আজ বাংলাদেশের মরণপন লড়াই করার ম্যাচ

সালেক সুফী

আজ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ পাকিস্তানের লাহোরে এশিয়া কাপের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খেলায় আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ‘করো না হয় মরো’ খেলায় অবতীর্ণ হবে। গ্রুপে প্রথম খেলায় শ্রীলংকার সঙ্গে ৫ উইকেটে হেরে যাওয়ায় বাংলাদেশের আজকের খেলাটি ভাগ্য নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়েছে।

গ্রুপ অফ ফোর রাউন্ডে অবস্থান নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশের আজ জয় ছাড়া বিকল্প নেই।  আবার জয়ী হতে হবে বড় ব্যাবধানে। আফগানিস্তান ওদের শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার সাথে জয়ী হলে বাংলাদেশকে শূন্য হাতে এশিয়া কাপ থেকে ফিরতে হবে। যদি তাই হয় পরিণতি হবে হতাশার, লজ্জার।

এশিয়া কাপে এবং এরপর বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে অনেক স্বপ্ন দানা বেঁধেছিলো বাংলাদেশের। ওডিআই ফরম্যাটে শক্তিশালী দল বাংলাদেশ নিয়ে উচ্চ আশার সঙ্গত কারণ ছিল। কিন্তু সাজানো গোছানো দলটি গত কয়েক মাসের দূরদর্শী পরিকল্পনার অভাবে এবং আনাড়ী ব্যাবস্থাপনায় এলোমেলো হয়ে গেছে।

অন্যানো দলগুলো যখন প্রবীণ, অভিজ্ঞ, প্রমাণিত খেলোয়াড়দের সঙ্গে নবীন প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের সমন্বয় ঘটিয়ে প্রস্তুত করেছে বাংলাদেশ ভুল পরামর্শে প্রমাণিত অভিজ্ঞদের অবজ্ঞা করে নতুনদের নিয়ে ক্রমাগত বার্থ পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে। বিতর্কিত শ্রীলংকান হেড কোচ চন্দ্রিকা হাতুরাসিংহেকে ফিরিয়ে এনে দলের সিনিয়র খেলোয়াড়ের জন্য অস্বস্তির সৃষ্টি করেছে।

ফলশ্রুতিতে অধিনায়ক তামিম ইকবাল একসময় অসময়ে অবসর নিলে দ্বন্দ্ব প্রকাশিত হয়ে পরে. যাহোক প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে তামিম আসলেও ওর ম্যাচ ফিটনেস না থাকায় এশিয়া কাপ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। নির্বাচকমন্ডলী বিতর্কিত স্কোয়াড ঘোষণা করে।  দেশ জুড়ে ক্রিকেট বোদ্ধা মহলের অনুরোধ উপেক্ষা করে অপরিহার্য খেলোয়াড় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে বাইরে রাখা হয়।

একসময় তুখোড় বলার এবাদত হোসেন ছিটকে পড়ে।  একেবারে শেষ পর্যায়ে এসে লিটন কুমার দাস অসুস্থ হয়ে পড়ায় টপ অর্ডার নিয়ে সংকটে পরে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে শেষ মুহূর্তে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পাঠানো হয় সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত এনামুল হক বিজয়কে।

দলের এই এলোমেলো অবস্থায় অধিনায়ক হয়ে ফেরা সাকিব আল হাসানের উচিত ছিল ঘোষণা মাত্রই দলের সঙ্গে এসে যোগ দিয়ে মনোবল চাঙা করা।  কিন্তু সাকিব শেষ মুহূর্তে ফিরে আসে।  একটি অগোছালো দল নিয়ে তরুণদের প্রচণ্ড চাপের মুখে ফেলে এশিয়া কাপ শিরোপা ধারী শ্রীলংকা দলের বিরুদ্ধে খেলায় বাংলাদেশের শোচনীয় পরিণতি ঘটে।

খেলার বিস্তারিত বিশ্লেষণে যাবো না। বাংলাদেশের এখন কোনঠাসা অবস্থান। এখান থেকে ফিরে আসতে হলে বাংলাদেশ দলকে অবশ্যই আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে নিজেদের সেরাটি নিবেদন করতে হবে। আমি মনে করি তরুণ তানজিদ তামিমকে আরো সুযোগ দিতে হবে। তবে এনামুল বিজয়কে খেলানো হবে কি না ভেবে দেখা প্রয়োজন।

স্বাভাবিক অবস্থা হলে সুপারিশ করতাম শান্তকে প্রমোট করে ইনিংস সূচনা করাতে এবং ডান বাম কম্বিনেশনের জন্য তাওহীদ হৃদয়কে তিন নম্বরে খেলিয়ে  সাকিবকে চার নম্বরে এসে দলের হাল ধরতে।  আমি দলের বর্তমান অবস্থায় মুশফিক ৫ নম্বরে ব্যাটিং করা সমীচীন মনে করি, সেই ক্ষেত্রে আফিফকে সাত এবং মেহেদী মিরাজকে ৮ নম্বরে খেলানো যেতে পারে। ৯, ১০, ১১ আমাদের তিন পেসার খেলবে।  সেখানেও আমি তাসকিন, হাসান মাহমুদ এবং শরিফুলকে খেলানোর সুপারিশ করবো।

আফগানিস্তান কিছু দিন আগে বাংলদেশে এসে বাংলাদেশকে হারিয়ে গেছে। ওদের অধিকাংশ খেলোয়াড় খেলার মাঝেই আছে। শ্রীলংকায় লঙ্কা প্রিমিয়ার লীগ খেলেছে। শ্রীলংকায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজ খেলেছে। প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের পরিবেশ এবং উইকেট বিষয়ে বাংলাদেশের তুলনায় বেশি ধারণা আছে ওদের। তাই আফগানিস্তানকে হারানো খুব সহজ হবে না। বরং পাকিস্তানে দুটি ম্যাচ খেলা আফগানিস্তানের সামনে সুযোগ পরবর্তী রাউন্ডে উন্নীত হওয়ার।

আজ না জয় পেলে কিন্তু ব্যর্থ বাংলাদেশ দেশে ফিরে নানা প্রশ্নের মুখে পড়বে।  নির্বাচকমণ্ডলী কোনোভাবেই বিতর্কিত স্কোয়াড নির্বাচনের দায়িত্ব এড়াতে পারবে না। হেড কোচের পরিকল্পনা গভীর বিতর্কের মুখে পড়বে।  কিছু দিন পরেই বাংলাদেশকে নিউ জিল্যান্ডের সঙ্গে দেশের মাঠে ওডিআই সিরিজ খেলে বিশ্বকাপ খেলতে যেতে হবে।

হয়তো ফিরবে তামিম, ফিরে আসবে লিটন, হয়তো লজ্জার মাথা খেয়ে ফেরাতে হবে মাহমুদুল্লাহকে।  দলের রসায়ন ঠিক না হলে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন সুখের হবে বলা যাবে না। সব শেষে বলি আজ বাংলাদেশকে সামর্থের সবটুকু দিয়ে লড়াই করতে হবে। সাকিব, মুশফিককে মূল দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে।

সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

two × 4 =