সালেক সুফী
সবুজ ঘাসে ঢাকা বাউন্সি পার্থ উইকেট কাল দেখেছে বিশ্বমানের পেস বোলিং দাপট। টস জয়ী হয়ে ব্যাটিং বেছে নেয়া ভারত হেজেলউড ,স্টার্ক ,মার্শের দাপুটে পেস আক্রমণে ১৫০ রানে গুটিয়ে যাবার পর বুমরাহ ,সিরাজ কঠিন জবাব দিয়ে ৬৬/৭ কোনঠাসা করে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়াকে। ঠিক যেন ইটের জবাবে পাটকেল। কেউ কারো নাহি ছারে সমানে সমান। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বর্তমান পর্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে ১৭ উইকেটের পতন একটি নতুন মাইল ফলক. বর্তমান অবস্থায় বলা যায় ভারত এগিয়ে আছে. প্রথম ইনিংসে লিড পেলে হয়ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতেই থাকবে। কিন্তু দুই সমান শক্তির দলের লড়াইয়ে ম্যাচের এই অবস্থায় অন্তত দ্বিতীয় দিনের খেলা না দেখে আগাম বলা সঠিক হবে না. দিনশেষে অস্ট্রেলিয়া ৩ উইকেট হাতে নিয়ে এখনো ৮৩ রানে পিছিয়ে আছে. উইকেটে এখনো যথেষ্ট পেস বাউন্স আছে। ল্যাটেরাল মুভমেন্ট আছে. আর দুই দলে আছে ফর্মে থাকা বিশ্বমানের পেস বলার।
ভারত এই টেস্টে হার্শিত রানা আর নীতিশ কুমার রেড্ডিকে অভিষেক করিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া দলে অভিষিক্ত হয়েছে নাথান মাকুইনি। উইকেটে সবুজ ঘাস. আইকনিক টেস্ট ওপেনার রোহিত শর্মা ব্যাক্তিগত কারণে অনুপস্থিত। তবু কেন টস জয় করে অস্ট্রেলিয়ার তুখোড় পেস আক্রমণের মোকাবেলায় ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জাসপ্রিত বুমরা প্রশ্ন জাগতেই পারে। শুরুতেই মিচেল স্টার্ক ,যশ হ্যাজেলউড বোলিং বান্ধব উইকেটে ভারত ব্যাটিং মেরুদন্ড ভেঙে দেয় কঠিন লেংথে বোলিং করে। জয়সোয়াল ,প্যাডিক্যাল ,কোহলী ,জুৱেল কেউ দাঁড়াতেই পারে নি অস্ট্রেলিয়ান পেসারদের দাপুটে আক্রমণের মোকাবেলায়। গুড লেংথ থেকে লাফিয়ে ওঠা দুর্দান্ত বলে কোহলিকে ফিরিয়ে দিয়ে মোক্ষম আঘাত হেনেছিল হেজেলউড। কে এল রাহুল সংগ্রাম করছিলো। স্টার্কের বলে কট বিহাইন্ড সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্বিধা ছিল. ৭৩ রানে ৬ উইকেট হারানোয় ১০০ রানের নিচে উইকেট গুটিয়ে যাওয়ার শংকা জেগেছিলো। একই লড়াই চালিয়েছিল ঋষভ প্যান্ট। অভিষিক্ত নীতেশ কুমার সাহসী ছিল. ওদের যোগাযোগে ৪৮ রান যোগ হবার হবার পর নতুন স্পেলে এসে অধিনায়ক পাট কামিন্স প্যান্টকে ফিরিয়ে দিলে ভারত ইনিংস সামাল দেয়ার মত কেউ ছিল না. ১৫০ রানে গুটিয়ে যায় ভারত। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে কাল সফল বলার ছিল জোশ হ্যাজেলউড ( ৪/২৯) .শুরুতে স্টার্ক (২/১৪) এবং এক পর্যায়ে মিচ মার্শ (২/১২) দ্রুত আঘাত হেনে উইকেট যজ্ঞে শামিল হয়েছিল।
ভারত কিন্তু স্বল্প পুঁজি নিয়েও ভড়কে যায় নি. জাসপ্রিত বুমরার আগ্রাসী বোলিংয়ের মোকাবিলায় নবীন নাথান মাকুইনির অভিষেক মধুর হয় নি. এমনকি উসমান খোয়াজা ,স্টিভ স্মিথ দাঁড়াতেই পারেনি বুমরার পেস বাউন্সের মোকাবেলায়। ৭ ওভারেই ১৯ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়া রীতিমত কাঁপছিলো। বুমরার সঙ্গে আগ্রাসী বোলিং করছিলো সিরাজ আর হার্সিত রানা। উইকেটে বোলারদের নিয়ন্ত্রণ এতো একছত্র ছিলো যে ৫২ বল খেলেও লাবুচ্যাং মাত্র করেছে ২ রান. মিচেল মার্শ ,ট্রাভিস হেড কেউ কিছুই করতে পারে নি. দিনশেষে ৬৭ রানে ৭ উইকেট হারানো অস্ট্রেলিয়া ১০০ রান করতে পারবে কিনা সন্দেহ। অথচ ভারত ইনিংস শেষে অনেকেই ভেবেছিলো খেলার নিয়ন্ত্রণ হয়তো অস্ট্রেলিয়া নিয়ে নিয়েছে। দুর্দান্ত বোলিং করা জাসপ্রিত বুমরাকে (৪/১৭) কাল সামাল দিতে হিমশিম খেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। সিরাজ (২/১৭) ছিল যোগ্য সাথী।
আজ দ্বিতীয় দিন সকালে দুটি ঘটনা হতে পারে। হয় চট জলদি অস্ট্রেলিয়া ইনিংস গুটিয়ে দিয়ে ভারত ব্যাটিং করে এগিয়ে যাওয়া না হয় আলেক্স কারী অস্ট্রেলিয়ার লেজের সারির বাটসমেনদের নিয়ে ঘাটতি কমানো। যাই হোক শেয়ানে শেয়ানে লড়তে থাকা এই টেস্ট কেউ কারো ছেড়ে দিবে না বলাই বাহুল্য। দুই বিশ্বমোড়ল মুখোমুখি লড়াই সূচনায় জমে উঠেছে।