অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার জয়

আট মাস আর আট ম্যাচ তীর্থের কাকের মত দীর্ঘ অপেক্ষার পর কাল কলম্বো খেত্তারমা স্টেডিয়ামে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে ১৬ রানে ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা অনলো বাংলাদেশ। টস জয়ী বাংলাদেশ প্রথম ব্যাটিং করে ২৪৮ চ্যালেঞ্জিং স্কোর করেছিল। নানা পর্যায়ে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে শ্রীলংকাকে কোনঠাসা করে ফেলেও জানিথ লিয়াঙের (৭৮) বীরত্বে আরো একটি পরাজয় বাংলাদেশকে চোখ রাঙ্গাচ্ছিলো। কিন্তু মেরাজের সঠিক বোলিং সম্পদ ব্যবহার আর তানভীর ইসলাম (৫/৩৯) এবং কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের ডেথ ওভার বোলিং দক্ষতায় ১৬ রানে জয় আসে বাংলাদেশের। ২৩২ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলংকা।

দিনটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের জন্য সোনার অক্ষরে লিখিত হবার দিন। এই দিনে ফুটবলে বাংলাদেশের সোনার মেয়েরা তুর্কমেনিস্তানকে ৭-০ গোলে বিপর্যস্ত করে এশিয়া কাপ চূড়ান্ত পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছে। বয়স ভিত্তিক হকিতে জিতেছে বাংলাদেশের পুরুষ আর নারী দল।

নভেম্বর ২০২৪ জুলাই ২০২৫। বাংলাদেশ তাদের প্রিয় ওডিআই ফরম্যাটে ৮ ম্যাচ খেলেছে। একটি ম্যাচ বৃষ্টি বিঘ্নিত হয়ে পরিত্যাক্ত হওয়া ছাড়া ৭ টি ম্যাচে পরাজয় বরণ করে বাংলাদেশ আইসিসি রাংকিংয়ে ১০ম স্থানে নেমে গেছে। নানা কারণে দলে নেই সোনালী প্রজন্মের ৫ কিংবদন্তি। মেহেদী হাসান মিরাজ এখন ওডিআই ক্রিকেটের সেনাপতি। সিরিজের প্রথম ম্যাচটিতেও সম্ভাবনা জাগিয়ে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের শোচনীয় ব্যার্থতার হেরেছে বাংলাদেশ।

কাল বাংলাদেশ দুটি পরিবর্তন নিয়ে নেমেছিল। সঠিক ছিল মারাত্মক ফর্ম হীন থাকা লিটন কুমার দাসকে পরিবর্তন করে শামীম হোসেনকে দলে নেয়া। তাসকিন আহমেদকে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে লোড ম্যানেজমেন্ট কৌশলের কারণে। শুরুতে গত খেলার ব্যাটিং নায়ক তানজিদ তামিম সহসা ফিরে গেলেও সক্রিয় ছিল পারভেজ ইমন। ভালো খেলে নিজের দ্বিতীয় ইনিংসে (৬৯ বলে ৬৭ রান) দলের ইনিংসের নিউক্লিয়াস ছিল। ভালো খেলছিল নাজমুল শান্ত। কিন্তু ইনিংসটি বড় করতে পারেনি। ইমন-হৃদয় জুটি ৩য় উইকেটে ৪৭ রান যোগ করে। জুটিটি আরো বড় হলে হয়তো বাংলাদেশের স্কোর ২৭৫-২৮০ হতে পারতো। মেহেদী মিরাজ ব্যাট হাতে আবারো ব্যার্থ হলেও জাকের আলী (২৪) আর শামীম হোসেন (২২) দুটি কার্যকরী ইনিংস খেলে। কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংস ২৪৮ পর্যন্ত পৌঁছানোর প্রধান কৃতিত্ব ইদানিং ব্যাট হাতে ক্রমাগত পরিণত হতে থাকা সাহসী তানজিম সাকিব (২১ বলে অপরাজিত ৩৩)। শ্রীলংকার হয়ে পেসার আসিথা ফের্নান্দো (৪/ ৩৫ ) এবং লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা  (৩/৬০) ছিল সফল বলার। গত ম্যাচের ব্যাটিং ধস ট্রমা থেকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো ছিল অর্জন।

২৪৮ রান কিন্তু খেত্তারামা স্টেডিয়ামের অতীত ইতিহাস বিবেচনায় কম স্কোর না। ঐতিহ্যগত ভাবে এই মাঠে দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনাররা বাড়তি সুবিধা পায়। অনেকের ধারণা কিছু ভৌতিক ঘটনা ঘটবে। কাল কিন্তু শুরুতে তানজিম সাকিব পাথুম নিশাঙ্কার উইকেট তুলে নেয়ার পর ঝড়ের গতিতে আগুয়ান হয়েছিল কুশল মেন্ডিস আর নিশান মাধুস্কা। ৯.৩ ওভারেই রান উঠেছিল ৭৫। পেস বা স্পিন কেউ সুবিধা পায়নি। এমনকি মুস্তাফিজের প্রথম চারটি বল থেকে বাউন্ডারি আদায় করে কুশল মেন্ডিস। তানভীরের এক ওভার থেকে আসে ১৭ রান। মেরাজ তানভীরের উপর ভরসা রাখে। নিজে আক্রমণে এসে রানের গতি কমিয়ে দেয়। দ্রুত মাধুস্কা আর মেন্ডিসের উইকেট তুলে নেয় তরুণ তানভীর। উইকেটে টার্ন দেখে মেরাজ শামীম পাটোয়ারীকে আক্রমণে আনে। শামীম গত ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান চরিথা আসালংকাকে (৬) উইকেটে সেট হওয়ার আগেই ফিরিয়ে দিলে ম্যাচ উন্মুক্ত হয়ে যায়। শামীম একটানা ৯ ওভার বোলিং করে মাত্র ২২ রান খরচ করে। শামীমকে কাজে লাগানোর কৃতিত্ব অবশ্যই মেরাজকেও দিতে হবে। অপরদিকে তানভীর উইকেটের সহায়তা কাজে লাগিয়ে চেপে ধরে লংকান লায়ন্সদের। ১৭০ রানে ৮ উইকেটের পতনের পর অনেকেই ধরে নেয় সহজ জয় পেতে চলেছে। কিন্তু উইকেটে থাকা একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান জানিথ লিয়ানাগে (৭৮) লেজের সারির ব্যাটসম্যান দুস্মন্ত চামিরাকে সাথী করে ৯ম উইকেট জুটিতে ৫৮ রান যোগ করে খেলায় আকর্ষণ সৃষ্টি করে। ঠিক এই সময় কাটার মাস্টার মুস্তাফিজ তার মূল অস্ত্র স্লোয়ার কাটার দিয়ে লিয়ানাগেকে বিভ্রান্ত করে ফিরিয়ে দেয়। অপরদিকে তানজিম শেষ উইকেট তুলে নিলে ১৬ রানে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। এই ম্যাচে বাংলাদেশের তিন স্পিনার ১৯ ওভার বোলিং করে ৯৮ রানের বিনিময়ে ৭ উইকেট তুলে নেয়া  ম্যাচের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট। দুই নবাগত পারভেজ ইমন আর তানভীর ইসলামের কৃতিত্ব ভূমিকা পালন করেছে। শেষদিকে তানজিম সাকিবের ঝড়ো ইনিংস বাংলাদেশকে লড়াই করার পুঁজি দিয়েছে।

সিরিজে এখন সমতা। তৃতীয় ম্যাচটি সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ করবে। দ্বিতীয় ম্যাচ জয় থেকে অর্জিত আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের সমূহ সম্ভাবনা থাকবে। নতুন প্রজন্মের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এগিয়ে যাক এটি কামনা করি। তবে মনে রাখতে হবে সিরিজ জেতার লাড়াই সহজ হবেনা।

শ্রীলংকা বাংলাদেশ ওডিআই সিরিজদ্বিতীয় ম্যাচ

বাংলাদেশ ২৪৮ (পারভেজ ইমন ৬৭, তাওহীদ হৃদয় ৫১, তানজিম সাকিব ৩৩*, জাকের আলী ২৪, শামীম হোসেন ২২, অসিথা ফের্নান্দো ৪/৩৫, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৩/৬০)

শ্রীলংকা ২৩২ (জানিথ লিয়াঙে ৭৮, কুশাল মেন্ডিস ৫৬, কামিন্দু মেন্ডিস ৩৩, তানভীর ইসলাম ৫/৩৯, তানজিম সাকিব ২/৩৪)

বাংলাদেশ ১৬ রানে জয়ী। সিরিজ পরিস্তিতি ১-১ সমতা

ম্যাচের সেরা: তানভীর  ইসলাম

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

five × 3 =