অকাল প্রয়াত কেকে’র জন্মদিন আজ

কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে’র জন্মদিন আজ ২৩ আগস্ট। জন্মদিনে ফিরে ফিরে আসবে তার কণ্ঠ, তার গল্প। জীবনে শক্তি পাওয়া যায় এমন কিছু গান আবারও শোনা হবে। শুধু এই দিনটিতেই নয়, কেকে থাকবেন কয়েক প্রজন্মের হৃদয়ে ‘আপন আসনে মাটিতে আলোতে, সাদায় কালোতে’।

কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন কেকে। অনুষ্ঠান করেন। রীতিমতো লাফিয়ে-ঝাঁপিয়ে শেষ বারের মতো মাতিয়ে দিয়ে যান শহরের শ্রোতাদের। প্রয়াণের পর যে টুকরো টুকরো ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছিল, তা দেখে মনে হয়, শিল্পীর অস্বস্তি হচ্ছে। তিনি ঘাম মুছছেন। কখনও জল খাচ্ছেন। উপরের দিকে তাকাচ্ছেন। আবার ফিরে গিয়ে হাজার ওয়াটের আলোর ঝলকের সামনে দাঁড়াচ্ছেন। মাইক্রোফোন তুলে নিচ্ছেন হাতে। চিরচেনা স্বর ফিরে ফিরে আসছে তার কণ্ঠে। বিনোদনের উপকরণ জোগানোই যার উদ্দেশ্য ছিল, জীবনের শেষ কিছু মুহূর্তেও সেই কাজটি করে গিয়েছেন তিনি।

কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে নব্বই এবং দু’হাজারের দশকে একাধিক সুপার হিট গান গেয়েছেন। ১৯৯৬ সালে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদের উপর ছবি ‘মাচিস’এর গানের অংশবিশেষ, কিংবা ১৯৯৯ সালে তার জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘পল’ বা ২০০৮ সালের ‘হামসফর’ অ্যালবামটির কথা।

১১টা ভাষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিজ্ঞাপনী জিঙ্গল রেকর্ড করেছেন কেকে। শাহরুখ খান, রণবীর সিংহ কিংবা সালমন খানের নেপথ্যকণ্ঠ হিসেবেও জনপ্রিয় হয়েছে তার গান। অজস্র অনুষ্ঠান করেছেন দেশ-বিদেশে। তার অনুষ্ঠানে মোহিত হয়েছে কয়েক প্রজন্ম।

সঙ্গীতে কেকে-র প্রথাগত শিক্ষা ছিল না। মায়ের কণ্ঠের গান শুনে সঙ্গীতের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। স্বরলিপি নয়, সুর শুনে গান তুলতে স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। পরবর্তী কালে একলব্যের দ্রোণাচার্য ছিলেন কিশোর কুমার। অন্ধ ভাবে অনুসরণ করতে থাকেন কিশোরকে।

যাকে অনুসরণ করছেন, তাকে সর্বার্থে অনুকরণ করেননি। নিজের কণ্ঠস্বরের উপর আস্থা রেখে, পুরোপুরি নিজস্ব স্টাইল বজায় রেখে সঙ্গীত পরিবেশন করে গিয়েছেন। যা হয়তো তাকে স্বতন্ত্র স্থান দিয়েছে তার প্রজন্মের অন্য গায়ক— কুমার শানু, অভিজিৎ, সনু নিগমের থেকে।

ফলে, শুরু থেকেই কেকে ছিলেন ‘নিজের মতো’। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে বলিউডও হয়তো এমন এক ‘ফ্রেশ’ কণ্ঠেরই খোঁজে ছিল। এ দিক থেকে দেখলে তাকে কিশোরের উত্তরসূরি বলা কি অত্যুক্তি হবে?

এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,পুরস্কার নয়, তার লক্ষ্য ছিল মানুষের হৃদয়ে জায়গা। মানুষের ভালবাসা যে তার কাছে সবচেয়ে বড় পুরস্কার ছিল, তা প্রমাণ করেছিল তার অকালপ্রয়াণ এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ।

আনন্দবাজার

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × five =