সালেক সুফী
দীর্ঘ সময় নিয়ে নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা এবং নাটক করেও বিতর্কবিহীন বিশ্বকাপ স্কোয়াড দিতে পারেনি। সাকিব আল হাসানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড থেকে ফিটনেসের অজুহাতে বাদ দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের সব ফরম্যাটের সর্বোচ্চ রান স্কোরার প্রাক্তন অধিনায়ক দেশ সেরা ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে।
এশিয়া কাপে ব্যর্থ মিশনের পর নিউ জিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে সদ্য সমাপ্ত ওডিআই সিরিজ বাংলাদেশ ২-০ হেরে গেছে। প্রথম ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হবার পর দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ পরাজিত হয় ৮৬ রানে। তৃতীয় ম্যাচেও আসে ৭ উইকেটের বিশাল পরাজয়। এমতাবস্থায় সব কিছু ছাড়িয়ে এখন আলোচনার ঝড় তামিম ইকবালকে স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া এবং যে পদ্ধতিতে বাদ দেওয়া হলো তা।
দেড় মাসের লম্বা টুর্নামেন্টে প্রতিটি দলকে অন্তত ৯টি ম্যাচ খেলতে হবে। সব দল চাইবে মূল খেলোয়াড়রা যেন বেশিরভাগ খেলার জন্য সুস্থ থাকে। আর ১৫ জন খেলোয়াড়ের স্কোয়াড এবং রিজার্ভ খেলোয়াড় নেওয়ার সংস্থান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ কিন্তু ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তানের মতো এমন দল না যে বিশ্বমানের অনেক বিকল্প খেলোয়াড় আছে। নিউ জিল্যান্ডের মতো দল কিন্তু তাদের অধিনায়ক ১০০% ম্যাচ ফিট না থাকা সত্ত্বেও দলে রেখেছে। অস্ট্রেলিয়া নিয়েছে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (১০০% ম্যাচ ফিট নয়)। শ্রীলংকা দল ঘোষণা করেছে ১০০% ম্যাচ ফিট নয় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করে। ভারত নিবিড় চিকিৎসা করে জাসপ্রিত বুমরা, কে এল রাহুল, স্রেয়াস আয়ারকে সুস্থ করে তুলেছে।
বাংলাদেশ কেন পারলো না দীর্ঘ সময় আনফিট থাকা তামিম ইকবালকে সুস্থ করতে? আর বাংলাদেশ কেন ১০০% সুস্থ না থাকা তামিমকে দলে নেওয়ার ঝুঁকি নিলো না? বিশেষত যখন দলে তামিমের অপরিহার্যতা অন্যানো দলের আলোচিত খেলোয়াড়দের থেকেও বেশি। এমনিতেই দলের টপ অর্ডার নড়বড়ে। লিটন ফর্মে নেই। বিকল্প যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের কেউ মানসম্মত নয়।
বাংলাদেশ স্কোয়াড: সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক) , লিটন কুমার দাস (সহ অধিনায়ক) , তানজিদ হাসান তামিম, নাজমুল হাসান শান্ত, তাওহীদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ, তানজিম হাসান শাকিব, শেখ মেহেদী হাসান এবং নাসুম আহমেদ।
একমাত্র তামিম ইকবাল ছাড়া বর্তমান স্কোয়াড নিয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। অনেকের মতে ৭৫% ম্যাচ ফিট তামিম দলের অধিকাংশ ব্যাটসম্যানের থেকে অনেক কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে যে দুটি ম্যাচ তামিম খেলেছে কখনোই মাঠে তাকে আনফিট মনে হয়নি। তামিম সততার সঙ্গে তার ফিটনেস বিষয়টি বিবেচনার কথা বলে ভুল করেনি। তামিমের কথার ভিত্তিতে অন্যদের প্রতিক্রিয়া পেশাদারি মনে হয়নি।
তামিমের অধিনায়কত্বে এবং উল্লেখযোগ্য অবদানে প্রথম দিন দলের একটি হয়েই বাংলাদেশ আইসিসি ওডিআই সুপার লীগ শেষ করেছিল। বেশ কিছু দিন থেকেই পিঠের ব্যাথা থাকায় তামিম মাঝেই বিশ্রাম নিচ্ছিলো। হয়তো দলের দুই একজন ব্যবস্থাপকের সঙ্গে বনিবনার অভাব থাকায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ চলা অবস্থায় অভিমান করে তামিম অবসর গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিল।
২৪ ঘণ্টা নাটকের পর প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে অবসর থেকে ফিরে আসে। তামিমের চিকিৎসা বিষয়ে অবহেলার অভিযোগ আছে। বিশ্বকাপ খেলার আগ্রহ থেকেই তামিম ইংল্যান্ড থেকে সুশ্রষা নিয়ে ফিরে এসে নিবিড় অনুশীলন করে। দুটি ম্যাচ খেলার পর হয়তো চিকিৎসকের পরামর্শেই তৃতীয় ম্যাচে বিশ্রাম নেয়। এমতাবস্থায় গত দুইদিনের নাটক সৃষ্টির নটের গুরু কারা ? কেন এতো লুকোচুরি ?
বাংলাদেশ এমনিতেই এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে অপ্রস্তুত দল। না আছে টপ অর্ডার না আছে বটম অর্ডার। বিশ্বকাপের ৯টি ম্যাচে সর্বোচ্চ ২টি জয় পাবে কিনা সন্দেহ। যে দলে ওপেনিং নিয়ে বিশাল সমস্যা সেখানে কোন ভরসায় বাংলাদেশ তামিমকে বাদ দেওয়ার ঝুঁকি নিলো? তানজিদ তামিমের হয়তো প্রতিভা আছে। কিন্তু সেকি তামিমের শূন্য স্থান পূরণের জন্য আদৌ প্রস্তুত?
বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি তামিমকে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচে মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। অন্যানো ম্যাচেও মিডল অর্ডারে খেলার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। ১৭ বছর জাতীয় দলে কৃতিত্বের সাথে খেলা একজন বিশ্বমানের ওপেনারকে এই ধরনের প্রস্তাব দেওয়াই ধৃষ্টতা।
যাহোক তবুও বাংলাদেশ দলের জন্য শুভেচ্ছা। বোলিং আক্রমণ শক্তিশালী। মাহমুদুল্লাহ ফেরায় মিডল অর্ডার আরো সুসংহত। কিন্তু সমস্যা হবে টপ অর্ডার নিয়ে। দলের ভরাডুবির সম্পূর্ণ দায় দায়িত্ব নিতে হবে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকমণ্ডলীকে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক