অতি দূষণকারী দেশগুলোর উচ্চাভিলাষী দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরি

আফরোজা আখতার পারভীন: বিশ্ব যদি সমর্থন না-ও করে তবুও সস্তা জ্বালানি কয়লা এখনই আমাদের ব্যবহার শুরু করা উচিত। যেহেতু উন্নয়নের জন্য জ্বালানি লাগবেই এবং আমাদের অন্য কোনো উৎস নেই তাই নিজস্ব কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের বিকল্প নেই।
বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকস-এর অতিথি হয়ে পল্লি কর্ম সহায়ক ফাইন্ডেশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ফজলে রাব্বী সাদেক আহমেদ বলেন, একটা কপেই সবকিছুর সমাধান হয়ে যাবে এমন না। এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এবারও জলবায়ু তহবিল সংগ্রহ প্রধান ইস্যু হবে। অর্থায়ন খুব জরুরি বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত দায়ী উন্নত বিশ্ব। তাই তাদের অর্থায়ন নিয়ে তৎপর হতে হবে।
তিনি বলেন, কপ২৭-এ দাবী থাকবে, জলবায়ু তহবিলের সংজ্ঞা নির্ধারণ হোক। কারণ ইতপূর্বের কপগুলোতে তা হয়নি। সংজ্ঞা নির্ধারণ করে ১০০ বিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ হোক। ঝুঁকিপুর্ণ উন্নয়নশীল দেশগুলোর অভিযোজনের জন্য সে অর্থ পাওয়া জরুরি। বর্তমানে তহবিলের মাত্র ১০ ভাগ অভিযোজনের জন্য খরচ করা হচ্ছে। দাবী থাকবে, এটার পরিমাণ যেন বাড়ে।
ফজলে রাব্বীর মতে, গত কপে সিদ্ধান্ত ছিল অভিযোজনের জন্য তহবিল দ্বিগুন করা হবে। কিন্তু বিষয়টা এখনও অবহেলা করা হচ্ছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো যে অর্থায়ন করা হচ্ছে তার ৭০ ভাগই হলো প্রচলিত সুদহারে ঋণ। জলবায়ু তহবিলের অর্থায়ন যদি ঋণই হয় তাহলে অভিযোজনে সফলতা আসবে না। কারণ উন্নয়শীল অনেক দেশ ঋণের ফাঁদে আটকে পড়েছে। জলবায়ু তহবিল থেকে অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন যদি ঋণই হয় তাহলে দেশগুলো নতুন আরেকটি ঋণজালে আটকে যাবে। পুরো পৃথিবী আরেকটি ঋণভারে ডুবে যাবে।
তিনি বলেন, কপ২৭-এ চেষ্টা করা হবে লস অ্যান্ড ড্যামেজের স্বীকৃতি হিসেবে নতুন একটা ‘উইনডো’ তৈরি করা। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর দাবী হবে অবশ্যই এটা যেন করা হয়। বিষয়টি প্রাথমিক এজেন্ডায় অন্তর্ভুক্ত আছে তা যেন চূড়ান্ত এজেন্ডাভুক্ত করতে হবে। সমাধান না হলেও যেন আলোচনা চালু থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে।
কপের সিদ্ধান্তের বাইরে নরওয়ে, সুইটজারল্যান্ড জলবায়ু তহবিলে ‘টোকেন’ হিসাবে অর্থ জমা করেছে। যাতে করে উন্নত বিশ্ব তহবিল যোগান দিতে এগিয়ে আসে। বিষয়টি ইতিবাচক।
ফজলে রাব্বী আরও বলেন, ‘ফেজ ডাউন’ আর ‘ফেজ আউট ’ শব্দের মধ্যেই ফাঁকি আছে। ‘ফেজ ডাউন’ মানে কমান। এখন ৯০ ভাগ ফসিল জ্বালানি বা কয়লা ব্যবহার কমাবে না ১০ ভাগ এর বাধ্যবাধকতা নেই। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জার্মানিসহ ইউরোপের দেশগুলো কয়লাসহ ফসিল জ্বালানি ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে এটা কিন্তু একটা চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি দেশ তার নিজের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে কিছু করতে চাইবে না। দেশগুলোর অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হোক এমন পদক্ষেপ নেবে না। সুনামির আগে জাপান সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তারা দূষণ কমাবে। কিন্তু যখন পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সমস্যায় পড়লো তখন তারা ফসিল জ্বালানি ব্যবহার বাড়িয়ে দিল।
তিনি বলেন, গ্রিন হাউস গ্যাসের কারণেই তো জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য হলো ওয়েল বিলো ১.৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা ধরে রাখা। ২০৫০ সালের মধ্যে যদি উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করতে না পারি তাহলে লক্ষ্য অর্জিত হবে না। সবাই যদি এনডিসিতে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণ ভাবে পালন করে, যদিও তা সম্ভব নয়, কারিগরি মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে তবুও প্রায় ৩ ডিগ্রি তাপামাত্রা বেড়ে যাবে। যদিও জাতিসংঘ খুব তৎপর। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টিও মনে রাখতে হবে।
২০৫০ সালে ‘নেট জিরো’ অর্জনে প্রধান ভূমিকা নিতে হবে উন্নত বিশ্বের। কারণ ৪৭টি উন্নয়নশীল দেশ মিলে বিশ্বে মোট কার্বন দূষণ করে মাত্র ৩ ভাগ। এর মধ্যে ৪৭% কৃষি এবং পশুপালনে, শিল্পে খুবই কম। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য নয়। স্পষ্ট করে বললে, শুধু চীন এবং আমেরিকা দূষণ কমালেই ৬০-৭০ ভাগ দূষণ কমে যাবে।
দেশের জলবায়ু তহবিল পেতে দক্ষ জনবল তৈরি করে তেমন সুফল পাওয়া যাবে না। তবে সক্ষমতা বাড়ালে কিছুটা বেশি অর্থ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যবে।
ফজলে রাব্বী সুস্পষ্ট অভিমত দিয়ে বলেন, বিশ্ব যদি একমত নাও হয় তবুও সস্তা জ্বালানি কয়লা এখনই আমাদের ব্যবহার শুরু করা উচিত। যেহেতু উন্নয়নের জন্য জ্বালানি লাগবেই এবং আমাদের অন্য কোনো সোর্স নেই তাই কয়লা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের বিকল্প নেই। এছাড়া এর ফলে যে দূষণ হবে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তা অতি নগণ্য। আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এরপরে চাইলেও কয়লা ব্যবহার করা যাবে না। কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ দিয়ে তৈরি কোনো পণ্য রপ্তানি করা যাবে না। বিশ্বের প্রধান জ্বালানি এখনও কয়লা। উন্নত বিশ্ব অতি দূষণকারি হয়েও যদি কয়লা ব্যবহার করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারব না?

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six − 5 =