আইসিটি কনটেইনার দুর্যোগ আরো একটি ওয়েক আপ কল

সালেক সুফী: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম আইসিটি কনটেইনারের অগিকাণ্ডে ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করেছে। শনিবার মাঝ রাতে শুরু হওয়া অগ্নিকাণ্ড, রাসায়নিক বিস্ফোরণজনিত ধ্বংসযজ্ঞ দেশ জুড়িয়ে আতংক ছড়িয়েছে।  শেষ খবর জানা পর্যন্ত ১০ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী সহ ৫০ জন মৃতুবরণ করেছে। প্রায় ২০০ জন আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের সাথে কাজ করছে সেনাবাহিনীর কেমিকেল দুর্ঘটনা মোকাবিলা কাজে প্রশিক্ষিত ইউনিট। দেশের প্রধানতম বন্দর নগরীর স্পর্শকাতর এলাকায় রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দুর্যোগ বিশ্বমিডিয়ায় শিরোনামে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। বাংলাদেশের স্পর্শকাতর স্থাপনাগুলোর কারিগরি এবং সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থা কতটা নাজুক তা এই ঘটনায় আরো একটি ওয়েক আপ কল দিয়েছে।

প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে যে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড বোঝাই কনটেইনার বিস্ফোরোন থেকেই অগ্নুৎপাত ঘটেছে। মূলত তৈরি পোশাক রপ্তানি মালামাল কনটেইনার গুলো জাহাজীকরণের জন্য স্থাপিত টার্মিনালে রাসায়নিক গুদামজাত  করার অনুমতি ছিল কি না বা থেকে থাকলে যথাযথ অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল কি না সেই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। কেউ কেউ সন্ত্রাস বা অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও দেখছেন।

হাইড্রোজেন পার অক্সাইড একটি অক্সিডাইজিং এজেন্ট।  বিভিন্ন ঘনত্বের এই রাসায়নিক দ্রব্য বিভিন্ন কাজে ব্যাবহৃত  হয়। টেক্সটাইল, তৈরি পোশাক রং করার কাজেও ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে সন্ত্রাসীরা এটি বিস্ফোরক তৈরির কাজেও ব্যবহার করে থাকে। ব্যাক্তিখাতের এই টার্মিনালের মালিক আর হাইড্রোজেন পার অক্সাইড প্রস্তুতকারি কারখানা একই গ্রুপের।  হালকা নীল প্লাস্টিক আধারে থাকা রাসায়নিক দ্রব্যাদি রপ্তানির জন্য আনা হয়েছিল।

স্পষ্টতই প্রতীয়মান যে অগ্নুৎপাত বা বিস্ফোরণ ঘটার সময় কেউ ফায়ার সার্ভিসকে রাসায়নিক দ্রব্য থাকার কথা বলেনি। অথবা ওরাও আগুনের লেলিহান শিখা দেখে বুঝতে পারেনি। তবুও কর্তব্যের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে ওদের কয়েকজন আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করেছে।

ঘটনাটি অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি করা হবে। হয়তো কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে প্রতিবেদন দেয়া হবে।  কিন্তু মিডিয়া থেকে মনোযোগ চলে গেলে আর বিশেষ কিছু হবে না। এটিই এখন বাংলাদেশের বাস্তবতা। আমি সর্বসাধারণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া এবং যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার নিবেদন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে সম্মান জানাচ্ছি।

আমার কিছু প্রশ্ন আছে। আইসিটি কনটেইনার টার্মিনালটির রাসায়নিক দ্রব্য গুদামজাত করার অনুমতি ছিল কি না? যারা দিয়েছে তারা টার্মিনালের নিরাপত্তাব্যবস্থা বিশেষত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করেছেন কি না? বিপদজনক রাসায়নিক দ্রব্যের গুদাম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় থাকা বাংলাদেশ বিল্ডিং কোড বা বিস্ফোরক আইনে গ্রহণযোগ্য না।  তা সত্ত্বেও কিভাবে এগুলো এখানে থাকলো? কনটেইনার টার্মিনাল তদারকির দায়িত্ব কাদের? পরিবেশ মন্ত্রণালয়, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কতটুকু দায়দায়িত্ব পালন করেছে?

যাহোক এই দুর্যোগ প্রমান করেছে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর এবং শিল্পশহর আদৌ এই ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুত নয়। নেই কোনো বার্ন ইউনিট, বিশেষায়িত হাসপাতাল। ফায়ার ব্রিগেড কর্তৃপক্ষের নাই রাসায়নিক বিস্ফোরণজনিত অগ্নিকাণ্ড সামাল দেওয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত   জনবল। মালিকপক্ষের অবশ্যই বড় ধরনের গাফলতি আছে।

বাংলাদেশ যখন একটি জাতীয় প্রতীক ধরনের মেগা প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তখন এই ধরনের দুর্যোগ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। রানা প্লাজার মতোই এটি যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়েই সামাল দিতে হবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

7 + eleven =