সালেক সুফী
দুই ম্যাচের দাপুটে জয়ে টেস্ট সিরিজে ধবল ধোলাই অর্জনের পর টি ২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের কাছে ৩৯ রানের ব্যাবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সূচনায় ধাক্কা খেলো বাংলাদেশ।
সফরকারী আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি২০ সিরিজ শুরুর আগে মিডিয়ায় স্কোয়াড সিলেকশন, বিশেষত কয়েকজন ভিউ ব্যাবসায়ী এবং কনটেন্ট ক্রিয়েটারের আলোচনা সমালোচনায় মনে হয়েছেন বাংলাদেশ যেন ৭০, ৮০ দশকের ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা ৯০, ২০০০ দশকের অস্ট্রেলিয়া। লিটন কুমার দাস যেন ক্লাইভ লয়েড বা স্টিভ ওয়াহ। ওই দুই দলের স্কোয়াড নির্বাচন করতো নির্বাচক মন্ডলী। অধিনায়করা নির্বাচিত স্কোয়াড নিয়ে স্বাধীন ভাবে দল পরিচালনা করেছে। কেন সিরিজের আগে অধিনায়ক এবং প্রধান নির্বাচকের মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব উস্কে দেয়া হলো? নিঃসন্দেহে প্রভাব খেলোয়াড়দের রসায়নে। ব্যাটিং, বোলিং ছন্নছাড়া বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে ৩৯ রানের বিশাল ব্যাবধানে হেরে গাছে। টস জিতে কুয়াশার অজুহাতে অতিথি দলকে ব্যাটিং করতে দিয়েছিলো লিটন কুমার দাস। পরিকল্পিত ব্যাটিং করে ১৮১/৪ স্কোর করলো সফরকারী দল, পেসার না স্পিনার কেউ লাইন লেংথ রেখে বোলিং করতে পারেনি। জবাবে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশকে মনে হয়েছে তরঙ্গ শংকুল নদীতে নাবিখাওয়া নৌযান। ১৪২/৯ করতে পেরেছে বাংলাদেশ। ৩৯ রানের বড় ববধানে হেরে গাছে বাংলাদেশ। ১-০ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াবে এমন ভরসা নেই। এমনকি সিরিজে ধবল ধোলাই হলেও অবাক হবো না। দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। তিলকে তাল করে পরিবেশ বিষয়ে তুলে খেলোয়াড়দের উপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে কিছু অতি জ্ঞানী মানুষ।
খেলা নিয়ে বেশি কিছু লেখার নেই। যে একাদশ কাল খেলিয়েছে বাংলাদেশ সেটিকে বাংলাদেশের বর্তমান মুহূর্তের সেরা দল না বলার কোন যুক্তি নেই। কিন্তু মাঠে নামতেই মনে হয়েছে পরিকল্পনা বিহীন আতঙ্কগ্রস্ত। অথচ সুনিদিষ্ট পরিকল্পনায় চমৎকার ব্যাটিং করেছে আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ (০/২৩) ছাড়া সবাই ছিল খরুচে। শরিফুল, তানজিম ওভার প্রতি ১০ রানের বেশি দিয়েছে। ফিল্ডিয়ে গতিহীন মনে হয়েছে। এই জয়ের নেশায় কৃতকল্প পুরোপুরি প্রস্তুত আয়ারল্যান্ড দলের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করেছে হতাশা গ্রস্ত লিটন বাহিনী। আমি বলবো না আয়ারল্যান্ড অন্তত সাদা বলে দুর্বল দল। বাংলাদেশ হারতেই পারে। কিন্তু কাল যেভাবে ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশ তার জন্য কোন অজুহাত যথেষ্ট নয়।
প্রথমে আয়ারল্যান্ড টস হেরে যখন ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ বোলাররা সঠিক লেংথ লাইন খুঁজে পায় পায়নি। পল স্টার্লিং (১৮ বলে ২১), টিম টেক্টর (১৯ বলে ৩২) থেকে শুরু করে প্রতিটি ব্যাটসম্যান খেলেছে স্বাচ্ছন্দে। মোটামুটি ওভার গড়ে ১০ রান করা আয়ারল্যান্ড বাটিংয়ের মোকাবেলায় একমাত্র মুস্তাফিজ ছাড়া সবাই ছিল ছন্দহীন। ৩ নম্বরে খেলতে আসা হ্যারি টেক্টর ৪৫ বলে অপরাজিত ৬৯ রান করে দলকে ১৮১/৪ বিশাল স্কোর গড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে মুস্তাফিজ (০/২৩) ছাড়া বাকি সবাই (ওভার প্রতি ৮.৫ থেকে ১০.৫০) রান বিলিয়ে দিয়েছে।
সবাই জানি মানসম্পন্ন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাটিং ক্ষমতা ১৫০ তাও চাপহীন অবস্থায় ব্যাটিং করলে। কাল বাংলাদেশকে চাল চুলো হীন ছন্নছাড়া মনে হয়েছে। তানজিদ তামিম (২), পারভেজ ইমন (১), লিটন (১) সাইফ হাসান (৬) আইরিশ বোলিং তোপে উড়ে গাছে। একসময় ৪.৩ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ছিল (৪/১৮)। ৫ম উইকেট জুটিতে তাওহীদ হৃদয় (৮৩*) আর জাকের আলী (২০) ৪৮ রান যোগ করায় বাংলাদেশ কিছুটা ভদ্র গোছের ১৪২/৯ করতে পেরেছে। সব আইরিশ বোলার উইকেট অনুযায়ী ভালো বোলিং করেছে। তবে ধস নামিয়েছে ম্যাথিউ হামফ্রে (৪/১৩) আর বারি ম্যাকার্থি (৩/২৩)। তাওহীদ হৃদয় দলের বিপর্যয়ে একাই লড়াই করে সহযোগীর অভাবে ম্যাচ জয়ী হতে পারেনি।
ম্যাচে হার জিত থাকবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে উইকেটে বাংলাদেশ বোলারদের তুলোধুনো করলো সেই উইকেটে তাওহীদ হৃদয় আর কিছুটা জাকের অনিক ছাড়া কেউ দাঁড়াতেই পারলো না।
জানি না কি অজুহাত আছে বাংলাদেশের। তবে বলবো বাংলাদেশ দলের ব্যাবস্থাপনা থেকে খেলোয়াড়, নির্বাচক মন্ডলী এবং ভিউ ব্যাবসায়ীরা নিজেদের মহাজ্ঞানী মহাজন মনোভাব না পাল্টালে সিরিজে কেন আসন্ন টি২০ বিশ্বকাপে হালে পানি পাবেনা।
বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ড টি২০ সিরিজ
প্রথম ম্যাচ : সংক্ষিপ্ত স্কোরকার্ড
আয়ারল্যান্ড ১৮১/৪ ( হ্যারি টেক্টর ৬৯* ,টিম টেক্টর ৩২, কার্টিস কাম্ফার ২৪, পল স্টার্লিং ২১, তানজিম সাকিব ২/৪১)
বাংলাদেশ ১৪২/৯ ( তাওহীদ হৃদয় ৮৩ ,জাকের আলী ২০, ম্যাথিউ হামফ্রে ৪/১৩, বারী ম্যাকার্থি ৩/২৩)
বাংলাদেশ ৩৯ রানে পরাজিত.
ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় ম্যাথিউ হাম্ফ্রে (৪/১৩)