অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশের কিশোরীরা সাফ অনুর্ধ ২০ শিরোপা অক্ষুন্ন রাখলো

ভারত না আসায় এবারের সাফ অনুর্ধ ২০ মেয়েদের চ্যাম্পিয়নশিপ চার দল (বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা) রাউন্ড রবিন পদ্ধতিতে হয়েছে। কাল ছিল দুই শীর্ষ দল বাংলাদেশ নেপালের মধ্যে অঘোষিত ফাইনাল। বৃহস্পতি এখন বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবলে তুঙ্গে। সম্প্রতি এশিয়া পর্যায়ে খেলার সুযোগ পেয়ে উড়ছে পিটার বাটলার শিষ্যরা। সদ্য শেষ হওয়া টুর্নামেন্ট জয় করবে সেটি অনুমিত ছিল। ৫ খেলায় প্রতিটি জিতে ১৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করা বাংলাদেশ কাল নেপালের বিরুদ্ধে ড্র করলেই যথেষ্ট ছিল। নেপাল কিন্তু টুর্নামেন্ট জুড়ে গোল প্লাবন বইয়ে দিয়েছে। কাল সেই নেপাল দলকেই ৪-০ গোলের বিশাল ব্যাবধানে হারিয়ে শিরোপা অক্ষুন্ন রেখেছে বাংলার মেয়েরা। যেভাবে সাগরিকা, তৃষ্ণা, কৃষ্ণা, মুনকি, আফাইদারা খেলেছে ভারত আসলেও ভিন্ন কিছু হতো বলে মনে হয় না।  নেপালের বিরুদ্ধে প্রথম খেলায় সাগরিকাকে লাল কার্ড দেয়ার পর তিন ম্যাচ খেলতে পারেনি। কাল সুযোগ পেয়েই সুযোগ সন্ধানী সাগরিকা একাই ৪ গোল করেছে অসামান্য দক্ষতায়। বাংলাদেশ আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিয়ে দাঁড়াতেই দেয়নি নেপাল দলকে। পূর্ণিমারা বাংলাদেশ রক্ষণ ভাগে খুব একটা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারেনি। বাংলাদেশের সামনে সুযোগ ছিল আরো বড় ব্যাবধানে জয়ী হওয়ার। ভালো লেগেছে অধিনায়ক আফাইদা ম্যাচ শেষে বলেছে কাল শোক কাতর হয়ে বাংলাদেশ দল প্রত্যয় নিয়ে ম্যাচ খেলেছে। জয় উৎসর্গ করেছে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত আহত শিশু কিশোরদের উদ্দেশে।

মানতেই হবে বাংলাদেশের মেয়ে ফুটবলদের ফুটবলে গুণগত উৎকর্ষ এসেছে। ফুটবলের মৌলিক কৌশলগুলো ভালোমত রপ্ত করার পাশাপাশি কৌশলগত দক্ষতা অর্জন করেছে। খাটো পাস, লম্বা পাস, উইং ব্যবহার করে খেলা, ক্ষনে ক্ষনে কৌশল পাল্টানো, দূর পাল্লার, খাটো পাল্লার গোল মুখী স্ট্রাইক সব কিছুতেই মুন্সিয়ানার ছাপ আছে। ৯০ মিনিট একই ধারার খেলার শারীরিক সক্ষমতা আছে। এই দলকে এখন দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে নিয়মিত খেলতে হবে। এখন বাংলাদেশের লক্ষ্য নবীন প্রবীনের সংযুক্তিতে শক্তিশালী দল গঠন করে এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের প্রমান করার।

বিশেষ করে চোখে পড়েছে দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের নিজেদের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করার মানসিকতা। প্রতিপক্ষ অনুযায়ী নিজেদের মানিয়ে নেয়া। অল্প সময়ে ৬ ম্যাচে বাটলার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সবাইকে সুযোগ দিয়ে যাচাই করেছেন। এই দলটিকেই নিউক্লিয়াস করে রূপনা, ঋতুপর্ণা, মারিয়ার সঙ্গে বিদ্রোহীদের কয়েকজনকে সংযুক্ত করে এখন থেকেই পরিকল্পনা সাজাতে হবে বাংলাদেশকে। ফিফা জানালা ব্যবহার করে কয়েকটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে হবে। একই সঙ্গে বিজয়ী মেয়ে ফুটবলারদের প্রতিশ্রুত প্রণোদনা দিতে হবে। দেশে চার বা ছয় দল নিয়ে লীগ অবিলম্বে চালু করতে হবে। দুঃখের বিষয় ভুটান, মালদ্বীপ মেয়েদের লীগ নিয়মিত করতে পারলেও বাংলাদেশ পারছে না। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়া কাপে কিছু ম্যাচ জয় করতে পারলে বিশ্ব কাপে খেলার সুযোগ পাবে।

পরিশেষে বলবো পিটার বাটলার একজন দক্ষ কোচ। বাংলাদেশের মেয়েদের ভালো মত বুঝতে পেরেছেন। দলে এখন অনেক বিকল্প আছে। দলের সংহতি এবং শৃঙ্খলা দলকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

9 − 7 =