২০২৩ সালে আলোচনায় ১০ আবিষ্কার

প্রযুক্তির যুগে মানবসভ্যতাকে এগিয়ে নিতে প্রতি বছরই বাজারে আসে নতুন নতুন প্রযুক্তি। ২০২৩ সালের উল্লেখযোগ্য কিছু প্রযুক্তি নিয়ে আমাদের এবারের আয়োজন। জানাচ্ছেন নূর জাহান।

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ একটি আন্তর্জাতিক মহাকাশ অভিযান প্রকল্প। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার নেতৃত্বে এটির অন্যান্য অংশীদার হচ্ছে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি। ২০২২ সালে বিজ্ঞানের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের তোলা ছবি প্রকাশ করা। প্রায় দুই যুগ কাজ করার পর ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর মহাকাশে পাঠানো হয় জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র। দীর্ঘ একমাস মহাকাশ যাত্রা শেষে পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে দ্বিতীয় ল্যাগ্রাঞ্জ পয়েন্টে গিয়ে পৌঁছায় উৎক্ষিপ্ত মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি। জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের প্রথম পূর্ণাঙ্গ রঙিন ছবি প্রকাশ করা হয় ২০২২ সালের, ১২ই জুলাই। প্রথমবারের মতো নভো দূরবীক্ষণ যন্ত্রে তোলা কয়েকটি ছবি প্রকাশ করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘নাসা’। ছবি প্রকাশের পর সারাবিশ্ব হতবাক হয়ে যায়।  ছবিগুলোর মাঝে ছিল প্রায় সাড়ে ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের গভীর মহাকাশ, তারার জন্মমৃত্যু, গ্যালাক্সির বিবর্তন, সৌরজগতের বাইরের গ্রহে পানির উপস্থিতিসহ আরও অনেককিছু। এসব ছবি যে শুধু দেখতে শ্বাসরুদ্ধকর, তা নয়; সেগুলো বিশ্লেষণ করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জেনেছেন মহাকাশের সুদূরতম অতীতের নানা তথ্য। ২০২৩ সালে ‘জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ’র নানা চমক দেখার কথা রয়েছে। নিঃসন্দেহে মহাকাশ চর্চার নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে এই টেলিস্কোপের মাধ্যমে। মহাজগতের প্রাচীনতম অবস্থার সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে তোলা চিত্র তোলা সম্ভব হয়েছে এর মাধ্যমে। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী টেলিস্কোপ। এতে ৬.৫ মিটার চওড়া সোনার প্রলেপ লাগানো প্রতিফলক আয়না আছে এবং আছে অতি সংবেদনশীল ইনফ্রারেড তরঙ্গ দৈর্ঘ্যরে যন্ত্রপাতি।

ক্রিসপার

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি কোম্পানি ‘ভার্ভ থেরাপিউস্টিক’ হার্ট অ্যাটাকের ফলে শরীরে যে ক্ষতি হয় তা নিরাময়ের পরিবর্তে প্রতিরোধ করা যায় কি না এই বিষয়ে দীর্ঘদিন যাবত কাজ করছে। ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি মানবদেহে তাদের উদ্ভাবিত চিকিৎসা পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে। হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় রক্তের এলডিএল (ক্ষতিকর) কোলেস্টেরল-কে। বিশেষ এক প্রকার জিনের কারণে এই কোলেস্টরেল তৈরি হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘ক্রিসপার’ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই জিনকে স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব। এক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, বানরের ওপর প্রয়োগ করার পর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে কোলেস্টরেলের মাত্রা ৭০ শতাংশে নেমে আসে। এমনকি এ অবস্থা স্থিতিশীল থাকে প্রায় এক বছর। ২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে ও নিউ জিল্যান্ডে পরীক্ষামূলকভাবে এই চিকিৎসা মানবদেহে প্রয়োগ করে প্রতিষ্ঠানটি। মানব ট্রায়ালের জন্য প্রাথমিকভাবে বেছে নেওয়া হয় যাদের জেনেটিক ত্রুটির কারণে রক্তে প্রচুর কোলেস্টরেল তৈরি হয়েছে তাদেরকে। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ৩ জনকে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। ২০২৩-এর মাঝামাঝি সময়ে এসব ট্রায়াল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। ‘ভার্ভ থেরাপিউস্টিক’ প্রতিষ্ঠানটির হাত ধরে চিকিৎসাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে ফলাফল ইতিবাচক হলে।

বালি ব্যাটারি

বৈশ্বিক উষ্ণতা কমাতে ও টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নের একইসাথে ‘সহজ ও কঠিন’ সমাধান হলো, গ্রিন এনার্জি বা নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বালির তৈরি ব্যাটারি জ্বালানির ভবিষ্যৎ বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ফিনল্যান্ডের চার তরুণ প্রকৌশলী গ্রিন এনার্জির এই অন্যতম কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে পেয়েছেন।

ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকি থেকে ২৭০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত ভাতাজানকোস্কি পাওয়ার প্ল্যান্ট-এ আবিষ্কৃত এই প্রযুক্তিটা সরল এবং সুলভ। ভাতাজানকোস্কি পাওয়ার প্ল্যান্ট-এ রয়েছে বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক স্কেলের বালির ব্যাটারি (স্যান্ড ব্যাটারি)। একটি সাত মিটার (২৩ ফুট) উঁচু স্টিলের কন্টেইনারে ঘেরা ব্যাটারিটি ১০০ টন লো-গ্রেড বিল্ডার্স বালি, দুটি ডিস্ট্রিক্ট হিটিং পাইপ এবং একটি পাখা দিয়ে গঠিত। টারবাইন ও সৌর প্যানেলের মাধ্যমে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে বালি ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ দিলে তা ব্যাটারিতে রূপান্তরিত হয়। তাপ বিনিময়কারী পাইপের মাধ্যমে ব্যাটারির অভ্যন্তরীণ উষ্ণ বায়ুকে বালির চারপাশে একটি পাখা দ্বারা সঞ্চালন করা হয়। বালির চারদিকে রয়েছে পুরু আস্তরণ, যা ব্যাটারির তাপমাত্রা ৬০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে রাখে। এমনকি বাইরে ঠান্ডা বা তুষারপাত হলেও এই উষ্ণতা বজায় রাখে আস্তরণটি। ২০২২ সালে এই প্রযুক্তিটা আবিষ্কৃত হলেও ২০২৩ সালে এর আরও বাস্তবসম্মত সমাধান মিলবে বলে জানা যায়।

ডিএনএ এডিটিং

ফোর্বসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে ডিএনএ পরিবর্তন করার সক্ষমতা অনেক বাড়বে। এ বছরেই জিন এডিটিং প্রযুক্তি বহু দূর এগিয়ে যাবে, যা সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। কৃত্রিমভাবে এক পদার্থের সঙ্গে অন্য পদার্থ মিলিয়ে নানান বস্তুর উৎপাদন বিশ্ববাসী দেখেছে। উদ্ভিদ ও জীবজন্তুর ক্ষেত্রেও ঘটেছে এমন ঘটনা। বিজ্ঞানীরা মানুষের ডিএনএ এডিটিং নিয়ে গবেষকদের গবেষণা অনেক দূর এগিয়েছেন। ডিএনএ এডিটিং হলো এক ধরনের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং যাতে কোনো জীবের জিনোমে ডিএনএ ঢোকানো, মুছে ফেলা, পরিবর্তন করা বা প্রতিস্থাপন করা হয়। প্রাথমিক জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কৌশলগুলির বিপরীতে যা এলোমেলোভাবে একটি হোস্ট জিনোমে জেনেটিক উপাদান সন্নিবেশ করায়, জিনোম সম্পাদনা সাইট-নির্দিষ্ট অবস্থানগুলিতে সন্নিবেশগুলিকে লক্ষ্য করে।

মেটাভার্স

সহজভাবে বলতে গেলে, মেটাভার্স হচ্ছে ত্রিমাত্রিক এক ভার্চ্যুয়াল দুনিয়া। যেখানে সরাসরি উপস্থিত না থেকেও, একে অপরের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজ করা যায়, এমনকি খেলাধুলাও করা যায়। মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগল, রোব্লক্স এবং ফোর্টনাইট নির্মাতা কোম্পানিগুলোও মেটাভার্স তৈরিতে কাজ করছে। ভিআর হেডসেট, অগমেন্টেড রিয়েলিটি চশমা, স্মার্টফোন অ্যাপ সহ অন্যান্য ডিভাইসগুলোকে আপডেট করার প্রক্রিয়া চলছে। এ ধারা গোটা বছরজুড়েই দেখা যেতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা। গ্রাহক পর্যায়ে মেটাভার্সের বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্য ও সেবার উদ্ভাবন দেখা যাবে, তৈরি হবে নিত্য নতুন সম্ভাবনা। বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর প্রযুক্তি খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাবহার হবে সর্বোচ্চ। নির্ভুল তথ্যের মাধ্যমে সাইবার নিরাপত্তা, ভিডিও গেমস, নকশা, স্মার্ট গাড়ি, ডেটা সেন্টার ব্যবস্থাপনাসহ, বিভিন্ন খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

মেটাভার্স এমন এক ভার্চুয়াল জগৎ যা মেশিনের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ বাড়িয়ে দেবে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিনের। এ বছর এই জগতের অনেক কিছুই বাস্তবতার রূপ নিবে। বিশেষজ্ঞদের প্রত্যাশা, আগামী ২০৩০ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে ৩ ট্রিলিয়ন ডলার যোগ করবে মেটাভার্স। ২০২৩ সাল মেটাভার্সের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে করবে বলেও নানান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ২০২৩ সালে মেটাভার্সে কাজের পরিবেশ দেখা যেতে পারে। এই ভার্চুয়াল জগতে এমন কিছু ফিচার থাকবে যার মাধ্যমে অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এইচআর সংক্রান্ত কাজগুলো অফিসে না গিয়েই সেরে নিতে পারবেন। ভার্চুয়াল কনসার্টে যাওয়া, অনলাইনে ঘুরতে যাওয়া, শিল্পকর্ম দেখা বা সৃষ্টি করা কিংবা কেনা; সবই করতে পারবেন মেটাভার্সের দুনিয়ায়।

জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন

ভিন্ন কোনো প্রাণী থেকে কোষ, টিস্যু বা অঙ্গগুলোর সঙ্গে মানুষের প্রতিস্থাপন, বাস্তবায়ন বা ইনফিউশন করার পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে জেনোট্রান্সপ্ল্যান্টেশন। একজন মানুষের হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে গেলে বিকল্প হিসেবে মানুষ নয় বরং অন্য কোনো প্রাণীর হৃদপিণ্ড ব্যবহার করা সম্ভব কি না তা জানতেই শুরু হয় গবেষণা। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালে একটি শূকরের হৃদপিণ্ড মানুষের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। এটি অস্ত্রোপচারে বিপ্লব নিয়ে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত দুজন মানুষের শরীরে এই পদ্ধতিতে শূকরের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার মধ্যে একজন কয়েক মাস জীবিত ছিলেন এবং অন্যজন এখনও পর্যবেক্ষণে রয়েছে। জেনোট্রান্সপ্লান্টেশনের বিকাশ আংশিকভাবে এই সত্য দ্বারা চালিত যে ক্লিনিকাল ট্রান্সপ্লান্টেশনের জন্য মানুষের অঙ্গগুলির চাহিদা সরবরাহের চেয়ে অনেক বেশি। ২০২৩ সালে এই প্রযুক্তির অগ্রগতি দেখা যাবে বলে জানিয়েছে গবেষকেরা।

ব্রেন রিডিং রোবট

সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের কাজ সঠিকভাবে করানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হচ্ছে সেই সব রোবট। এর মধ্যেই তৈরি করা হয়েছে এমন এক রোবট যা মানুষের মস্তিষ্কের কথা পড়ে ফেলতে সক্ষম। এটা সায়েন্স ফিকশন নয়। বাস্তবেই আপনার মাথায় কি চলছে তা পড়া সম্ভব হবে রোবটের দ্বারা।

ব্রেন রিডিং রোবট একটি উন্নত রোবোটিক প্রযুক্তি, যা বৈদ্যুতিক সংকেতের পরিবর্তনগুলি বিশ্লেষণ করে মস্তিষ্ক পড়ার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ব্রেন রিডিং রোবটের কেন্দ্রীয় ইউনিট হল একটি ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস যা ইলেক্ট্রোয়েন্সফালোগ্রাফি এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, যা মস্তিষ্কের বৈদ্যুতিক কার্যকলাপ পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত একটি কৌশল। ব্রেন রিডিং রোবটগুলি একটি ক্রিয়াকলাপের জন্য শরীরের বিভিন্ন গতিবিধির সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন মস্তিষ্কের সংকেতকে আলাদা করার জন্য ইইজি সংকেত ব্যবহার করে। এই ব্রেন রিডিং রোবোটিক টেকনোলজি রোবোটিক্সের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা, কারণ এটি মানবকেন্দ্রিক এবং গৃহস্থালির কাজ, বাণিজ্যিক অ্যাসাইনমেন্ট এবং অন্যান্য নিরাপত্তার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও, মাইন্ড রিডিং রোবোটিক প্রযুক্তি দ্বারা বিভিন্ন উন্নত অ্যালগরিদম স্থাপন করা হয়। বৈদ্যুতিক মস্তিষ্কের সংকেতগুলিকে পাঠোদ্ধার করার কৌশল এবং স্থানিক প্রতিনিধিত্বে রূপান্তরিত করার কৌশলটি ব্রেন ম্যাপিং নামে পরিচিত। মস্তিষ্কের নিউরনগুলি বৈদ্যুতিক সংকেত তৈরির জন্য দায়ী, যা মাথার ত্বকে বেশ কয়েকটি ইলেক্ট্রোড স্থাপন করে পর্যবেক্ষণ করা হয়। মানুষের প্রচেষ্টাকে সহজ করার জন্য শিক্ষা, চিকিৎসা, ফার্মাসিউটিক্যাল এবং উৎপাদনের মতো বিভিন্ন সেক্টরে ব্রেন রিডিং রোবটগুলির ক্রমবর্ধমান অ্যাপ্লিকেশনগুলি মস্তিষ্ক পড়ার রোবট বাজারের রাজস্ব বৃদ্ধিকে বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুইস ফেডারেল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি লাউসেনের (ইপিএফএল) গবেষকদের কাছ থেকে পাওয়া সবচেয়ে পরীক্ষিত, আকর্ষণীয় এবং ব্যবহারিক একটি গবেষণা এটি। অবশ্য এটিকে ব্রেন রিডার না বলে ব্রেনকে কমান্ড দেওয়ার ডিভাইস বলা যায়। ধারণা করা হচ্ছে এই প্রযুক্তি প্যারালাইসিস রোগীদের ক্ষেত্রে দারুন ভূমিকা রাখবে ২০২৩ সালে।

থ্রিডি প্রিন্ট করা হাড়

হাড়ের মূল উপাদান ক্যালসিয়াম কার্বনেট। এটি অত্যন্ত শক্ত ও হালকা। এই ক্যালসিয়াম কার্বনেট মানবদেহের ভাঙা ও ক্ষয়ে যাওয়া হাড় মেরামতে ব্যবহৃত হতে পারে থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি ব্যাকটেরিয়ানির্ভর উপাদান ‘ব্যাকটোইঙ্ক’। থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি হাড়সদৃশ বস্তুর মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার সংমিশ্রণে তৈরি জেল প্রবেশ করানো হলে এটি দীর্ঘদিন ধরে একই রকম থাকবে। সুইজারল্যান্ডের চার গবেষক নতুন কৃত্রিম এ হাড় তৈরি করেছেন। জেল শুকিয়ে আগের প্রিন্টেড হাড় সংকুচিত হলেও এ গবেষণায় দেখানো হয়েছে ব্যাকটেরিয়ানির্ভর নতুন প্রিন্টেড হাড়ে এ সমস্যা নেই। থ্রিডি প্রিন্টিং যা ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ নামেও পরিচিত। যুত উৎপাদন এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে ডিজিটাল মডেল থেকে কার্যত যে কোনো আকৃতির ত্রিমাত্রিক কঠিন বস্তু তৈরি করা যায়। যুত প্রক্রিয়ায় ত্রিমাত্রিক মুদ্রণ করা হয় যাতে ধাতু বা অন্যবস্তুর স্তর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন আকৃতিতে একটি ওপর আরেকটি যুক্ত হতে থাকে। থ্রি-ডি প্রিন্টিং প্রযুক্তির সবচেয়ে আকর্ষণীয় ব্যবহার হলো থ্রিডি মুদ্রিত হাড় তৈরি। ‘ওসিফর্ম’ কোম্পানি চিকিৎসায় থ্রি-ডি প্রিন্টিং ব্যবহারের কথা জানিয়েছে যেখানে ফসফেট ব্যবহার করে মানুষের হাড়ের অনুরূপ গুণগত এবং আকৃতি নিয়ে হাড় তৈরি করে দিতে সক্ষম হবে। এই থ্রিডি প্রিন্টেড হাড়গুলোর বিশেষত্ব হলো ট্রাইক্যালসিয়াম ফসফেট ব্যবহারের কারণে শরীর ইমপ্লান্টগুলোকে ভাস্কুলারাইজড হাড়ে তৈরি করবে। এর মানে তারা যে হাড়টি প্রতিস্থাপন করছে তার কার্যকারিতা সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম করবে।

হাইড্রোজেন প্লেন

স্বল্প দূরত্বের বিমান ভ্রমণকে পরিবেশবান্ধব করার পরিকল্পনা করেছে বিশ্বের অনেক দেশ প্রধান। সেই লক্ষ্যে বিশ্বে হাইড্রোজেন জ্বালানিযুক্ত যাত্রীবাহী বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু করার প্রস্তুতি নিয়েছে অনেক দেশ। গত ২ মার্চ ইউনিভার্সাল হাইড্রোজেন দ্বারা তৈরি হাইড্রোজেন চালিত ডি হ্যাভিল্যান্ড ড্যাশ ৮-৩০০-এর প্রথম ফ্লাইটটি ৪০ জন যাত্রী নিয়ে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বাণিজ্যিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে কার্বন নির্গমন একটি বিশাল উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে একটি সম্ভাবনাকে বড় করে দেখা হচ্ছে, যার পেছনে বড় বিনিয়োগও মিলেছে। আর তা হলো হাইড্রোজেন চালিত বিমান নির্মাণ। এ ক্ষেত্রে ১৫ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি ‘ফ্লাই জিরো’ নামে পরিচিত। যুক্তরাজ্য সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে অ্যারোস্পেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের নেতৃত্বে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অ্যারোস্পেস টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে শূন্য-কার্বন নিঃসরণ বাণিজ্যিক বিমান চালনা করা। প্রকল্পটি তরল হাইড্রোজেন দ্বারা সম্পূর্ণরূপে চালিত একটি মাঝারি আকারের বিমানের ধারণা নিয়ে এসেছে। এটি প্রায় ২৭৯ জন যাত্রীকে অর্ধেক বিশ্বজুড়ে বিরতিহীনভাবে ওড়াতে সক্ষম হবে।

বুদ্ধিমান এক্সো-কঙ্কাল

জনপ্রিয় কল্পকাহিনি এবং বাস্তব জীবন উভয় ক্ষেত্রেই বহু বছর ধরে এক্সো-কঙ্কাল বিদ্যমান। কিন্তু প্রতিবছর এই প্রযুক্তিটি কল্পকাহিনির কাছাকাছি যাওয়ার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়েছে। তরুণদের জন্য প্রযুক্তি যত সহজলভ্য হয়েছে, এই খাতে তত বেশি উন্নতি হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অঃষধং ২০৩০ কে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে ডিজাইন করা সবচেয়ে উন্নত মোবাইল মেডিকেল এক্সো-কঙ্কাল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এখনও এটির বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হয়নি। ২০২৩ সালে এটার বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: আবিষ্কার

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 + 5 =