সালেক সুফী
সিলেট জাতীয় স্টেডিয়ামে কাল একপেশে খেলায় শুরু থেকে শেষ অবধি আধিপত্য বিস্তার করে ৮ উইকেটে সহজ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের টি ২০ সিরিজের ফলাফল এখন ১-১ সমতা। ৯ মার্চ শনিবার দিনের ম্যাচটি এখন হাড্ডা হাড্ডি লড়াই করে এগিয়ে যাবার পালা। ৪ মার্চ প্রথম খেলাটি লড়াই করে ৩ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। কাল কিন্তু ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে দ্যুতি ছড়িয়ে জিতেছে বাংলাদেশ। বলা যায় দাঁড়াতেই পারেনি সফরকারী শ্রীলংকা।
দিন রাতের খেলায় কাল টস জয় করে শ্রীলংকাকে ব্যাটিং করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। উইকেট ছিল সবুজ ঘাসে ভরা পেস সহায়ক। বাংলাদেশের বোলিং ছিল সুশৃঙ্খল, পরিমিত। সফরকারীরা ১৬৫/৬ উইকেট পর্যন্ত পৌঁছেছিল। উইকেট বিচারে এবং সন্ধ্যার কুয়াশার উপস্থিতি থাকায় সফরকারী দলের স্কোর নিদেন পক্ষে ২০-২৫ রান কম ছিল। জবাবে শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলে বাংলাদেশ। একমাত্র ব্রুনো ফার্নান্দোর বলে সৌম্যর আউটটি নিয়ে টিভি আম্পায়ার বিতর্ক সৃষ্টি ছাড়া সফরকারীদের বলার মত ছিল মাথিশা পাথিরানার দুটি উইকেট তুলে নেওয়া।
বাংলাদেশ অনেকটা হেসে খেলে ১৮.১ ওভারে ১৭০/২ করে ৮ উইকেটে ম্যাচ জয় করে। লিটন (৩৬) শুরুতে এবং শান্ত (৫৩* ), হৃদয় (৩২*) শেষ দিকে দ্যুতি ছড়িয়ে অনায়েসে ম্যাচ জয় করে। যেভাবে খেলছে বাংলাদেশ সেই মোমেন্টাম ধরে রাখলে সিরিজ জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা আছে বাংলাদেশের।
আমি সিলেট স্টেডিয়ামে স্পোর্টিং উইকেট তৈরি করাকে সাধুবাদ জানাবো। সবুজ ঘাসে ঢাকা উইকেটে যথেষ্ট গতি এবং মুভমেন্ট ছিল। কালকের ম্যাচেও টস ভাগ্য বাংলাদেশের অনুকূলে ছিল। রাতের শিশিরের কথা স্মরণে রেখে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ। দ্রুত উন্নতি করতে থাকা শরিফুলের প্রথম স্পেলটি ছিল দুর্দান্ত। শুরুতেই নিজের প্রথম ওভারে আভিস্কা ফার্নান্দোকে ফিরিয়েছিলো তাসকিন। এরপর ভালো ব্যাটিং করে কুশল মেন্ডিস এবং কামিন্দু মেন্ডিস দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে সাচ্ছন্দে ৬৬ রান জুড়ে বড় রান করার সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছিল।
নাজমুল বিচক্ষণতার সঙ্গে বোলিং পরিবর্তন করায় এবং গোটা দল জয়ের নেশায় উদ্বুদ্ধ থাকায় সফরকারীদের ইনিংস নিয়ন্ত্রণে রাখে। খণ্ডকালীন বোলার সৌম্য মারকুটে কুশল মেন্ডিসকে ফেরানোর পর কামিন্দু মেন্ডিস রান আউটে কাটা পরে। ছন্দ হারায় শ্রীলংকা। প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা সাদিরা সামারাভিক্রমারকে স্লোয়ার ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত করে ফিরিয়ে দেয় মুস্তাফিজ। শেষ দিকে এঞ্জেলো ম্যাথিউস (৩২*) , চারিথা আশালনাকা (২৮) এবং দাসুন শানাকা (২০*) চেষ্টা করেও দলের রান ১৬৫/৫ বেশি করতে পারেনি।
উইকেট এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় সফরকারী দলের সংগ্রহ ছিল অপর্যাপ্ত। তার পরেও উইকেট অনুযায়ী সঠিক লাইন, লেংথ বজায় রেখে ভালো বোলিং করেছে শ্রীলংকা বলা যাবে না। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা পরিকল্পনা করে শুরু থেকেই ছিল মারমুখী। লিটন ছিল আপন ছন্দে, সৌম্য কিছুটা নড়বড়ে। বিনুরা ফার্নান্ডোর প্রথম বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলো সৌম্য। কেন যে তৃতীয় আম্পায়ার কোন বিবেচনায় আউট দিলো না বোঝা গেলো না।
প্রথম উইকেট জুটির ৬৮ রান ম্যাচ থেকে সফরকারী দলকে ছিটকে দিয়েছিল। একমাত্র মাথিশা পাথিরানা (২/২৮) ছাড়া অন্য কোন বোলার উইকেট মাফিক সঠিক লাইন লেন্থে বোলিং করেনি। অথবা বলবো বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা চমৎকার ব্যাটিং করে দুর্দান্ত জয় ছিনিয়ে নিয়েছে অনায়াসে ১৮.১ ওভারে ১৭০/২ রান সংগ্রহ করে। দল নায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ৩৮ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করে জয়যাত্রায় নেতৃত্ব দিয়েছে সামনে থেকে।
তরুণ তৌহিদ হৃদয়কে ( ৩২*) অবিচ্ছিন্ন তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭০ রান করে জয় এনেছে বাংলাদেশের। তিন ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা। দুই দলেরই সুযোগ আছে শেষ ম্যাচ জয় করে সিরিজ জয়ের। আমি দারুন খেলতে থাকা স্বাগতিক বাংলাদেশকে এগিয়ে রাখবো এই মুহূর্তে। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশ জয়ী হবে। কিন্তু ফোকাস হারালে চলবে না। সিরিজ জয়ের প্রভাব অবশ্যই পড়বে ওডিআই এবং টেস্ট সিরিজে।