অটিজম

সেলিনা আক্তার: অটিজম কোনো রোগ নয়। আমাদের সমাজে এটাকে অধিকাংশ মানুষ ভুল করে রোগ হিসেবে দেখে থাকে। এটি হলো নিউরোডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার। শিশুর জন্মের তিন বছর বয়সের মধ্যে এটি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। কখনো কখনো মা-বাবাদের বুঝে উঠতে আরও বেশি সময় লাগে। এ সব শিশুরা পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছুটা কম সক্ষম হয়,সামাজিক আচার-আচরণেও দুর্বল হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতার কারণে একই কাজ বারবার করে থাকে। কারণে অকারণে মেজাজ হারিয়ে ফেলে,কিছুটা খিটখিটে মেজাজের হয়ে থাকে। তবে সবার ক্ষেত্রে একই ধরনের প্রকাশভঙ্গী দেখা যায় না। আচরণগত ভিন্নতা দেখা যায়। ২০১৬ সালে দেশে মোট অটিস্টিক শিশু ছিলো ৪১ হাজারেরও বেশি। ২০২০ সালের স্বাস্হ্য মন্ত্রণালয়ের জরিপ অনুযায়ী এই হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে  অটিস্টিক শিশুর তিন শতাংশ এবং ঢাকার বাইরে দশমিক সাত শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশে একযুগ আগেও অটিজম শব্দটিকে এভাবে কেউ চিনত না। যিনি চিনিয়েছেন তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নাতনি, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সুযোগ্য কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। মানুষের জন্য কাজ করা বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্বভাবজাত ধর্ম। পরিবারের প্রতিটি সদস্য স্ব-স্ব অবস্থান থেকে মানুষের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন-“একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানব জাতি নিয়েই আমি ভাবি।” জাতির পিতার সুযোগ্য নাতনি সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এমন এক শ্রেণির মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করছেন, যা অতীতে এমনটি দেখা যায়নি। তিনি আজ প্রতিটি অটিস্টিক শিশুদের মায়ের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন।

অটিস্টিক শিশুকে নিয়ে যখন পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশের সমাজে বাবা-মা অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় পড়তেন, অটিস্টিক শিশুর জীবন যেখানে ছিল নরকসম তখন তাদের পক্ষে দাঁড়ান সায়মা ওয়াজেদ।  অটিজম নিয়ে বাংলাদেশে প্রথম কাজ করতে এগিয়ে আসেন সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল। যিনি বাংলাদেশের মানুষকে তার কাজের মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন যে, অটিজম কোনো জিন-পরির আসর না, বা পাপের বিষয় নয়- এটি স্রেফ একটি মানসিক অবস্থা। সঠিকভাবে চিকিৎসা করলে এর প্রতিকার সম্ভব। অটিজমে আক্রান্ত শিশুরা বরং বিশেষভাবে সক্ষম। প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদের বিশেষ উদ্যোগে অটিস্টিক শিশুরা আজ শিক্ষিত হয়ে নিজেরাই স্বাবলম্বী হচ্ছেন।

সাধারণত কাউকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী, অন্ধ এবং জন্মগতভাবে অস্বাভাবিক শিশুদের নিয়ে কাজ করতে দেখা যায় না। বরং বুদ্ধি প্রতিবন্ধীদের সমাজের ‘বোঝা’ এবং ‘বিরক্তকর’ মনে করে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সেই অস্বাভাবিক কাজটিকেই বেছে নিয়েছেন; এবং অটিজম শিশুদের সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রতিবন্ধীদের মনে করা হতো সমাজের বোঝা। কিন্তু সমাজের এই বোঝাকে সম্পদে পরিণত করার যে উদ্যোগ তিনি নিয়েছেন; তাদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে যে পরিশ্রম করছেন নিঃসন্দেহে তা কেবল প্রশংসার দাবিদারই নয়, অনুপ্রেরণাও। সমাজ ও দেশের অবহেলিত এক গোষ্ঠীকে সমাজের মূলস্রোতে এনে মিশিয়েছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আলো দেখাচ্ছেন।

অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় অটিজম মোকাবিলায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দক্ষ-অভিজ্ঞ প্রশিক্ষিতদের তত্ত্বাবধান, বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচির ব্যবস্থা, খেলাধুলা, শরীরচর্চা, বইপড়া, প্রত্যেক প্রতিবন্ধী শিশুর বিশেষ চাহিদা পূরণ, বিকলাঙ্গ শিশুদের আর্থিকভাবে বিশেষ ব্যবস্থার আওতায় আনা এবং মানসিক-শারীরিক অটিস্টিক শিশুদের উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সঠিকভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অটিজম ও স্নায়ুবৈকল্য-বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটির চেয়ারম্যান সায়মা ওয়াজেদ,তার নেতৃত্বে অটিজম মোকাবিলায় প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব-দরবারে স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। অটিজম নিয়ে কাজ করার লক্ষ্যে তিনি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘সূচনা ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ নামে একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন।

অটিজম ও মানসিক স্বাস্থ্য-সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আর্থিকভাবে সহায়তা করার জন্য তার এই উদ্যোগ। সায়মা ওয়াজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়, তাদের সম্পদ হিসেবে গড়ে দেশ ও দশের উন্নয়নের অংশীদার করে তোলা। এ কারণে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও কাজের সুযোগ তৈরিতে তিনি সদা তৎপর। বাংলাদেশে ২০১৩ সালে পাস হয় ‘নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅ্যাবিলিটি ট্রাস্ট অ্যাক্ট’। এ আইনে  অটিজম সম্বন্ধে বলা আছে- যার মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষণপরিলক্ষিত হবে, তারা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তি বলে বিবেচিত হবেন, যথা- মৌখিক বা অমৌখিক যোগাযোগে সীমাবদ্ধতা ;সামাজিক ও পারস্পরিক আচার-আচরণ, ভাব বিনিময় ও কল্পনাযুক্ত কাজ-কর্মের সীমাবদ্ধতা;একই ধরনের বা সীমাবদ্ধ কিছু কাজ বা আচরণের পুনরাবৃত্তি;শ্রবণ, দর্শন, গন্ধ, স্বাদ, স্পর্শ, ব্যথা, ভারসাম্য ও চলনে অন্যদের তুলনায় বেশি বা কম সংবেদনশীলতা; বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধীতা বা খিঁচুনি ; এক বা একাধিক নির্দিষ্ট বিষয়ে অসাধারণ দক্ষতা এবং একই ব্যক্তির মধ্যে বিকাশের অসমতা; চোখে চোখ না রাখা বা কম রাখা ; অতিরিক্ত চঞ্চলতা বা উত্তেজনা অসংগতিপূর্ণ হাসি-কান্না; অস্বাভাবিক শারীরিক অঙ্গভঙ্গি এবং একই রুটিনে চলার প্রচণ্ড প্রবণতা।’ ২০১০ সালে ঢাকার মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অটিজম রিসোর্স সেন্টার এবং ২০১১ সালে অটিস্টিক স্কুল খোলা হয়েছে। ঢাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সেন্টার ফর নিউরোডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অটিজম ইন চিল্ড্রেন’ (সিএনএসি) খোলা হয়েছে। সিএনএসি এখন একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয়েছে যা পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি অ্যান্ড অটিজম ইনস্টিটিউট (IPNA) নামে পরিচিত। যা ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইনস্টিটিউশন প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে শিশু বিকাশকেন্দ্র এবং দেশের সব জেলায় প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে একটি করে অটিজম কর্নার খোলা হয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও অটিজম রোগীদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। সুইড বাংলাদেশের ৪৮টি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলেও অটিস্টিক শিশুদের লেখাপড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে অটিজমসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে বিভিন্ন সেবা ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।

এক কথায় বলা যায় যে ,সায়মা ওয়াজেদের ঐকান্তিক চেষ্টায় অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ অটিজম-সংক্রান্ত কার্যক্রম এগিয়েছে অনেক দুর। ১৪টি মন্ত্রণালয় নিয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় টাস্কফোর্স। ৮টি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটি। এর মধ্যে প্রথম সারির ৫টি হলো সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১১ সালের ২৫ জুলাই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অটিজম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার’ বিষয়ক ‘ঢাকা ঘোষণা’র মধ্য দিয়ে অটিজম ও শিশুর অন্যান্য বিকাশজনিত সমস্যা সমাধানে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি South Asian Autism Network দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া, ২০১৩ সালের ৩০ মে WHO -এর নির্বাহী পরিষদে অটিস্টিক শিশুর জন্য “সর্বাত্মক ও সমন্বিত উদ্যোগ” নামে একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও সৌদি আরবসহ ৫০টি দেশ সমর্থন দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সায়মা ওয়াজেদ এর আন্তরিকতার কারণে অটিজম বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এমনকি কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন।

সরকার অটিজম আক্রন্ত শিশুদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রায় ১.৩৩ লক্ষ অটিস্টিক শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা শিশু হাসপাতালসহ ১৬ টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বিকাশ কেন্দ্র স্হাপন করা হয়েছে এবং আরও ১৫ টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। কোভিডকালীন সময়ে অটিস্টিক শিশুদের নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য ১ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীকে থেরাপিউটিক সেবা  প্রদানের লক্ষ্যে  বিদ্যমান ১০৩ টি  প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রের বাইরে আরও ২১১ টি কেন্দ্র স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  এছাড়া দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীতার ঝুকিতে  থাকা ব্যক্তিদের ৪০ টি মোবাইলথেরাপি ভ্যানের মাধ্যমে  বিনামূল্যে থেরাপিউটিক সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ‘ইউনির্ভাসাল হেলথ কেয়ার কভারেজ’ অর্জনের অংশ হিসেবে ‘স্বাস্থ সুরক্ষা আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সরকার অটিজমসহ এনডিডি ব্যক্তির স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সাধারণ বিমা করপোরেশনের সঙ্গে ট্রাস্ট যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বিমা’ বাস্তবায়ন করছে। এছাড়াও এনডিডি ব্যক্তিকে প্রতিবছর এককালীন আর্থিক চিকিৎসা অনুদান প্রদান করা হচ্ছে। সরকার ইতোমধ্যে নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করেছে। ২০১৭ থেকে এই ট্রাস্ট থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০১ জনকে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তির গৃহভিত্তিক পরিচর্যা ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার জন্য কোভিড পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ৫৩টি জেলার ১৯০টি উপজেলার ৩৯০ জন পিতা-মাতা/অভিভাবকদের অনলাইন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ৬০টি জেলার ১০৫টি উপজেলার ১১৫টি বিদ্যালয়ের ৪৫০ জন শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এটি এখনো চলমান রয়েছে।  এছাড়াও সরকার প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা, ২০১৯ প্রণয়ন করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী, বিশেষ স্কুল স্থাপন ও অনুমোদনের কার্যক্রম চলমান আছে।

‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামক দুটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। সহায়ক প্রযুক্তি হিসেবে ‘বলতে চাই’ অমৌখিক যোগাযোগ সহজ করবে। শিশুর অটিজম আছে সন্দেহ হলে সহজেই ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ অ্যাপ দ্বারা ঘরে বসেই অটিজম আছে কি না তা জানা যাবে। এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় এ বছরই ১৪টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে অটিজমসহ অন্যান্য এনডিডি শিশু ও ব্যক্তিদেরকে জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপে সোশ্যাল ও মেডিকেল পদ্ধতির সমন্বয়ে ১৭ ধরনের বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হবে। এনডিডি ব্যক্তিদের জীবনচক্রব্যাপী বিভিন্ন সেবা প্রদানের জন্য ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান ২০১৬-২০৩০ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আলোকে প্রথম পর্যায়ে ১৪টি অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব কেন্দ্র আরও বাড়ানো হবে। ২০ লাখ ৮ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে মাসিক ৭৫০ টাকা করে ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। যারা শিক্ষার্থী, তাদের জন্য বিশেষ ভাতার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যারা ছাত্র-ছাত্রী তাদের ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে যাতে তারা লেখা পড়া করতে পারে। বরাবরের মতই সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন কিন্তু তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজন সঠিক মনিটরিং ব্যবস্থা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈদ, নববর্ষসহ বিভিন্ন পার্বণ ও দিবসে যেসব শুভেচ্ছা কার্ড পাঠান, সেগুলো তিনি অটিস্টিক শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে ছাপেন।যাদের কার্ড তিনি বেছে নেন তাদের উপযুক্ত সম্মানী দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে সম্মাননাপত্রসহ এক লাখ করে টাকা দিয়ে থাকেন  শেখ হাসিনা। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন খেলোয়াড়রদেরকে তাদের খেলাধুলা অনুশীলনের জন্য আলাদা জায়গা করে ও একাডেমি করে দিচ্ছেন সরকার। এছাড়াও অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য ৮ বিভাগে স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অটিস্টিক শিশুকে যদি ঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় তবে শিশুটি সমাজের অন্য শিশুদের মতো সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে না পারলেও স্বাবলম্বী হতে পারবে। এখন প্রয়োজন অটিস্টিক শিশুদের জাতীয় মূলধারায় সম্পৃক্ত করা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভালোবাসা-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে আমাদের সকলকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর তনয়া সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের নিরলস প্রচেষ্টায় বিশ্বে অটিজম সচেতনতায় বাংলাদেশ রোল মডেল। এই ধারা অব্যাহত রাখতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

পিআইডি ফিচার

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

14 + seven =