অ্যামট্রেক অ্যাসেলা’র জানালায়

শিব্বীর আহমেদ: অনেকদিন হলো অ্যামট্রেকে চড়া হয় না। চড়ব চড়ব কোথাও যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়নি অনেকদিন। কিন্তু কোথাও যেতে চাই অ্যামট্রেকে চড়ে। তাছাড়া ম্যানহাটনে অ্যামট্রেকের নতুন স্টেশন ‘ময়নিহান ট্রেন হল’ উন্মুক্ত করা হয়েছে। সেটিও দেখার খুব শখ। কিন্তু কোনভাবেই যেন হয়ে উঠছিল না। প্রায় ছয় মাস দেশে থেকে মাত্র অল্প কিছুদিন হলো যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছি। দেশ থেকে ফিরে এবার বেশির ভাগ সময়ই নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছি লেখক-সাংবাদিক আকবর হায়দার কিরন ভাইয়ের সাথে তার বাসায়। কিরন ভাইয়ের সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। একজন আরেকজনকে দাদু হিসেবে সম্বোধন করি। তিনি আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন, বন্ধুর মতো করে চলাফেরা করেন, ভালোবাসেন।

আড্ডা দিচ্ছিলাম সাকিলের গ্রাফিক্স ডিজাইনে। হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠল। ওয়াশিংটনে যাবার ডাক। দীর্ঘদিনের সহকর্মী সাদেক খান, জুয়েল বড়ুয়া ও জি আই রাসেল সবাই মিলে ওয়াশিংটন যাবার জন্য অনুরোধ করল। ভাবলাম এই সুযোগ। অ্যামট্রেকে চড়েই ওয়াশিংটন যাব। এতে যেমন ট্রেনে ভ্রমণ করা হবে তেমনি নতুন ময়নিহান স্টেশন ট্রেন হল দেখা হবে। ওদেরকে বললাম আসবো অ্যামট্রেকে চড়ে। টিকেট কিনবার পর কবে কখন কোথায় জানিয়ে দিব। টিকেট খুঁজতে শুরু করলাম। কিন্তু দরদামে যেন বনছিল না। টিকেটের আকাশ ছোঁয়া মূল্য। অনলাইনে প্রতিদিনই খুঁজি টিকেট। খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ করেই টিকেট পেয়ে গেলাম। কেটে ফেললাম সাথে সাথেই। ই-টিকেট ইমেইলে আসতেই দেখি আজই দুইটায় ট্রেন ছেড়ে যাবে ময়নিহান হল থেকে। হাতে বেশি সময় নেই। কুইন্সের উডসাইড থেকে ম্যানহাটন যেতে হবে। পথে ট্রাফিক হবে।

দেরি না করে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলাম। ব্যাগ গুছিয়ে উবার কল করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসার সামনে চলে এল উবার। কিরন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে উবারে উঠে বসলাম। ঘড়ির দিকে তাকাতেই টেনশন বেড়ে গেল। প্রায় সোয়া একটা। ট্রেন দ্ইুটায়। ট্রাফিক জ্যামে পড়ে ট্রেন না আবার মিস হয়ে যায়। কুইন্স ব্লুভার্ড দিয়ে হাইওয়ে ২৭৮ ব্রুকলিন কুইন্স এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে মিডটাউন টানেলের উদ্দেশে ছুটে চলেছে উবার। ইস্ট রিভার পাড়ি দিয়ে ম্যানহাটনে ঢুকতেই প্রচণ্ড জ্যামে পড়ে গেলাম। টেনশন আরো বেড়ে গেল। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি একটা চল্লিশ। বিশ মিনিট সময় আছে। দোয়া দরুদ পড়তে শুরু করলাম। একটা পঞ্চাশে ড্রাইভার আমাকে পুরাতন পেন স্টেশন সেভেন্থ এভিনিউ ৩২ স্ট্রিটের গেটে নামিয়ে দিল। দ্রুত নেমে পড়লাম গাড়ি থেকে। তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে টেনশনে ভুলেই গেছি পেন স্টেশনে নয়, যেতে হবে অ্যামট্রেকের নতুন ময়নিহান ট্রেন হল-এ। ওটা এইটথ্ এবং নাইনথ্ অ্যাভিনিউর মাঝে। পুরাতন পেন স্টেশনের সামনে দাঁড়ানো এক আফ্রিকানকে জিজ্ঞাসা করতেই সেও জানিয়ে দিল পরবর্তী ব্লকে অ্যামট্রেকের নতুন স্টেশন ময়নিহান ট্রেন হল। ব্যাগ নিয়ে মাটির নিচ দিয়ে পুরাতন পেন স্টেশনের ভিতর দিয়েই ছুটতে শুরু করলাম। বের হয়ে এলাম এইটথ্ এভিনিউ ৩১ স্ট্রিটের কর্নারে। বের হতেই চোখে পড়ল রাস্তার অন্যপাশে অ্যামট্রেকের নতুন ময়নিহান ট্রেন হল-এর সাইন। রাস্তা পার হয়ে দ্রুত ঢুকে পড়লাম স্টেশনের ভিতরে। ভাগ্য ভালো স্টেশনে প্রবেশ করতেই একজন কর্মকর্তার দেখা মিলল। টেলিফোনে ই-টিকেট দেখাতেই সে আমাকে ১৫/১৬ নাম্বার ট্র্যাকের চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে যেতে বলল। ট্রেন ওখানেই ১৬ নাম্বার ট্র্যাকে দাঁড়িয়ে আছে। হাত ঘড়ির দিকে তাকালাম। কয়েক মিনিট সময় আছে। স্বস্তি ফিরে এলো মনে। চারিদিকে ডিজিটাল বোর্ডের ছড়াছড়ি এবং প্রতিটি ডিজিটাল স্ক্রিনেই ট্রেনের যাবতীয় তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। যাত্রীরাও দেখে নিচ্ছে তাদের ট্রেনের বিভিন্ন তথ্য।

আমেরিকান রাজনীতিবিদ, সমাজবিজ্ঞানী এবং কূটনীতিক ড্যানিয়েল প্যাট্রিক ময়নিহান-এর নামে নামকরণ করা হয়েছে পেন স্টেশনের নতুন হল ‘ময়নিহান ট্রেন হল’। যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম গোলার্ধের ব্যস্ততম ট্রানজিট ম্যানহাটনের পেন স্টেশন। নিউ ইয়র্ক এবং উত্তর-পূর্বের পরিবহন নেটওয়ার্কের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোর মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচিত এই পেন স্টেশন। পেন স্টেশনের নতুন সংস্করণ ‘ময়নিহান ট্রেন হল’ প্রকল্প যার মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে ট্রেন যাত্রীদের অনেক সমস্যা। নিউ ইয়র্কে প্রতিদিন আগত যাত্রীদের স্বাগত জানাতে, ময়নিহান ট্রেন হল একটি দুর্দান্ত কেন্দ্রস্থল যা পেন স্টেশনকে হাডসন ইয়ার্ডস, ম্যানহাটনের সুদূর পশ্চিম দিকে এবং তার বাইরে সংযুক্ত করেছে। ময়নিহান ট্রেন হল শহরের নতুন গ্র্যান্ড সিভিক আইকন। ১.৬ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পটি ১০০+ বছরের পুরোনো জেমস এ. ফারলে পোস্ট অফিস ভবনকে একটি আধুনিক, বিশ্বমানের ট্রানজিট হাব-এ রূপান্তরিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রয়াত সিনেটর ড্যানিয়েল প্যাট্রিক ময়নিহান ২৫ বছর আগে এর প্রস্তাব করেছিলেন।

চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম। যাত্রীরা তাদের নির্দিষ্ট ট্রেনের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। দ্রুত কয়েকটা ছবি তুললাম। নির্দিষ্ট সিঁড়ি বেয়ে মাটির অনেক গভীরে ট্র্যাক ১৬-এ দাঁড়ানো অ্যামট্রেক অ্যাসেলা ২১২১ ট্রেনে উঠে বসলাম। নির্দিষ্ট বগির নির্দিষ্ট সিট খুঁজে পেতে দেখলাম জানালার পাশে সিট। বেশ ভালো লাগল। প্রকৃতি আর আকাশ দেখতে দেখতে ওয়াশিংটন চলে যাব।

নির্দিষ্ট সময়ে অ্যাসেলা ট্রেন ছেড়ে দিল। মাটির নিচ দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে হাডসন নদীর নিচে টানেলের ভিতরে প্রবেশ করল। হালকা একটা ঠান্ডাস্রোত বয়ে গেল শরীর দিয়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাটি ফুঁড়ে বের হয়ে এলো নিউ জার্সিতে। ধীরে ধীরে থেমে পড়ল ট্রেন। ট্রেন লাইনে সিগনাল কাজ করছে না বলে ঘোষণা এলো ট্রেন কন্ডাক্টরের কাছ থেকে। তবে বেশিক্ষণ লাগল না। সিগনাল কাজ শুরু করতেই আবারো ছুটতে শুরু করল ট্রেন। নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন ডিসি প্রায় ২০৫ মাইল। এই ২০৫ মাইল পাড়ি দিতে অ্যামট্রেক অ্যাসিলা ট্রেনের সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা। তবে যান্ত্রিক বা টেকনিক্যাল কারণে যদি দেরি হয় তাহলে এই সময় বেড়ে যেতে পারে।

ট্রেনের মাইকে ঘোষণা এলো টিকেট চেকার আসবে। সবাই যাতে নিজ নিজ টিকেট এবং আইডি প্রস্তুত রাখে। কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকেট চেকার সব যাত্রীদের টিকেট ডিজিটাল ডিভাইসে স্ক্যান করে এক কম্পার্টমেন্ট থেকে আরেক কম্পার্টমেন্টে চলে গেল। অ্যামট্রেক অ্যাসেলাতে মোট ছয়টি কার/বগি বা কম্পার্টমেন্ট থাকে। এছাড়া আছে দুইদিকে দুইটি ইঞ্জিন। ইঞ্জিনের পর প্রথম কারটি প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের জন্য। দ্বিতীয়, তৃতীয়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ কার বিজনেস ক্লাস যাত্রীদের জন্য নির্ধারিত। চার নম্বর কারটি অ্যাসেলা ক্যাফে। এখানে যাত্রীদের জন্য চা কফি পানীয় সহ নানা রকম খাবার বিক্রি করা হয়। খাবার কিনে ক্যাফেতে বসেই খাওয়া যায় অথবা নিজের সিটে নিয়ে আসা যায়। প্রতিটি বগিতেই রয়েছে বাথরুম। রয়েছে লাগেজ রাখার ব্যবস্থা। অ্যামট্রেক অ্যাসেলার নিজস্ব ওয়াইফাই রয়েছে। ট্রেনে বসেই অফিস বা অন্যান্য কাজ নিজের ল্যাপটপে করা যায়।

চলতে চলতে ট্রেন নিউ জার্সির নিউওয়ার্ক পেন স্টেশনে এসে থেমে পড়ল। যে সকল যাত্রী নিউওয়ার্কের পেন স্টেশনে নামার তারা সবাই নেমে গেল। নতুন যাত্রী নিয়ে আবারো ট্রেন ছুটে চলল ফিলাডেলফিয়া পেনসালভেনিয়ার উদ্দেশে। নিজের সিটে বসে জানালা দিয়ে প্রকৃতির রূপ আর আকাশ দেখতে লাগলাম মুগ্ধ হয়ে। একের পর এক দৃশ্য আর লোকাল ট্রেন স্টেশন পিছনে ফেলে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে অ্যামট্রেক অ্যাসেলা ২১২১। মাঝে মধ্যেই অন্যদিক থেকে আসা এনজে ট্রেন, নর্থ রিজিওনাল ট্রেন ছুটে যাচ্ছে নিউ ইয়র্কের দিকে। এছাড়া লোকাল স্টেশনগুলোও যেন এসেই হারিয়ে যাচ্ছে দৃষ্টিসীমার বাইরে। কিছুক্ষণ পরপরই রেলওয়ের মেরামত কারখানা চোখে পড়ল। প্রায় ৩০ মিনিট পর ট্রেন এসে থেমে গেল ফিলাডেলফিয়া স্টেশনে। যাত্রীদের উঠানামা শেষ হতেই আবারো যাত্রা শুরু হলো পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশে।

দ্রুতগতির বিদ্যুৎচালিত ট্রেন অ্যামট্রেক অ্যাসেলা। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রোদেলা আকাশের নিচ দিয়ে ছুটে চলেছে। চারিদিকে বাড়ি শহর শপিং সেন্টার নদী প্রকৃতি ছেড়ে ছুটে চলেছে তার গন্তব্যের দিকে। অ্যামট্রেক অ্যাসেলা ২১২১-এর পরবর্তী স্টেশন ডেলোওয়ার স্টেটের উইলমিংটন। আমার পাশের সিটে আছেন মধ্যবয়সী একজন নারী যাত্রী। শুরু থেকেই ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত। সিনেমা দেখছেন আর নিজের মতো আনন্দে মেতে আছেন। চারদিকে কি হচ্ছে না হচ্ছে ও নিয়ে কোনো মাথাব্যাথা নেই। সিনেমা দেখা নিয়েই ব্যস্ত। সিনেমা দেখে বারবার হেসে উঠেছেন আপনমনে। ভাবলাম এবার ক্যাফে যাওয়া দরকার। কিন্তু নারী যাত্রীর সিনেমা দেখার বা তার আনন্দে ব্যাঘাত ঘটাতে ইচ্ছে হলো না। আবারো প্রকৃতির দিকে নজর দিলাম।

অ্যামট্রেক ভ্রমণে কোনো বাড়তি খরচ নেই। এছাড়া এই ট্রেন আপনাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর থেকে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরের প্রাণকেন্দ্রে নিয়ে যায় ঝামেলা ছাড়াই। রাস্তায় বাস এবং ট্রাফিকের ঝামেলা এড়িয়ে খুব সহজেই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ভ্রমণ করা যায়। ট্রেনের প্রশস্ত এবং আরামদায়ক আসন, ক্যাফে কার এবং শান্ত সুন্দর একটি ভ্রমণের মধ্য দিয়ে অনেক সৃষ্টিশীল কাজ করবার সুযোগ পাওয়া যায়। অ্যামট্রেক ভ্রমণ পরিবেশ-বান্ধব। ট্রেনগুলি কম শক্তি খরচ করে এবং গাড়ি বা বিমান ভ্রমণের তুলনায় কম ক্ষতিকারক দূষক উৎপাদন করে। ট্রেনে ভ্রমণ আপনার গ্যাস বাঁচাবে এবং আপনার গাড়ির খরচ কমাবে। ট্রেন সফর রাস্তায় এবং আকাশে ক্রমাগত ক্রমবর্ধমান যানজটও হ্রাস করতে সহায়তা করে।

গাড়িতে পুরো ট্রিপে একটি সঙ্কুচিত, অস্বস্তিকর সিটে সীমাবদ্ধ থাকার পরিবর্তে, ট্রেনে পা প্রসারিত করে বসা এবং ট্রেনের অন্যান্য অংশে ঘুরে বেড়াবার সুযোগ থাকে। প্লেন, বাস বা গাড়ি চালিয়ে ভ্রমণ করার চেয়ে ট্রেনের ভ্রমণ অত্যন্ত আরামদায়ক এবং নিরাপদ। ট্রেনের একটি আসনে প্রচুর লেগরুম সহ সুন্দর, প্রশস্ত আসনগুলির মধ্যে একটিতে বিশ্রাম নিতে নিতে প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। নিউ ইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে প্রতি বছর ১৬.৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ট্রেনে যাওয়া আসা করে। কোনো কোনো যাত্রীর কাছে এটা ভ্রমণের মতো মনেই হয় না।

হঠাৎ করেই নজরে পড়ল ডেলোওয়ার রিভার। নদীর পাশ দিয়েই ছুটে চলেছে ট্রেন। নদীর উপর বড়বড় মালবাহী জাহাজ চলাচল করছে। নদী পার হয়ে যেতেই হাইওয়ে নজরে পড়ল। শতশত গাড়ি চলছে হাইওয়েতে। চলতে চলতেই এক সময় উইলমিংটন স্টেশনে এসে থেমে পড়ল ট্রেন। পাশে বসা নারী যাত্রী ব্যাগ গুছিয়ে নেমে পড়ল স্টেশনে। উঠে দাঁড়ালাম আমি। বাথরুমে যাব। ফ্রেশ হয়ে তারপর অ্যাসেলা ক্যাফে যাবো। কফি খেতে হবে।

ট্রেন চলছে আর হাঁটতে হাঁটতে আমি দুলছি। দুলতে দুলতেই ছবি তুলছি। দুলতে দুলতেই এক কম্পার্টমেন্ট থেকে আরেক কম্পার্টমেন্টে পার হয়ে যাচ্ছি। গন্তব্য অ্যাসেলা ক্যাফে। কার নাম্বার চার। চলে এলাম অ্যাসেলা ক্যাফে। স্টারবাক্স কফি আর কিছু স্ন্যাকস কিনে নির্দিষ্ট জায়গায় বসে খেলাম। স্ন্যাকস শেষ হতেই কফি হাতে আবারো হাঁটতে শুরু করলাম। ফিরে এলাম নিজের সিট ১২এফ। অ্যাসেলা ট্রেন ছুটে চলেছে মেরিল্যান্ডের বাল্টিমোর পেন স্টেশনের উদ্দেশে। দেখতে দেখতেই চলে এল বাল্টিমোর পেন স্টেশন। পাশের ট্র্যাকে মেরিল্যান্ড স্টেটের ট্রেন মার্ক দাঁড়িয়ে আছে। যাত্রীদের উঠানামা শেষ হতেই ট্রেন আবারো চলতে শুরু করল যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ইউনিয়ন স্টেশনের উদ্দেশে।

গ্রীষ্মের কি সুন্দর পরিস্কার নীল আকাশের মাঝে সাদা কুয়াশার ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। যেন ট্রেনের সাথে পাল্লা দিয়ে ছুটছে সমান্তরালে। তার ফাঁকে ফাঁকেই সুর্য মামার লুকোচুরি খেলা চলছে। পাশের রেল লাইনের দিকে তাকালে মনে হলো দূরন্ত গতিতে দৃষ্টির পিছনে হারিয়ে যাচ্ছে রেল লাইনের লোহার পাতগুলো। মুগ্ধতা আর তৃপ্তি নিয়ে প্রকৃতির রূপ দেখতে লাগলাম অ্যামট্রেক অ্যাসেলা ২১২১ ট্রেনের জানালা দিয়ে। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে অবশেষে প্রায় সাড়ে পাঁচটার দিকে ট্রেনের শেষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির ইউনিয়ন স্টেশনে এসে থেমে পড়ল অ্যামট্রেক অ্যাসেলা। যাত্রীদের সাথে আমিও নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে। ইউনিয়ন স্টেশনে আমাকে নিতে এসেছে জি আই রাসেল ও জুয়েল বড়ুয়া। স্টেশন থেকে বের হতেই ওদেরকে পেয়ে গেলাম। উঠে বসলাম গাড়িতে।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে ক্লিক করুন: ঘুরে বেড়ান

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

six + 2 =