন মনোহরি এডিলেড ওভাল স্টেডিয়াম কানায় কানায় ভরে গিয়েছিলো উল্লাসী ভারত বাংলাদেশ ক্রিকেট পূজারীদের সম্মিলনে। ভারত-বাংলাদেশ দুটি দলেরই একান্ত প্রয়োজন জয়। প্রথম ব্যাট করে রাহুল ( ৩২ বলে ৫০) ) আর কোহলির  ( ৪৪ বলে অপরাজিত ৬৪ ) ধুম ধারাক্কা বাটিঙের কল্যাণে ১৮৪/৬ বিরাট সংগ্রহ করেছিল ভারত।

বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ডাকওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের জয়ের নিশানা বেঁধে দেয়া হয়েছিল ১৬ ওভারে ১৫১।  লিটনের ব্যাট ভীমের গদা হয়ে প্রহার করায়  ৭ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান দাঁড়িয়েছিল বিনা উইকেটে ৬৬। ভারতীয়দের চোখে মুখে ছিল ভয়ের চিহ্ন।  আকাশ ভেঙে নামলো বৃষ্টি। আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ এগিয়ে ১৭ রানে। বেশ কিছুক্ষণ বৃষ্টি শেষে অনেকটা বিতর্কিত ভাবেই খেলা শুরু হলো আউট ফিল্ড যথেষ্ট ভেজা রেখেই।  বাংলাদেশ পারেনি ম্যাচ জিততে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও। বিশ্ব আবারো দেখেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতকে কিভাবে আদর সোহাগ দেয়া হয়। প্রতিবাদ করেও সুবিধা হয় না।

টস জয়ী বাংলাদেশ ভারতকে পাঠালো ব্যাটিং করতে।  দুর্দান্ত বোলিং করলো দুরন্ত তাসকিন। রোহিত আউট হতে পারতো প্রথম ওভারেই। বাউন্ডারি দাঁড়িয়ে ক্যাচ ফস্কালো তরুণ হাসান মাহমুদ। অবশ্য পরের ওভারেই মাহমুদ নিজেই ফিরিয়ে দিয়েছিলো এবারের বিশ্বকাপে কিছুটা আস্থাহীন রোহিতকে। তাসকিনকে না পারলেও অন্য প্রান্তের বোলারদের বেধড়ক পেটালো রাহুল। ৩২ বলে ৫০ রানের ইনিংসে তিন চার আর চার ছয়ে দলকে নিয়ে গেলো স্বস্তির অবস্থানে। মুস্তাফিজ আর শাকিব ভালো বোলিং করেছে বলবো। তারপরেও পুনরায় ফর্মে ফেরা বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান কোহলির তান্ডবে ২০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর দাঁড়ালো ১৮৪/৬।  ছোট মাঠ হলেও বিশাল সংগ্রহ।

তবে বাংলাদেশ হাল ছাড়েনি। লিটনের হাতে ব্যাট ভীম ভাসমান মাইন হয়ে দেখা দিয়েছিলো। ভুবনেশ্বর, সামি, অর্শদীপ কেউ রেহাই পায় নি লিটন তান্ডবে। ৭ ওভারে রান দাঁড়ালো ৬৬/০। পুরো সময় খেলা হলে কি হতো আলোচনায় যাবো না। বৃষ্টি এসে হলো ছন্দপতন। বৃষ্টি শেষে খেলতে নেমে ১৬ ওভারে ১৫১ জয়ের টার্গেট করা হলো। ১০ উইকেট হাতে রেখে ৫৪ বলে ৮৫ রান. অধুনা হচ্ছে অহরহ। অভিজ্ঞতা আর সাহসের ঘাটতি থাকায় পারেনি বাংলাদেশ। লিটন রান আউট হয়ে যাওয়া অন্যতম মুখ্য কারণ ছিল। আনাড়ির মতো তড়িঘড়ি করে আউট হয়েছে সাকিব, আফিফ, ইয়াসির। সোহানের সক্রিয়তায় ১৪৫/৬ করা সম্ভব হলো। পরাজয় ৫ রানের।   বলবো না তীরে এসে তরি ডুবেছে। বৃষ্টির পর পরিকল্পনা করে খেলতে বার্থ হয়েছে বাংলাদেশ।

হা হুতাশ করে অজুহাত দাঁড় করবো না। তবে হতাশা থাকবো জয়ের সুযোগ হাত ছাড়া করে। এখন পরিস্থিতি এমন পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচে জয়ী হলেও সেমিফাইনাল খেলার নিশ্চয়তা নেই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

9 − four =