গত ২০০ বছরের বাঙালি মনীষীদের সুনির্বাচিত রচনা একটি গ্রন্থে আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এই গ্রন্থের নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাঙালির চিন্তামূলক রচনা সংগ্রহ’। গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ১৬টি বিষয়। যার মধ্যে রয়েছে ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান, পরিবেশ, চলচ্চিত্র, সংগীত, রাজনীতি, ভাষা, সংস্কৃতি, নারী, সমাজ, অর্থনীতি ও শিক্ষা।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ১৬টি বিষয়ে ২০৮ খণ্ডে প্রকাশিত হচ্ছে ৭৪ হাজার পৃষ্ঠার এই রচনা সংগ্রহ। দীর্ঘ সময় ধরে এই সংগ্রহ গড়ে তুলে কাজ করেছে একটি সম্পাদনা পরিষদ।
ইতোমধ্যে পাঁচটি বিষয়ের (সংস্কৃতি, দর্শন, নারী, বিজ্ঞান ও ইতিহাস) চুয়ান্নটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক সংকলনগুলো বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যোগাযোগ করে সংগ্রহ করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এছাড়া স্বল্প সময়ের মধ্যে বাকি খণ্ডগুলো প্রকাশিত হবে। পুরো সিরিজটি সরবরাহের সম্ভাব্য তারিখ ধরা হয়েছে আগামী বছরের ১০ এপ্রিল। এছাড়া কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে ক্লিক করে বিভিন্ন খণ্ডের রচনার তালিকা পাওয়া যাবে।
শনিবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে এই রচনা সংগ্রহ প্রকাশ অনুষ্ঠান হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এ প্রকল্পের সূচনাকারী আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ এবং সম্পাদক পরিষদের সদস্যরা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্রের পরিচালক শামীম আল মামুন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, “এই ২০০ বছর শুধু ২০০ বছর নয়, তা বাঙালির চিন্তা শক্তির স্ফূরণ। গত ২০০ বছরের আগেও অনেক বড় বড় কাজ হয়েছে। কিন্তু এই ২০০ বছরের সঙ্গে তা তুলনীয় নয়। একদিন আমার মনে হল এই যে ২০০ বছর ধরে বাঙালি জাতির মধ্যে বৌদ্ধিক জাগরণে যারা এর নায়ক, যারা এর নেতা, তারা এগুলো করেছেন, এগুলো নিয়ে লিখেছেন, তারা জাতির চিত্রকর্ষের জন্য চেষ্টা করেছেন। অনুশীলনের চেষ্টা করেছেন। এই যে এত বড় বড় কাজ এত বড় বড় ঘটনা, এগুলোতো রক্ষিত হল না।
“কেননা চিন্তা, মূল্যবোধ, মননশীলতা, জ্ঞানচর্চা, মুক্তিসংগ্রাম– সব মিলিয়ে বাঙালির জীবনে এ সময়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, উর্বর ও ঐশ্বর্যময়। এ সময়ে বহু বাঙালি মনীষী, ভাবুক বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তা করেছেন, লিখেছেন। তাদের সেই রচনাগুলোকে একত্র করতে পারলে তা বাঙালি জাতির জন্য বিরাট সম্পদে পরিণত হবে। এরপর এই সংগ্রহের, এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে এই কাজটি করলে সবারই উপকার হবে, জাতির উপকার হবে। তাই আমরা এই প্রকল্প হাতে নিয়েছি।”
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ইফতেখারুল ইসলাম বলেন, “যদি এখন থেকে আগামী বছরের মার্চ মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে ২০৮ খণ্ডের সিরিজটি কেউ সংগ্রহ করতে চান, তাহলে ৫০% ছাড়ে তা ৯০,০০০ টাকায় সংগ্রহ করতে পারবেন। গ্রন্থমালাটির ২০৮ খণ্ড একত্রে অথবা বিষয়ভিত্তিক সেট সংগ্রহ করা যাবে।”
১৬টি বিষয় নিয়ে এই সংকলনটির এখন প্রি-অর্ডার এর জন্য বুকিং নেয়া হচ্ছে বিশেষ ছাড়ে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে প্রিঅর্ডার করতে হবে। এই সময়ের পর ৩১ মার্চ গ্রন্থমালার মূল্যের ছাড় হবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নির্ধারিত নীতিমালা অনুযায়ী ৩০%, দাম হবে মোট ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা।
১৬টি খণ্ডের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন- বাঙালির অর্থনীতিচিন্তা\ হারাধন গাঙ্গুলী, ইতিহাসচিন্তা\ মো. মোফাখখারুল ইসলাম, চলচ্চিত্রচিন্তা\ সাজেদুল আউয়াল, দর্শনচিন্তা\ প্রদীপ রায়, ধর্মচিন্তা \ মোহাম্মদ আবদুল হাই ও চঞ্চল আশরাফ, নারীচিন্তা \ আকিমুন রহমান, পরিবেশচিন্তা \ মুশফিকুর রহমান, বিজ্ঞানচিন্তা\ জাকির তালুকদার, ভাষাচিন্তা\ সাখাওয়াৎ আনসারী, রাজনীতিচিন্তা\ খোন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন, শিক্ষাচিন্তা\ শোয়াইব জিবরান, শিল্পচিন্তা\ মইনুদ্দীন খালেদ, সংগীত\ করুণাময় গোস্বামী, সংস্কৃতিচিন্তা/ আহমাদ মোস্তফা কামাল, সমাজচিন্তা\ শিপ্রা সরকার ও আহমাদ মাযহার, সাহিত্যচিন্তা\ বিশ্বজিৎ ঘোষ (১ থেকে ১১ খন্ড), সাহিত্যচিন্তা\ সৈয়দ আজিজুল হক (১২ থেকে ২৬ খন্ড), সাহিত্যচিন্তা\ বদিউর রহমান (২৭ থেকে ২৯ খন্ড), সাহিত্যচিন্তা\ মাসুদুল হক (৩০ থেকে ৩২ খন্ড), সাহিত্যচিন্তা\ রাজীব সরকার (৩৩ থেকে ৩৫ খন্ড)।
বিডিনিউজ