আড়ালে থাকতেই ভালোবাসেন শুভ্র

রায়হান ইসলাম শুভ্র সংগীত অঙ্গনের মানুষ। অল্প সময়ের মধ্যে নিজের লেখা গান গেয়ে পেয়েছেন শ্রোতাদের কাছ থেকে ভালোবাসা। গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সারির বেশকিছু গানের দলের সঙ্গে। বর্তমানে গান গাওয়ার পাশাপাশি সংগীত পরিচালনাও করে থাকেন। তার সম্পর্কে জানাচ্ছে গোলাম মোর্শেদ সীমান্ত

রায়হান ইসলাম শুভ্রর জন্ম ও বেড়ে হয়ে ওঠা খুলনা বিভাগের যশোর জেলায়। স্কুল-কলেজ জীবন কেটেছে চট্টগ্রামে শহরে। চট্টগ্রামের ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজ এ উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরিয়ে ২০১০ সালে ঢাকায় চলে আসেন। ২০১১ সালে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এ ভর্তি হোন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়াশোনা করেছেন ব্যাচেলর অফ বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (বিবিএ) নিয়ে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত হওয়া কৈশোর বয়স থেকেই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ইউল্যাব সংস্কৃতি সংসদে কাজ করেছেন। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। রায়হান ইসলাম শুভ্রর গান শুরু করা স্বাভাবিকভাবেই। একদিন এক মেলায় এক ব্যান্ডের পারফর্ম দেখতে যান। সেখানের মিউজিক তাকে গিটার বাজানো শুরু করার জন্য প্ররোচিত করেছিল। তারপর টাকা জমিয়ে করে গিটার কেনেন। চট্টগ্রামে গিটার শেখা চলতে থাকে পড়াশোনার পাশাপাশি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে গান করার পাশাপাশি গিটার অনুশীলন চালিয়ে যেতে থাকেন তিনি। ২০১৩ সালে নিজের ইউটিউব চ্যানেল খুলেন ঝযাঁৎড় নামে। বেশকিছু জনপ্রিয় গানের গিটার কভার করে তা আপলোড করতেন। এছাড়াও বিভিন্ন জনপ্রিয় গান নিজের গলায় তুলতেন।

দিশেহারা তুই

আর আমি মিলে দুই

আমার নীলাকাশ

ছিড়ে উড়ে গেলি তুই।

আমার বোকা অভিমান

তাসে হেরে যাওয়া দান

তোর পুরানো কাগজে

আমি মাথা গুঁজে শুই।

২০২০ সালের ৩০ আগস্ট ‘দিশেহারা তুই’ শিরোনামে একটি গানের কিছু অংশ গেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন রায়হান ইসলাম শুভ্র। সকলে তার লেখা গান ও কণ্ঠের প্রেমে পড়ে যায়। ৫১ সেকেন্ডের সেই গানের ক্লিপ এখনো অনেক মানুষের টাইমলাইনে ঘুরে বেড়ায়। নিজের প্রথম মৌলিক গান দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে ফেলেন তিনি। ‘বোকা প্রেমিক’, ‘হিমু হিমু মনে হয়’, ‘আমার খুব টাকার দরকার’, ‘আমি ঠকি বা তুই ঠকিস’, ‘আমি তোমার মতো না’, ‘আমার ক্লান্ত বিকেল’ শিরোনামে বেশকিছু গান গেয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। চমকপ্রদ বিষয় হচ্ছে বেশকিছু গান সম্পূর্ণ রিলিজ পায়নি। শ্রোতারা গানের চুম্বক অংশগুলো জনপ্রিয় করে ফেলে। প্রতিটি গানের কথা রায়হান ইসলাম শুভ্রর নিজের লেখা। প্রতিটি গানের কথা শ্রোতারা নিজেদের সাথে অনুভব করতে পারে।

রায়হান ইসলাম শুভ্রর আরেকটা পরিচয় তিনি গিটারিস্ট। দেশের সংগীতে নতুন ধরনের মিউজিকের সঙ্গে যারা পরিচয় ঘটিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হাবিব ওয়াহিদ। শুভ্র লম্বা সময় তার সাথে গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তিনি গিটারিস্ট হিসেবে যুক্ত ছিলেন শিরোনামহীন, চিরকুট ও অ্যাশেজ-এর সঙ্গে। গিটারিস্ট হিসেবে প্রথম যুক্ত হয়েছিলেন রক ঘরনার ব্যান্ড ‘শিরোনামহীন’ এর সঙ্গে। তারপর যুক্ত হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীত দল ‘চিরকুট’ এর সঙ্গে। তাদের সাথে দেশের নানা প্রান্তে কনসার্ট করেছেন তিনি, পেয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা। সর্বশেষ জুনায়েদ ইভানের গানের দল ‘অ্যাশেজ’ এ গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন কিছুদিন। গিটারিস্ট হিসেবে কাজ করেছেন বেশকিছু সংগীত অনুষ্ঠানে। সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার অদিত রহমানের সঙ্গে বেশকিছু গানের প্রকল্পে কাজ করেছেন রায়হান ইসলাম শুভ্র।

২০২০ সালে প্রথম বারের মতো কোনো নাটক কাজ করেন রায়হান। মাবরুর রশিদ বান্নাহ পরিচালিত নাটক ‘চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি’ নাটকে ‘আসমানে বান্ধিব ঘর’ শিরোনামের একটি গান করেন তিনি। নিজে গান গাওয়ার পাশাপাশি বেশকিছু ওয়েব ফিল্ম, ওয়েব সিরিজে মিউজিকের কাজ করেছেন রায়হান ইসলাম শুভ্র। ২০২২ সালে ভারতীয় ওটিটি প্লাটফর্ম ‘হইচই’ এ মুক্তি পায় রায়হান খান পরিচালিত ‘দৌড়’ ওয়েব সিরিজ। সিরিজের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেছেন রায়হান ইসলাম শুভ্র। ২০২৩ সালে পরিচালক রেজাউর রহমান ভিন্নধর্মী গল্পের ওয়েব সিরিজ ‘ইন্টার্নশিপ’ নির্মাণ করেন। ৬ পর্বের সিরিজটি দেশীয় ওটিটি প্লাটফর্ম ‘চরকি’ তে মুক্তি পায়। সিরিজের আবহ সংগীত ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক করেন রায়হান ইসলাম শুভ্র। সিরিজে ‘আজ আমি একা’ শিরোনামের একটি গানও গেয়েছেন তিনি। গানের কথা ও সুর তার নিজের করা। ‘যদি আমি বেঁচে ফিরি’ নামের একটি ওয়েব সিরিজের কাজও করছেন তিনি। গান গাওয়ার পাশাপাশি সংগীতের পিছনের মানুষ হিসেবে সমানতালে কাজ করছেন। সামনে ওটিটি প্লাটফর্মে বেশকিছু নতুন কাজ আসার অপেক্ষায় রয়েছে।

তার ‘আমার ক্লান্ত বিকেল’ শিরোনামের একটি গান বন্ধুমহলে বেশ সাড়া ফেলে। মাবরুর রশিদ বান্নাহ পরিচালিত ‘বদমাইশ পোলাপান’ নাটকে গানটি ব্যবহৃত হয়।

আমার এ ক্লান্ত বিকেল

বুকে হাওয়া লাগিয়ে হাঁটা কতটা পথ

হেঁটেছি গন্তব্যহীন

চেনা এ শহরের গলি

তোদের মাঝে যখন থাকি আমি

পৃথিবী তখন আপন লাগে

তোরা ভুলে যাস না কখনো

আমাদের বন্ধুত্ব রঙিন কোনো ঘুড়ির মতো

চির চেনা শহরের প্রতিটি দেওয়ালে

বুক চাপা অভিমান

তাও প্রতি প্রহরে চোখে স্বপ্ন নিয়ে

বেঁচে থাকার গান

২০২১ সালে ‘একটা স্টুডিও’ নামে মিউজিক প্রোডাকশন হাউস শুরু করেন রায়হান ইসলাম শুভ্র। মূলত এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিজ্ঞাপন, নাটক, ওটিটি কনটেন্টের মিউজিকের কাজ করে থাকেন। দেশের প্রথম সারির বেশকিছু কোম্পানির সঙ্গে নিয়মিত কাজ করেন তিনি।

দেশে পছন্দের শিল্পী কে জানতে চাইলে রায়হান ইসলাম শুভ্র জানান, আমার জন্য ভীষণ কঠিন প্রশ্ন এটা। আমি সত্যিই অর্ণব দা’র (শায়ান চৌধুরী অর্ণব) সঙ্গীত পছন্দ করি এবং ব্যক্তি হিসেবে তাকে আমার ভীষণ পছন্দ। তার সঙ্গে বেশকিছু কাজ করে ভালোলাগাটা বেড়ে গেছে। তাকে ব্যক্তিগতভাবে জানতে পারাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার আমার জন্য। যখন ব্যান্ডের কথা আসে আমি একেবারে ইন্দালো এবং জেমস ভাইয়ের গান পছন্দ করি ভীষণ। আমি অদিত দাদাকে বাদ দিতে পারি না, তিনি একজন অসাধারণ ব্যক্তি এবং সঙ্গীতশিল্পী। বর্তমানে কাজের ব্যস্ততা সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, বিজ্ঞাপনের বেশকিছু জিঙ্গেল নিয়ে কাজ করছি। পাশাপাশি নিজের একক অ্যালবাম করাটা সবসময়ই আমার স্বপ্ন ছিল। আমি চেষ্টা করছি নিজের প্রকাশ পাওয়া গানগুলো ছাড়াও নিজের লেখা বেশকিছু গান নিয়ে একটা অ্যালবাম মুক্তি দিব। আমি নিজেকে অনেকটা গুটিয়ে রাখতে পছন্দ করি। বলা যায়, আড়ালে থাকতে ভালোবাসি।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: অন্তরালে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

4 − two =