অভিনয়ের পাঁচ দশক পেরিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের আজীবন সম্মাননা পাওয়ার পর অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ বললেন, অভিনেতা হওয়ার কোনো স্বপ্ন ছিল না তার; একাত্তরে যুদ্ধ শেষে দেশে ফেরার পর ‘জোর-জবরদস্তি’ করে তাকে অভিনেতা বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
বক্তব্যে শেষে আসাদ বলে উঠেন, ‘জয় বাংলা, জয় জননেত্রী শেখ হাসিনা, জয় বাংলা’। এসময় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলে উঠেন ‘জয় বাংলা’।
বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-২০২০’-এর পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করেছে সরকার। সম্মাননা পাওয়ার পর নিজের অনুভূতি জানাতে মঞ্চে এসে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদ বলেন, “আমি এখানে এসে দাঁড়াতে পেরেছি, আজীবন সম্মাননায় সম্মানিত হচ্ছি কারণ একাত্তর সালে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল যার স্থপতি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ হত না। আমিও আজকে এই অভিনেতা হতে পারতাম না।”
“ত্রিশ লক্ষ শহিদ ও তিন লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বেদনা ও ঋণ বহন করা যুদ্ধফেরত আসাদকে জোর-জবরদস্তি করে অভিনেতা বানিয়ে দেওয়া হলো, যার স্বপ্ন সে কোনোদিন দেখেনি, চিন্তাও করেনি।৭২ এ মঞ্চ, টেলিভিশন, বেতার, ৭৩ এ চলচ্চিত্র, দেখতে দেখতে ৫০ বছর পার। যারা ঠেলা- ধাক্কা দিয়ে এ পর্যন্ত নিয়ে এসেছে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।”
অভিনয়শিল্পী হওয়ার পেছনে সহযোদ্ধা, সংবাদ পাঠক ও আবৃত্তিকার সোহেল সামাদকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করলেন আসাদ। তিনি জানান, একাত্তরের ডিসেম্বরে বিজয়ের পর ঢাকায় এক সাংস্কৃতিক আয়োজনে অনেকটা জোর করে তার কণ্ঠ ব্যবহার করেছিলেন সোহেল। সেই শুরুর পর আজও সংস্কৃতি অঙ্গনে পথচলা অব্যাহত রেখেছেন তিনি।
তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান ‘ঘুড্ডি’ ‘লাল সালু’ চলচ্চিত্রের অভিনেতা। এরপর নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন রচিত ‘চর কাঁকড়ার ডকুমেন্টারি’ নাটক থেকে সংলাপ পাঠ করেন তিনি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফেরার পরের বছর ১৯৭২ সালে মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনয়ের ক্যারিয়ার শুরু করেন আসাদ; পরের বছর বড়পর্দায় আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদের জন্ম ১৯৫৪ সালের ১৫ জুলাই; ঢাকার পুরানা পল্টনে। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিডিনিউজ