সালেক সুফী
দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার নন মনোহর শহর এডিলেড। সেখানে ছবির মতো ক্রিকেট স্টেডিয়াম এডিলেড ওভাল। বাংলাদেশ প্রথম আবির্ভাবে বিশ্বকে বিস্মিত করেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। ব্যাট হাতে রিয়াদের অনবদ্য শতরান আর বোলিংয়ে দুর্ধর্ষ রুবেলের নৈপুণ্যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে উন্নীত হয়েছিল মাশরাফি বাহিনী। আজ সেই এডিলেড ওভারেই সুযোগ এসেছে ইতিহাস গড়ার। সামনে প্রবল প্রতিপক্ষ এই টুর্নামেন্ট জেতার অন্যতম ফেভরিট ভারত। যদিও কাগজে কলমে তুখোড় ভারসাম্যপূর্ণ দল ভারত। কিন্তু এবারের টি ২০ বিশ্বকাপে অনেক অঘটন ঘটেছে। আজ খেলার পরকালে দুটি দলের সুযোগ আছে ম্যাচ জয় করে সেমি ফাইনালের পথে দাবি জোরদার করার। ভারতের উপর চাপ বেশি থাকবে। বাংলাদেশ কিন্তু নিজেদের উজাড় করে দিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনলে আনন্দের সীমা থাকবে না। মনে আছে, ২০১৫ এই ভারতের সঙ্গে বিতর্কিত একটি ম্যাচে এমসিজিতে বাংলাদেশ হেরে কোয়ার্টর ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছিল। আম্পয়ারের কিছু সিদ্ধান্ত ছিল বিতর্কিত। ৫০:৫০ কিছু সিদ্ধান্ত ভারতের পক্ষে না গেলে জয় পেতেও পারতো বাংলাদেশ। সেদিনের ম্যাচ এমসিজিতে বসে দেখেছিলাম। মনে এখনো অনেক কষ্ট আছে। আজ বাংলাদেশ যুদ্ধ করলেই তুষ্ট হবো। শুধু বলবো হারার আগে হার মেনে নেয়া চলবে না।
আজ বাংলাদেশের অনেক সমীকরণ মাথায় নিয়ে খেলতে হবে। ভারত কিন্তু আগের ম্যাচটি হেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে। কাল আবার উলনগ্যাবায় ইংল্যান্ড নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয়ায় কঠিন সমীকরণের মুখে ভারত। কোনো ভাবে ভারত হারলে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পরতে পারে। এমনকি বৃষ্টির কারণে খেলা পরিত্যক্ত হলেও বিপত্তি হতে পারে ভারতের।
এডিলেড ওভালের মাঠ ছিল টাইগার অধিনায়ক সাকিবের হোম গ্রাউন্ড যখন সে এডিলেড স্টইস্কার্স দলের হয়ে বিগব্যাশ খেলেছিল। মাঠটি এমসিজি, এসসিজি বা উলন গাবা থেকে ছোট। অপেক্ষাকৃত কম দ্রুত, কিছুটা স্পিন সহায়ক। বাংলাদেশের হয়ে তিন ম্যাচে এযাবৎ ব্যাটিং কিন্তু জুৎ হয়েছে বলবো না। দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে দাঁড়াতেই পারেনি। নেদারল্যান্ডস বা জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধেও আহামরি কোনো ব্যাটিং করেনি। তবে নেদারল্যান্ডস এবং জিম্বাবয়ের বিরুদ্ধে তুখোড় বোলিং করেছে তাসকিন , মুস্তাফিজ। আজ বোলোইং ভালো করে ভারতকে ১৫০ সীমানায় বেঁধে রাখা গেলে কে জানে আজ বাংলাদেশের ক্রিকেট ইটিসের পাতায় কিছু সোনার হোরোপে লেখা হতেও পারে।
এই টুর্নামেন্টে এই যাবত সাকিবের কাছ থেকে কিন্তু কাঙিক্ষত কিছু পাওয়া যায়নি। আগে দেখা গেছে বড় ম্যাচে ব্যাট বল হাতে বদলে যায় সাকিব। আজ সেই দিন হলে দোল আর নিজের জন্য মঙ্গলময় হবে। লিটনকেও খেলতে হবে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে। শান্ত গত ম্যাচেই জীবনের সেরা ইনিংস খেলেছে। ভারতের তরুণ পেসার আরশ দ্বীপ সিংকে রয়ে সয়ে খেলতে হবে। ছেলেটা ওয়াসিম আকরামের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এমসিজি ডার্বিতে আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে পার্থের অপ্টাস স্টেডিয়ামে আগুনে বোলিং করেছে। আজ মাঠে ৭৫% দর্শক ভারতের হলেও বাংলাদেশে লাল-সবুজের কমতি থাকবে না।
গত কয়েকদিন যাবৎ বৃষ্টিতে সয়লাব এডিলেড। ম্যাচেও বৃষ্টির ফোরকাস্ট আছে। ডাকওয়ার্থ লুইসের সম্ভাবনা মাথায় রাখতে হবে। বাংলাদেশকে কিন্তু পাঁচ জন মূল বলার নিয়ে খেলতে হবে। গাবায় কিন্তু পঞ্চম বোলারের অভাব অনুভূত হয়েছে। টুর্নামেন্টে এযাবৎ কিন্তু সৌম্য, ইয়াসির আর সোহানের ব্যাট কথা বলেনি। আমি শান্তর সাথে লিটনকে ওপেন করানোর সুপারিশ করবো। সেক্ষেত্রে সাকিব তিন আর আফিফ ছারে খেলতে পারে। প্রথম পাওয়ার প্লে উইকেট হাতে রেখে ৪০-৪৫ রান হলেও যথেষ্ট। আমি ইয়াসিরের স্থানে মিরাজকে খেলানোর সুপারিশ করবো। একজন ব্যাটসম্যান কমিয়ে ইবাদাতকে চতুর্থ পেসার হিসাবে খেলানোর কোথাও মাথায় রাখা যায়। সেই ক্ষেত্রে সৌম্যকেও বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশকে ১৬৫-১৭০ করতে হবে। তাহলে উজ্জীবিত তাসকিন, মুস্তাফিজরা কিছু ঘটিয়ে ফেলতে পারে। দুজনেরই ভারতের বিরুদ্ধে ভালো বল করার ইতিহাস আছে অভিষেক সিরিজেই।
দেখলাম সাকিব ম্যাচ নিয়ে সতর্কতামূলক কথা বলেছে। অস্বীকার করার উপায় নেই ভারত ফেভারিট দল। বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে। সেটি ঘটলে উপসেট হবে বলাই বাহুল্য। তবুও দল নায়ক দলকে চাঙ্গা রাখার জন্য ক্রিকেট কূটনীতি করলে ভালো হতো। আশা করি হারুক জিতুক যুদ্ধ করবে বাংলাদেশ। রোহিত, রাহুল, কোহলিদের কাছে হারাবার কিছু নেই বাংলাদেশের। আর ভারত কোনো অজেয় দল নয় যে হারার আগেই হারতে হবে।