অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণ

নীলাঞ্জনা নীলা

‘এমন সাজে আমার বউ না আসলে বিয়েই বাতিল’ সম্প্রতি এমন সব ক্যাপশন দিয়ে শেয়ার দেওয়া হচ্ছে অভিনেত্রী তাসনিয়া ফারিণের বিয়ের ছবি। যোগাযোগমাধ্যমে তাসনিয়া ফারিণের বিয়ের ছবি কয়েক মিনিটের মধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ফারিণকে দেখা গেছে বাঙালিয়ানা সাজ ও পোশাকে। তবে সাজ ও পোশাক দেখতে সাধারণ হলেও এর পেছনে ছিল অনেক শ্রম। তাই এটা ভেবে একদমই ভুল করা যাবে না যে সাধারণ মানে সবসময় সাশ্রয়ী। বিয়ের দিন ফারিণকে দেখা যায় লাল জামদানি শাড়িতে। যুগের সাথে তাল না মিলিয়ে ফারিণ গুরুত্ব দিয়েছেন তার নিজস্বতাকে। ফারিণের বিয়ের শাড়িটি তৈরি করেছেন নব ঢাকা। এই শাড়িটি তৈরি করতে সময় লেগেছে প্রায় এক বছর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সে শাড়ি মন কেড়েছে ফারিণের অনুরাগীদের। যে শাড়ি তৈরি করতে সময় লেগেছে এক বছর তাতে কোনো সন্দেহ নেই কত নিখুঁতভাবে তৈরি তা।

সাজেও ছিল স্নিগ্ধতার ছোঁয়া। ফারিণ করেছিলেন ‘নো মেকআপ মেকআপ লুক’। দেখে মনে হবে, চোখে কাজল ছাড়া বুঝি আর কিছুই দেওয়া হয়নি। আসলে তা নয় এমন ন্যাচারাল মেকআপ লুক আনতে একজন মেকআপ আর্টিস্টকে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়। ফারিণের মেকআপের দায়িত্বে ছিলেন ব্রাইডাল মেকআপ আর্টিস্ট জাহিদ খান। বিয়ের সাজ কেমন হবে তা নিয়ে জাহিদ খানের সাথে বেশ আগে থেকেই আলোচনা করে নিয়েছিলেন ফারিণ। জাহিদ খান গণমাধ্যমকে জানান, স্কিন টোনের পরিবর্তন না করে বেজ ঠিক রাখা খুব সহজ কথা না বরং অনেক ভারী মেকআপ থেকে এটি বেশ কঠিন। এই কঠিন কাজটা জাহিদ খান বেশ দক্ষতার সাথে করে ফারিণের বিয়ের লুক তৈরি করেছেন।

হঠাৎ ফারিণের বিয়ের খবরে সবাই বেশ অবাকই হয়। কারণ ৮ বছর ধরে দক্ষতার সাথে নিজের প্রেমের কথা লুকিয়ে রেখেছেন তিনি। যেখানে এখন মিডিয়ার প্রেম ও বিয়ে মানেই কাদা ছোড়াছুড়ি। ঠিক সেই সময়টায় এসে ফারিণ যেন স্রোতের বিপরীতে হেঁটেছেন। সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার এই জেনারেশনে ফারিণ প্রমাণ করেছে খুব জোরে সবাইকে না জানিয়ে নিজেদের মতো শান্ত থাকা যায়। তাই তো ফারিণ নিজের বিয়ের ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘আমি তোমার মাঝে শান্তি খুঁজে পেয়েছি। বাইরের কোলাহল থেকে দূরে আমরা নিজেদের একটা জগত তৈরি করেছি।’ ফারিণের এই ব্যাপার থেকে সকলের অনেক কিছু শেখার আছে। ফারিণ বরাবর চুপচাপ শান্ত প্রকৃতির মেয়ে হলেও তাকে নিয়ে কম আলোচনা সমালোচনা হয়নি।

এই তো কিছুদিন আগে সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসানের সাথে তার প্রেমের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অনেকে তো আবার বলেছেন তারা নাকি গোপনে বিয়েও করে ফেলেছেন। ফারিণ এই ব্যাপারটায় কিন্তু রেগেই গিয়েছিলেন। নিজের ভেরিফায়েড পেইজ থেকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন, সেই স্ট্যাটাসের মূল কথা ছিল, সাংবাদিকদের তিনি শ্রদ্ধা করেন তবে তাদের মনগড়া নিউজ দেখে তিনি আহত হয়েছেন। পরবর্তীতে মিডিয়ার সামনে তাকে এই ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন করলে তিনি জানিয়েছেন এ ব্যাপারে তিনি কোনো কথা বলতে চান না, যা বলার তিনি স্ট্যাটাসে বলে দিয়েছেন। এই ঘটনার পর বোঝা গিয়েছে ফারিণ বেশ স্পষ্টবাদী। সোস্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়া এ গুজব ভালোভাবেই সামলে নিয়েছিলেন তিনি।

বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে মালদ্বীপ ঘুরতে যান ফারিণ। বেশ সুন্দর সময় কাটিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। ইচ্ছে না থাকার পরেও কাজের ব্যস্ততার জন্য দেশে দ্রুত দেশে ফিরে আসতে হয়েছে। তবে তিনি জানান, বিয়ের পরেও নিজের জীবনে খুব বড় কোনো বদল এখনো লক্ষ্য করেননি। কাজ ও ব্যস্ততায় সময় কেটে যাচ্ছে। ফারিণের ধারণা বিয়ের পর তার ভক্ত আরো বেড়েছে। বিয়ের ছবিতে ভক্তদের সাড়া দেখে তিনি বেশ আনন্দিত হয়েছেন। ফারিণের মতে তারাই আসলে ভক্ত যারা প্রিয় মানুষের ভালো কাজে পাশে থাকবে ও শুভেচ্ছা জানাবে।

ফারিণের স্বামী শেখ রেজওয়ান কে, এই নিয়েও তার ভক্তদের আগ্রহের শেষ ছিল না। জানা গেছে শেখ রেজওয়ান এখন যুক্তরাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেটা সায়েন্সে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। ফারিণের খুব অল্প কয়েকজন ঘনিষ্ঠ মানুষ ছাড়া কেউ শেখ রেজওয়ান কথা জানতেন না। প্রেমিককে কখনো প্রকাশ্যে আনেননি তিনি। সাড়ে আট বছর ধরে রেজওয়ানের সঙ্গে প্রেমের পর বিবাহবন্দনে আবদ্ধ হলেন তারা। হাজারো মানুষের কাছে পরিচিত পাওয়ার আগে থেকে ফারিণের সাথে মন দেওয়া নেওয়া হয়েছিল রেজওয়ানের।

ফারিণ মিডিয়াতে পা দেয়ার অল্প দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন। ইউটিউবে ফারিণের নাটকে লাখ ভিউ ছাড়িয়ে যাওয়া দেখলেই তা বোঝা যায়। ‘আমরা আবার ফিরবো কবে’ নাটকে অভিনয় দিয়ে ছোট পর্দায় পা রাখেন তিনি, নাটকটি ২০১৭ সালে রিলিজ হয়েছিল। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’ ওয়েব সিরিজের ‘সাবিলা’ চরিত্রে সাড়া ফেলেছিলেন তিনি। নাটক ছাড়াও ওয়েব সিরিজে কাজ করে যাচ্ছেন সমানতালে। ওয়েব সিরিজে কাজ করার ক্ষেত্রে ফারিণ অনেক বাছাই করে কাজ করেন। কারণ আজকাল ওয়েব প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয় হবার কারণে সেই মাধ্যমে তাকে খুব সহজে বিচার করবে দর্শক। প্রচুর নাটক ও ওয়েব সিরিজের প্রস্তাব পেলেও পছন্দ না হলে ফিরিয়ে দেন তাদের। কারণ ফারিণ এখন কোয়ালিটির দিকটা বেশি বিবেচনায় রাখছে। ‘নেটওয়ার্কের বাইরে’, ‘ট্রল’, ‘তিথির অসুখ’, ‘বিড়াল তপস্যা’ ও ওয়েব সিরিজ ‘লেডিস অ্যান্ড জেন্টলম্যান’ তার ক্যারিয়ারে মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। তার জনপ্রিয় কিছু নাটকের মধ্যে ছিল ‘তারে বলে দিও’, ‘কমলা রঙের রোদ’, ‘রোমিও জুলিয়েট’, ‘মন দরিয়া’, ‘মেইড ফর ইচ আদার’, ‘আপন’, ‘মায়ের ডাক’, ‘২১ বছর পরে’, ‘বাবা তোমাকে ভালোবাসি’, ‘রিভেঞ্জ’ ইত্যাদি। ন্যাচারাল অভিনয়ের জন্য তিনি বরাবর ভক্তদের ভালোবাসা অর্জন করেছে।

ফারিণের ব্যক্তিজীবন নিয়ে কথা বলতে গেলে বরাবরই লক্ষ্মী মেয়ে বলেই পরিচিত সবার কাছে। একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার মায়ের ছোটবেলায় তাকে পালতে খুব একটা কষ্ট হয়নি। কারণ তিনি সবসময় মায়ের বাধ্য মেয়ে ছিলেন। খেতে বললে খেতেন, ঘুমাতে যেতে বললেন ঘুমাতেন। মায়ের উৎসাহে অভিনয়ে আসা। ছোটবেলা থেকেই তিনি নাচ ও গান শিখতেন। ফারিণ মানুষকে বিচার করেন তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে, তিনি মনে করেন একজন মানুষের আসল পরিচয় লুকিয়ে থাকে তার ব্যক্তিত্বের মধ্যেই। যারা মানুষের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব আনতে পারেন তাদের সাথে থাকতে তার ভালো লাগে। তবে ফারিণের বন্ধু কম, কারণ তিনি নিজের মতো থাকতে ভালোবাসেন। নিজের সাথে সময় কাটাতে তিনি সবচেয়ে ভালোবাসেন। সময় পেলেই একা একা ঘুরতে বের হন তিনি। একা একা শপিং করা তার সবচেয়ে প্রিয় কাজ। খুব খাদ্যরসিক না হলেও তিনি নতুন নতুন খাবার ট্রাই করতে ভালোবাসেন, সবসময় নতুন রেস্টুরেন্টের খোঁজে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়াতে খুব কম এক্টিভ ফারিণ। তার মনে হয় এতে প্রচুর সময় নষ্ট হয়, কে কি কমেন্ট করলো, কে কি মেসেজ দিল, অনেক সময় অনেক কিছু দেখলে পুরো দিনের জন্য মন খারাপ হয়ে যায়। এই সময়টা নষ্ট না করে তিনি পরিবারের সাথে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে তিনি বিবিএ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। আগামীতে নিজেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেকে দেখতে চান। তিনি বড় বড় স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন। কারণ মানুষের স্বপ্ন তাকে বহুদূর নিয়ে যায়।

ফারিণ খুব সাদামাটা থাকতে ভালোবাসেন। মিডিয়াতে আসার আগে তিনি তেমন মেকআপই করতেন না। কাজের প্রয়োজনে মেকআপ করলেও তিনি তা করতে পছন্দ করেন না। কোথাও হুটহাট বের হলে তিনি মেকআপ ছাড়াই বের হন। তিনি স্কিনের যত্ন বলতে মেকআপটা খুব ভালোভাবে তোলেন। শুটিং শেষে রাতে বাড়ি ফিরে আলসেমি চেপে ধরলেও মেকআপ না তুলে তিনি ঘুমাতে যান না। স্কিনে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। পোশাকের ক্ষেত্রে ফারিন আরামকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেন, খুব জমকালো পোশাক তার পছন্দ না। সুতি ও খাদির পোশাক সবচেয়ে বেশি পরা হয়।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সেলিব্রেটি

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

sixteen − 8 =