‘কৃষ্ণহীরক’ কিংবা ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ এই উপাধীগুলো শুনলেই বোঝা যায় কথা হচ্ছে বেবী নাজনীনকে ঘিরে। বাংলাদেশের স্বনামখ্যাত সঙ্গীত তারকা তিনি। আধুনিক বাংলা গানের বাজারে রয়েছে যার সর্বাধিক সংখ্যক একক (৫০টি একক এবং দুইশ’র বেশি মিশ্র) ও মিশ্র এ্যালবাম। আজ (২৩ আগস্ট) এই তারকার জন্মদিন।
বাংলাদেশ বেতার, চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং মঞ্চ মাধ্যমের অপ্রতিদ্বন্দী এবং লক্ষ শ্রোতার হৃদয়ে প্রভাব বিস্তারকারী একজন গানের শিল্পী তিনি। ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ নামে যার খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ ছাড়িয়ে উপমহাদেশ এবং বিদেশেও। গানের মাধ্যমে সরকারী এবং বেসরকারী ভাবে পৃথিবীর বহু দেশে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন বহু বছর ধরে। যে কারণে বিভিন্ন ভাষার গানও তাকে রপ্ত করতে হয়েছে। এক কথায় একজন বহুমাত্রিক গানের শিল্পী তিনি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন একাধিকবার, দেশ এবং বিদেশের অনেক সন্মান-সন্মাননা অর্জন করেছেন তার সঙ্গীত জীবনে।
আধুনিক গানের বাইরে রবীন্দ্র-নজরুল, লালন, পল্লী, ভাওয়াইয়া গানের ব্যাপক দখল রয়েছে তার। হিন্দী-উর্দু গান আর গজলেও সমান শক্তিমান এক কণ্ঠর নাম বেবী নাজনীন। দেশ এবং বিদেশের বিভিন্ন স্টেইজে সেইসব গুণের সাক্ষরও তিনি রেখেছেন তার চল্লিশ বছরের সঙ্গীত জীবনে। আসলে একজন প্রকৃত শিল্পীকে সব ঘরানার গানেই পারদর্শী হতে হয়। বাংলাদেশের হাতে গোনা যে দুই তিনজন সঙ্গীতশিল্পী গানের বিভিন্ন ধারায় বিচরণ করে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন বেবী নাজনীন তাদের প্রধানতম একজন।
এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা বেবীর গানের হাতে খড়ি তার বাবা সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব মনসুর সরকারের কাছে। তারপর জীবনের দীর্ঘ চলারপথে সঙ্গীতের নানা দীক্ষা এবং সাধনায় যেন নিজেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন বেবী নাজনীন। আর সেই দিক থেকে বিবেচনা করলে বেবী নাজনীনকে একজন ‘সেলফ মেইড’ সঙ্গীত তারকা ১৯৮০ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘লাগাম’ চলচ্চিত্রে আজাদ রহমানের সুর ও সঙ্গীতে আহমেদ জামান চৌধুরীর লেখা একটি গানের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক ঘটে বেবী নাজনীনের। আর ১৯৮৭ সালে মকসুদ জামিল মিন্টুর সঙ্গীত পরিচালনায় সারগাম থেকে প্রকাশিত প্রথম অ্যালবাম ‘পত্রমিতা’ বেবী নাজনীনের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুড়িয়ে দেয়। সঙ্গীতপ্রিয় সব মানুষের মনে তিনি যেন এক স্থায়ী আসন বানিয়ে ফেলেন ঐ অ্যালবাম দিয়েই।
তারপর নিঃশব্দ সুর, ‘কালসারা রাত’, ‘প্রেম করিলেও দায়’, ‘দুচোখে ঝুম আসে না’- শিরোনামের অ্যালবাম গুলো আধুনিক গানের বাজারে বেবী নাজনীনকে অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সর্বত্রই গ্রহণযোগ্য শিল্পী হিসেবে চিন্হিত করে। ঐ রংধনু থেকে, কাল সারা রাত ছিলো স্বপনেরও রাত, এলো মেলো বাতাসে উড়িয়েছি শাড়ির আঁচল, দু চোখে ঘুম আসে না তোমাকে দেখার পর, আমার ঘুম ভাঙ্গাইয়া গেলোরে মরার কোকিলে, মানুষ নিষ্পাপ পৃথিবিতে আসে, কই গেলা নিঠুর বন্ধুরে-সারা বাংলা খুঁজি তোমারে, পূবালী বাতাসে, ও বন্ধু তুমি কই কই রে.. এমন অনেক কালজয়ী গানের শিল্পী বেবী নাজনীন লেখক হিসেবেও সুনাম অর্জন করেছেন।
তার নিজের অনেক গান তিনি নিজেই লিখেছেন, সুরারোপও করেছেন। তার লেখা ‘সে,’ ঠোঁটে ভালবাসা.’ এবং ‘প্রিয়মুখ’ শিরোনামে তিনটি কাব্যগ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে বইয়ের বাজারে। এখন লেখালেখির তেমন একটা সময় পাননা বলে ব্যক্ত করেন তিনি। তার সর্বশেষ একক অ্যালবামটি ছিলো ‘ব্লাক ডায়মন্ড বেবী নাজনীন’ শিরোনামে।