আধুনিক প্রযুক্তিতে নিজস্ব কয়লা ব্যবহার করা যেতে পারে: মোহাম্মদ হোসেন

আফরোজা আখতার পারভীন: বর্তমান সংকটে যারা কয়লা ব্যবহার বন্ধে সোচ্চার ছিল তারাই বন্ধ করে দেওয়া কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করছে। ফলে এটা আমাদের জন্য সুযোগ হয়ে দেখা দিয়েছে। যেহেতু দেশ জ্বালানি আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে তাই নিজস্ব জ্বালানি গ্যাস বা কয়লা ব্যবহার বাড়ালে আশংকা থেকে মুক্ত থাকা যাবে। সময় এসেছে নিজস্ব সম্পদ ব্যবহারে আরও তৎপর হওয়ার। খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত না করে আধুনিক প্রযুক্তি দক্ষতা ব্যবহার করে নিজস্ব কয়লা ব্যবহারের বিষয়টি আবারও ভেবে দেখা দরকার। কারণ এক সময় চাইলেও আর কয়লা ব্যবহার করা যাবে না। বর্তমানে আমরা যে প্রযুক্তি দক্ষতায় কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনা করছি তা উদাহরণ হতে পারে। বিসিপিসিএল-ইপি ক্লাইমেট টকস-এর অতিথি হয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন এ কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, বর্তমানে দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন তহবিলকে জলবায়ু তহবিল হিসাবে দেখান হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সরাসরি জলাবায়ু তহবিলে অর্থ জমার পরিমাণ হতাশাজনক। বিশ্বের বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কার্বন দূষণ কমানর জন্য পরিবেশ সহনীয় জ্বালানি ব্যবহার বাড়ান কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রাথমিক জ্বালানি সংগ্রহ করাই বরং এখন চ্যালেঞ্জ। তাই আগের কপগুলোতে যারা পরিবেশ নিয়ে সোচ্চার ছিল তারা হয়তো কপ২৭-এ এসে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আরও সময় চাইবে। ফলে সফলতা নিয়ে এবার খুব বেশি আশা না করাই ভালো।

তার মতে, উন্নয়নশীল দেশ কপগুলোতে আলোচনায় এসে আশাবাদী হয় যে, পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে, পরিবেশ সহনীয় জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে তারা অর্থ পাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। জলবায়ু তহবিল নিয়ে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। আর এ অর্থ অনুদান নয় পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে ক্ষতিপূরণ। যা জলবায়ু সহনীয় করতে ব্যবহার হবে। কিন্তু তা যদি সাধারণ ঋণ হয় তাহলে লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না।

মোহাম্মদ হোসেন পরামর্শ দিয়ে বলেন, কপ২৬-এর পরে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়নে দেখা গেছে, দেশে জলবায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী কী কাজ হচ্ছে তা যথাযথ ভাবে তুলে ধরা যাচ্ছে না। পরিবেশ মন্ত্রণালয় বিষয়টির দায়িত্বে রয়েছে। অন্যান্য মন্ত্রণালয় পরিবেশ সহনীয় করতে কী ভূমিকা রাখছে সেগুলোর সঠিক পরিসংখ্যান সংগ্রহ করতে হবে। যদিও তা সুষ্ঠু ভাবে করা হচ্ছে না। বিদ্যুৎখাতে পরিবেশ সহনীয় যে প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে সেখানে জলবায়ু মোকাবেলার লক্ষ্য নির্ধারিত থাকতে হবে। প্রকল্প শেষে যাতে করে সে পরিসংখ্যান তুলে ধরা যায়। কার্বন দূষণ কমানর ক্ষেত্রে যেকোনো প্রকল্প কতটুকু প্রভাব রেখেছে তা হিসাবের মধ্যে রাখতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ডকুমেন্টেশন’ চায়। অনেক সময় দেখা যায়, প্রকল্প সঠিক ভাবে বাস্তবায়ন না করে শুধুমাত্র ‘ডকুমেন্টেশন’-এর জোরে কেউ কেউ জলবায়ু তহবিল থেকে অর্থ পেয়ে যাচ্ছে। তবে ‘ডকুমেন্টেশন’-এ আমাদের দুর্বলতা আছে।

তিনি আরও বলেন, কপ২৭-এর ‘সাইড ইভেন্টে’ বিদ্যুৎ বিভাগের অংশগ্রহণ থাকবে। প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। জ্বালানি ট্রানজিশন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার, পরিবেশ সহনীয় নীতিগত সিদ্ধান্ত সেইসঙ্গে দূষণ কম করে এমন নতুন প্রকল্প বিষয়ে বিস্তারিত জানান হবে। জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যে নীতি নেওয়া হয়েছে তুলে ধরা হবে। এ খাতে এ পর্যন্ত যে সাফল্য অর্জিত হয়েছে তা জানিয়ে কিভাবে কার্বন দূষণ কমান হবে তা প্রতিফলিত হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে ৪০% ‘ক্লিন এনার্জি’ ব্যবহারের রোড ম্যাপ তুলে ধরা হবে।

তিনি আশংকা জানিয়ে বলেন, কপ২৬-এ বিশ্বজুড়ে একটা ইতিবাচক মনোভাব ছিল। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় ‘ওএসিডি’ দেশগুলোই বরং কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করছে। এটা ঠিক যে, আগে জীবন রক্ষা করতে হবে তারপর ১০০ বছর পর কী হবে তা ভাবা যাবে। বাঁচা-মরা প্রশ্নে বাঁচার দিকে পাল্লা ভারী হবে এটাই স্বাভাবিক। এবার কেউ বলতেই পারেন, আমরা বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটে আছি, সেটা নিয়ে আলোচনা করি। সেক্ষেত্রে ‘গ্রিন হাইজ গ্যাস’ নির্গমন কতটা গুরুত্ব পাবে তা বলা মুশকিল। উন্নত বিশ্বই তো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে। এ দুরাবস্থার জন্য দায়ী তো তারাই। অনুন্নত দেশের কোটি কোটি মানুষ সংকটে পড়েছে। শুধু জ্বালানি সংকট নয় পুরো অর্থনীতি বিপর্যস্ত। তাই প্রশ্ন উঠবে আগে তো জ্বালানি তারপর ক্লিন জ্বালানি।

তিনি জানান, বেশ কিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে রয়েছে যেগুলো কার্বন দূষণ কমাতে ভূমিকা রাখবে। গ্রিড সোলার ব্যবহার বাড়ছে, শিল্প এনার্জি এফিশিয়েন্ট করা হচ্ছে। হাইড্রোজেন জ্বালানি নিয়ে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন। পরিবহন খাতে তরল জ্বালানি ব্যবহার বন্ধে বিদ্যুৎচালিত যানবাহন বাড়াতে হবে। এসব কিছুর জন্য অর্থ প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী জলবায়ু হতবিল থেকে এসব খাতে অর্থায়ন পাওয়া যাবে। কার্বন দূষণ যারা সবচাইকে বেশি করে তাদের উপর সামাজিক সংগঠনগুলোর চাপ আরও বৃদ্ধি করা দরকার।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

fourteen − ten =