অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জ্বালানি দর্শন

সালেক সুফী

গতকাল ডিজিটালি সংযুক্ত হয়ে কুইন্সল্যান্ডের লোগান সিটি থেকে শুনছিলাম বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সর্বোচ্চ সংগঠন এফবিসিসিআই আয়োজিত বাংলাদেশের জ্বালানি নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালা। বুয়েটের প্রাক্তন ডিন ড. ইজাজ হোসেন কর্মশালায় কি-নোট পেপার উপস্থাপন করেন। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ফয়জুল কবির খান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ এবং শ্রেডার চেয়ারম্যান খন্দকার মোহাম্মদ আব্দুল হাই। অন্যান্য কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জ্বালানি বিশারদসহ প্যানেলিস্ট ছিলেন কনজিউমার এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম।

ড. ইজাজ বাংলাদেশের জ্বালানি-বিদ্যুৎ পরিস্থিতি, সমস্যা, সংকট বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যাদি উপস্থাপন করে সমাধানের কিছু সুপারিশ করেন। অন্যান্যদের মধ্যে ড. শামসুল আলম বিগত সরকারের সময়ে কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় আমলার নাম উল্লেখ করে জ্বালানি দুষ্কৃতিকারী ট্রাইবুনালে বিচারের দাবি করেন।  ড. আলমের মতে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে জ্বালানি-বিদ্যুৎ সেক্টরের চুরি, অপচয় রোধ করে দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত হলে উৎপাদন খরচ কমে যাবে। ফলশ্রুতিতে জ্বালানি বিদ্যুৎ মূল্য বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে না। অধ্যাপক আলম প্রয়োজনীয় প্রণোদনা দিয়ে দ্রুত নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করার তাগিদ প্রদান করেন। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশিনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সেখানে জবাবদিহিতার পরিবেশ সৃষ্টি করার তাগিদ দেন তিনি।

বিশেষ অতিথির ভাষণে শ্রেডার চেয়ারম্যান জ্বালানি দক্ষতা এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার সম্প্রসারণ বিষয়ে সংস্থাটির কার্যক্রম এবং সীমাবদ্ধতা বিষয়ে সবিস্তারে বর্ণনা দেন। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ দীর্ঘ সময় জ্বালানি মন্ত্রণালয় এবং পেট্রোবাংলায় কার্যকালে কিভাবে বিভিন্নভাবে তার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ সত্ত্বেও জ্বালানি সেক্টরে ভুল পরিকল্পনা হয়েছে বলে জানান। গ্যাস অনুসদ্ধানের কার্যক্রম ঢিমে তালে চলেছে, ক্ষমতার চেয়ে বেশি উত্তোলন করে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রে জ্বালানি স্তর ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে বলে জানান। জ্বালানি বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে সঠিক কার্যক্রম গ্রহণ বিষয়ে ভবিষ্যৎ কার্যক্রমের রূপ রেখা বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি।

প্রধান অতিথির ভাষণে জ্বালানি উপদেষ্টা জ্বালানি সেক্টরে বিপুল পরিমাণ বকেয়া পরিশোধ বিষয়ে তার অসহায়ত্বের কথা উল্লেখ করে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন। তিনি জানান সরকার দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ বিধান বাতিল করে জ্বালানি সেক্টরে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পথে হাঁটছে।  সকল ক্ষেত্রেই সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুঃখ প্রকাশ করে জানান অধিকাংশ উদ্যোক্তা প্রতিযোগিতা চায় না। নানাভাবে প্রভাবিত করতে চেষ্টা করে।

তিনি ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রিডে আনার পাশাপাশি সেখানে গ্যাসভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠানে প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলেন। ৫০ কূপ এবং ১০০ কূপ খননের বিষয়টিও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানান। গ্যাস ও বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করার তাগিদ দেন। তিনি জানান, গ্যাস বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির জন্য চাপের মুখে আছে সরকার। তবে যাই করা হবে সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে স্বচ্ছতার সঙ্গে মূল্য নির্ধারণ করবে বার্ক।

উপদেষ্টা জ্বালানি বিদ্যুৎ খাতে পূর্ববর্তী সময়ের সকল দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার সরকারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

কর্মশালায় উপস্থিত বিভিন্ন শিল্প উদ্যোক্তারা সাধারণ আলোচনায় জ্বালানি বিদ্যুৎ সঙ্কটের জন্য শিল্প কারখানা গুলোর করুন অবস্থা তুলে ধরেন। জানানো হয় যে অবিলম্বে যথাযথ কার্যক্রম গৃহীত না হলে অধিকাংশ ক্ষুদ্র, মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান এমনকি অনেক রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

উল্লেখ্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিকাশমান এলএনজি কোম্পানির সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘ মেয়াদে এলএনজি সরবরাহের জন্য নন বাইন্ডিং এমওইউ স্বাক্ষর করে।  সরকার ইতিমধ্যে স্থানীয় প্রতিষ্ঠান সামিট এনার্জির সঙ্গে সম্পাদিত তৃতীয় ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ চুক্তি বাতিল করেছে। আরও কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে এলএনজি আমদানি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × 1 =