অনুর্ধ১৯ এশিয়া কাপে শিরোপা যুদ্ধে বাংলাদেশ ভারত মুখোমুখি

সালেক সুফী

দাপুটে ক্রিকেট খেলে সেমি ফাইনালে শক্তিশালী পাকিস্তান দলকে ৭ উইকেটে হারিয়ে ফাইনালে উঠেছে শিরোপাধারী বাংলাদেশ অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট দল। রোববার ফাইনালে শিরোপা যুদ্ধ হবে ইদানিং বিভিন্ন এশিয়া পর্যায়ের টুর্নামেন্টে পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত দলের বিরুদ্ধে। ভারত সেমি ফাইনালে একই ভাবে ৭ উইকেটে বিপর্যস্ত করেছে শ্রীলংকাকে। উল্লেখ করা যেতে পারে গ্রুপ পর্যায়ের প্রথম খেলায় ভারতকে উড়িয়ে দিয়েছিল পাকিস্তান। অপরদিকে বাংলাদেশ গ্রুপের খেলায় হেরেছিল শ্রীলংকার কাছে। দুটি প্রায় সমশক্তির দল। ফাইনালে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আশা করা যেতেই পারে।

বাংলাদেশ-পাকিস্তান সেমি ফাইনাল

পাকিস্তান এবারের প্রতিযোগিতায় শুরু থেকেই তুখোড় দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিল। প্রথম ম্যাচেই চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে বিপর্যস্ত করেছিল। গ্রূপের তিনটি খেলায় প্রায় একচেটিয়া খেলে গ্রূপ সেরা হয়েই সেমি ফাইনালে এসেছিল। অন্যদিকে বাংলাদেশ আফগানিস্তান, নেপালের বিরুদ্ধে সহজ জয় পেলেও ব্যাটিং ব্যার্থতায় হেরে গিয়েছিলো শ্রীলংকার বিরুদ্ধে।

কাল কিন্তু সেমি ফাইনালে দাঁড়াতেই দেয়নি  পাকিস্তানকে। বিশেষ করে পাকিস্তানের দুই প্রধান ব্যাটসম্যান শাহ্জাইব খান (০) , উসমান খান (০) দুইজনের উইকেট মারুফ মৃধা শুরুতেই তুলে নেওয়ার পর দাঁড়াতেই পারেনি পাকিস্তান ব্যাটিং বাংলাদেশের উঁচু মানের বোলিং আর আগ্রাসী ফিল্ডিং মোকাবিলায়। ইকবাল ইমনের  (৪/২৪)  নিখুঁত  মিডিয়াম পেস খেলতে হিমশিম খেয়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ৩৭ ওভারে ১১৬ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। ৭ নম্বরে ব্যাটিং করতে আশা ফারহান ইউসুফ (৩২) কেউ বুক চিতিয়ে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের মোকাবিলায়।

জবাবে বাংলাদেশ শুরুতে কালাম সিদ্দিকি (০) এবং জাওয়াদ আবরারকে (১৭) হারালেও ক্রমাগত বিশ্বস্ত টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে নিজের জাত চিনতে থাকা অধিনায়ক আব্দুল হাকিম   তামিমের অপরাজিত ৪২ বলে অপরাজিত ৬১ রানের সুবাদে ১৬৭ বল হাতে রেখে ১২০/৩ করে ৭ উইকেটের বিশাল জয় তুলে নিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায়। আরো একটি তামিম এই ইনিসে ৭ চার আর তিন ছয়ে সাজানো ছিল। এই টুর্নামেন্টে তুখোড় ফর্মে আছে।  কাল ওকে সাঙ্গ দিয়েছে শিহাব জেমস (২৮)।

ভারত-শ্রীলংকা সেমি ফাইনাল

প্রথম ম্যাচে চির প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হোঁচট খাওয়ার পর ভারত কিন্তু সংহারী মূর্তি ধারণ করেছে। গ্রূপের ওপর দুই দুর্বল দল ইউএই আর জাপানকে তুলোধুনো করার পর শ্রীলঙ্কাকেও সেমি ফাইনালে পাত্তা দেয়নি। গ্রূপ ম্যাচে বাংলাদেশকে হারালেও সেমি ফাইনালে প্রত্যাশিত লড়াই করতে পারেনি প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিরুদ্ধে।

প্রথমে ব্যাটিং করে ১৭৩ করেছিল শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ভারতের শক্তিশালী টপ অর্ডার টি২০ ছন্দে ব্যাটিং করে ২১.৪ ওভারেই অনায়সে টার্গেট অতিক্রম করে ৭ উইকেটের সহজ জয় তুলে নেয়। শ্রীলংকার হয়ে লাকভিন আবেসিংহে ৬৯, সারুয়ান শানুগন্থান ৪২ করলেও বাকি সব ব্যাটসম্যান ভারতের নিয়ন্ত্রিত আক্রমণের সামনে মুষড়ে পরে। ভারতের হয়ে চেতন শর্মা ৩/৩৪, কিরণ চারমালে ২/৩২ এবং আয়ুশ মাত্রে ২/৩৭ উইকেট তুলে নেয়।

জবাবে ভারত শ্রীলংকা বোলিং তুলোধুনো করে মাত্র ২১.৪ ওভারে ১৭৫/৩ করে জয়ের নিশানায় পৌঁছে যায়।  যাকে নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে এখন তুলকালাম কাণ্ড ১৩ বছরের স্বর্ণ কিশোর ভৈবব সূর্যাভেন্সি মাত্র ৩৬ বলে ৬ চার আর ৫ ছয়ের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে ঘোষণা দেয় বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন তারকার আগমনী। গ্রূপের অন্য খেলাগুলোতে কিন্তু ওর ভৈরবী ছন্দ দেখা যায় নাই। আয়ুষ মাত্রে ২৮ বলে ৩৪ এবং আন্দ্রে সিদ্ধার্থ ২৭ বলে করে ২২ রান।

ব্যাটিং বোলিং অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ ভারত কিন্তু ফাইনালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশ টুর্নামেন্টের ফেভারিট দল, শিরোপাধারী। টুর্নামেন্টের শুরুতে একটি প্রস্তুতিমূলক খেলায় ভারতকে হারিয়েছে। নিঃসন্দেহে দুটি সেরা দলের ফাইনালে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে আশা করা যেতে পারে।

ছন্দে থেকে যে দল মোমেনটাম ধরে রাখবে জয় তাদের কাছে ধরা দিবে। আমি দুই দলের প্রধান খেলোয়াড়দের উপর নজর রাখতে বলবো। দেখতে বলবো আজ থেকে ৩-৫ বছর পরে কিভাবে ওদের ক্রিকেট জীবন বিকশিত হয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

20 − nine =