২০২৫ সালে রেকর্ড ছাড়াবে জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃসরণ: গবেষণা

জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে ২০২৫ সালে কার্বন নিঃসরণ নতুন রেকর্ড ছুঁবে বলে জানিয়েছে এক আন্তর্জাতিক গবেষণা। একই সঙ্গে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার লক্ষ্য এখন প্রায় ‘অসম্ভব’। প্যারিস থেকে এএফপি এ খবর জানায়। খবর বাসস

বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল কার্বন বাজেট’ প্রতিবেদনে বলা হয়, জীবাশ্ম জ্বালানি, সিমেন্ট উৎপাদন ও ভূমি ব্যবহারের (যেমন বন উজাড়) মাধ্যমে মানবজাতি যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করছে, তা ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির উষ্ণতা সীমার সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নিঃসরণ আগের বছরের তুলনায় ১.১ শতাংশ বেশি হবে। বিশ্বজুড়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়লেও তা এখনও বাড়তি চাহিদা পূরণে যথেষ্ট নয়। তেল, গ্যাস ও কয়লা এই তিনটিরই নিঃসরণ বাড়বে। সব মিলিয়ে ২০২৫ সালে মোট নিঃসরণ দাঁড়াবে ৩৮.১ বিলিয়ন টনে।

ব্রাজিলের আমাজনে চলমান কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনের সময় এই গবেষণা প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমা বজায় রাখতে এখন মাত্র ১৭০ বিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের সুযোগ আছে।

গবেষণার প্রধান, ব্রিটেনের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের পিয়ের ফ্রিডলিংস্টেইন বলেন, ‘বর্তমান হারে চললে এই সীমা চার বছরের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তাই ১.৫ ডিগ্রি লক্ষ্য এখন কার্যত অসম্ভব।’

জলবায়ু সম্মেলনের আলোচনায় এই ব্যর্থতা ছায়া ফেলেছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দূষণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র আমাজনের বেলেম শহরে চলমান কপ৩০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেয়নি।

২০২৫ সাল বিশ্বের অন্যতম উষ্ণতম বছর হতে পারে বলে পূর্বাভাস থাকলেও, দেশগুলোর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখনও অনেক পিছিয়ে।

এদিকে, সিসেরো জলবায়ু গবেষণা কেন্দ্রের গ্লেন পিটার্স বলেন, ‘বিশ্ব একসঙ্গে কাজ করছে না। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে এবং আরও বেশি কাজ করতে হবে।’

পিটার্স জানান, চীনে জীবাশ্ম জ্বালানির নিঃসরণ এ বছর মোটামুটি স্থিতিশীল ছিল। বিশেষ করে কয়লা থেকে নিঃসরণ কমেছে। এতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ার ইঙ্গিত মিলছে।

তবে তিনি বলেন, নীতিগত অনিশ্চয়তার কারণে চীনের নিঃসরণ শীর্ষে পৌঁছেছে কিনা, তা বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ‘ধীরে ধীরে ভারসাম্য বদলাচ্ছে। তবে নিঃসরণ কমতে আরও সময় লাগবে।’

যুক্তরাষ্ট্রে কয়লা থেকে নিঃসরণ বেড়েছে ৭.৫ শতাংশ। গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে আবারও কয়লার ব্যবহার বেড়েছে। মোট হিসেবে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দুই অঞ্চলেই নিঃসরণ বেড়েছে। ভারতে আগাম বর্ষা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রবৃদ্ধি থাকায় কার্বন নিঃসরণ তুলনামূলকভাবে কমেছে।

‘আর্থ সিস্টেম সায়েন্স ডেটা’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, এখন পর্যন্ত ৩৫টি দেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি নিঃসরণ কমাতে পেরেছে, যা এক দশক আগের তুলনায় দ্বিগুণ।মানবজাতির মোট নিঃসরণ, ভূমি থেকে নিঃসরণসহ, এ বছর ৪২.২ বিলিয়ন টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যদিও এতে কিছুটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।

গবেষকরা জানান, দক্ষিণ আমেরিকায় বন উজাড় ও দাবানল কমেছে। ২০২৩-২৪ সালের শুষ্ক এল নিনো পরিস্থিতির অবসান এর পেছনে ভূমিকা রেখেছে। এতে ভূমি ব্যবহারজনিত নিঃসরণ কিছুটা কমেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 + 9 =