আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা

সালেক সুফী

দক্ষিণ এশিয়া জ্বালানি সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিগত শতকের নব্বই দশক থেকেই। দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) আওতায় নানা উদ্যোগে প্রতিবেদক নিজেও সম্পৃক্ত ছিলাম। ভারত, নেপাল, শ্রীলংকায় অনেক কারিগরি আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছি। নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ, ভারত,পাকিস্তানের জ্বালানি সম্পদ সমন্বিত করে এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টির ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দেশগুলোর রাজনৈতিক ঐক্যমতের অভাবে আঞ্চলিক সহোযোগিতার অধীনে অর্জন সীমিত।

বাংলাদেশ-ভুটান, ইন্ডিয়া-নেপাল (বিবিআইএন) আওতায় জ্বালানি সহযোগিতার উদ্যোগ খুব একটা অগ্রসর হয় নি. অন্যতম প্রধান বাধা এই অঞ্চলে উত্তর আমেরিকা,পশ্চিম বা পূর্ব ইউরোপের মত বিদ্যুৎ বা গ্যাস গ্রিড গড়ে না ওঠা। কারিগরি বাধা নেই, অর্থনৈতিক ভাবেও লাভজনক, শীর্ষ রাজনৈতিক পর্যায় থেকেও অনেক সময় উৎসাহজনক কথা উচ্চারিত হয়েছে।

কিন্তু একটা পর্যায়ে এসে একটি বিশেষ দেশের ‘নিবো সবকিছু, কিন্তু ভাগাভাগি করবো না কিছুই’ এই মনোভাবের কারণে কোন উদ্যোগ এগোয় কি খুব একটা। তদুপুরি ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার কারণে সার্ক মৃতপ্রায়।

বিশ্ব এখন ফসিল ফুয়েল থেকে সরে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো বিশেষত নেপাল ,ভুটান ,ভারতের কিন্তু জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল  রয়েছে। ভারতে সোলার, বায়ু বিদ্যুৎ, সবুজ হাইড্রোজেন উৎপাদন সম্ভাবনা বিস্তর। সবার সার্বভৌমত্ব সমতা মেনে নিয়ে দেশগুলো আন্তরিক হলে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ গ্রিড গড়ে তুলে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ ট্রেডিংয়ের মাদ্ধমে ১০ বছরের মধ্যে অত্র অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি নিরাপত্তা সৃষ্টি হতে পারে।

এমনকি দেশগুলোর মধ্যে ন্যূনতম সমযৌথা হলে অঞ্চলের বাইরে থাকা গ্যাস মায়ানমার অথবা তুর্কমিনিস্তান থেকেও এই অঞ্চলে আনা যেতে পারে। অথচ এই অঞ্চলে আঞ্চলিক জ্বালানি সহযোগিতা বলতে ভারতের সঙ্গে নেপাল ভুটানের বিদ্যুৎ আদান প্রদান আর ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ এবং তরল পেট্রোলিয়াম আমদানিতে সীমিত। দীর্ঘদিন ধরে নেপাল ভুটান থেকে বাংলাদেশে ভারত হয়ে বিদ্যুৎ আমদানির উদ্যোগ ভারতের নানা টাল বাহানায় বাধাগ্রস্ত হয়ে আছে। ভূতপূর্ব সরকারের নতজানু নীতির কারণে ভারতের আদানি গ্রূপের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থবিরোধী একপেশে বিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি হয়েছে।

বাংলাদেশ এখন নানাভাবে চাহিদার চেয়েও অনেক বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু ভ্রান্ত পরিকল্পনায় প্রয়োজনীয় জ্বালানির সংস্থান না থাকায় গ্রিড নন গ্রিড মাইল ৩১.০০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা নিয়েও ১৭,৫০০ -১৮০০০মেগাওয়াট সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর দুশ্চিন্তায় আছে. ভুল পরিকল্পনার কারণে প্রমাণিত গ্যাস সম্পদ নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে, পরিকল্পনা না থাকায় বিপুল আবিষ্কৃত কয়লা সম্পদ মাটির নিচে পরে আছে. সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা বাধাগ্রস্ত হয়ে আছে।  আরো একটা সমস্যা বিদ্যুতের মৌসুমী চাহিদার বিপুল  ব্যাবধান..মার্চ থেকে অক্টবর বিদ্যুৎ চাহিদা ১৬০০০-১৮০০০ মেগাওয়াট ওঠা নামা করলেও নভেম্বর থেকে জানুয়ারী চাহিদা থাকে ৯০০০-১০,০০০ মেগাওয়াট।

আঞ্চলিক বিদ্যুৎ গ্রিড থাকলে এই সময় বাংলাদেশ ৩০০০-৪০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানি করতে পারে নেপাল ,ভারতের পূর্বাঞ্চলের প্রদেশগুলোতে। শুনছি ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা ভারতে যাচ্ছেন একটি ওয়ার্কশপে অংশগ্রহণ করতে। সেখানে বাংলাদেশ চিকেন নেক দিয়ে নেপাল ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির সকল বাধা দূর করে বিদ্যুৎ গ্রিড নির্মাণের কার্যকরী উদ্যোগ বিষয়ে আলোচনা  করতে পারেন। একই সঙ্গে ভারতের উদ্বৃত্ত সৌর বিদ্যুৎ বাংলাদেশে কিভাবে সঞ্চালন করা যায় সেই উদ্যোগ যেতে পারে।

তবে এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী জ্বালানি সহযোগিতা অর্জন করতে হলে প্রথমে প্রয়োজন দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বাণিজ্য সহযোগিতা জোরদার, সীমান্ত সমস্যা সমাধান এবং অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টণে আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুন মেনে নেওয়া।

 


মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

eleven + 15 =