সালেক সুফী
আগামীকাল থেকে চট্টগ্রামের সাগরিকায় জহুর আহমেদ চৌধুরী ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হতে চলেছে বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের তিন ম্যাচের ওডিআই সিরিজ। একমাত্র টেস্ট সিরিজ সম্প্রতি আফগানিস্তানের ভূমিধস পরাজয় হলেও ওডিআই ক্রিকেটে দুটি তুল্য মানের দলের সিরিজ মুখরোচক তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দিবে বলে ধরে নেয়া যায়।
সবাই জানে বাংলাদেশ এখন ওডিআই ক্রিকেটে সবচেয়ে পরিণত দল। আর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ বিশ্ব সেরাদের হারিয়ে দেয়ার মত সামর্থ রাখে। অন্যদিকে টেস্ট ক্রিকেটে নবীন অনভিজ্ঞ আফগানিস্তান কিন্তু সাদা বলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী। বিশেষত দলে আছে ৪-৫ জন বিশ্বমানের ক্রিকেটার যারা টি ২০ ফ্রেঞ্চাইজ ক্রিকেটে কাঙ্ক্ষিত পণ্য। তবুও হেড টু হেড ওডিআই লড়াইয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে।
বাংলাদেশ এখন অভিজ্ঞ প্রবীণ আর প্রতিভাবান নবীনের মণিকাঞ্চন সম্মিলনে বদলে যাওয়া দল। সম্প্রতি নতুন কৌশলে খেলে বাংলাদেশ ক্রিকেটের রসায়ন পাল্টে গেছে। আসন্ন সিরিজটি দুটি দলের জন্য নিজেদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতির মোক্ষম সুযোগ।
স্কোয়াড। বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস (উইকেট রক্ষক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মেরাজ, তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান, আফিফ হোসাইন, এবাদত হোসাইন, তৌহিদ হৃদয়, হাসান মাহমুদ, মোহাম্মদ নাঈম, নাজমুল হোসাইন শান্ত, শরিফুল ইসলাম এবং তাইজুল ইসলাম।
আফগানিস্তান: হাসমাতুল্লাহ শাহিদী (অধিনায়ক), ইকরাম আলিখিল ( উইকেট রক্ষক), রামানুল্লাহ গুরবাজ ( উইকেট রক্ষক), রাশিদ খান, মোহাম্মদ নবি, ফজল হক ফারুকী, ওফাদার মোমান্ড, মুজিব উর রহমান, রাহমাত শাহ, আব্দুল রহমান, রিয়াজ হাসান, ইজহারুল হক নাভীদ, আজমাতুল্লাহ ওমারজাই, মোহাম্মদ সালীম, শহীদুল্লাহ, সায়ীদ সিরজাদ, ইব্রাহিম জাদরান, নাজিবুল্লাহ জাদরান এবং জিয়া উর রহমান।
হয়তো কৌশলগত কোনো কারণে আফগানিস্তান টেস্ট স্কোয়াড থেকে কয়েকজন অপরিহার্য খেলোয়াড়কে আড়ালে রেখে বিশ্রাম দিয়েছিলো। এখন রাশিদ খান, মুজিব ওর রহমান, মোহাম্মদ নবি, ফজল হক ফারুকী ফিরে দলের বোলিং আক্রমণ আগের রূপ ফিরে পাবে। বাটিংয়ে হাসমাতুল্লাহ শাহিদী, ইব্রাহিম জাদরান, রাহমাত শাহ ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ বোলিং শক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ হয়েছে। এর সঙ্গে রামানুল্লাহ গুরবাজ , মোহাম্মদ নবী, এমনকি রাশিদ খানের সংযোজন ব্যাটিং শক্তিও সুসংহত করবে।
সঙ্গে আছে কয়েকজন অপরিচিত নবীন খেলোয়াড়। বাংলাদেশকে একটি নতুন দলকেই মোকাবিলা করতে হবে। আমি খুব নিশ্চিত নই অধিনায়ক তামিম ১০০% ম্যাচ ফিট কি না। না হলে অপরিহার্য তামিমকে নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া যুক্তি যুক্ত হবে না। আমি তামিমের সঙ্গে তুখোড় ফর্মে থাকা নাজমুল শান্তকে ইনিংস সূচনার জন্য খেলানোর পক্ষপাতী।
পরিস্থিতি বুঝে মোহাম্মদ নাঈমকে অন্তত একটি খেলায় যাচাই করতে হবে। এশিয়া কাপ, বিশ্বকাপকে সামনে রেখে সাকিব ৩ নম্বরে এবং তরুণ তাওহীদ হৃদয় ৪ নম্বরে ব্যাট করতে পারে। মুশফিক টিমের ব্যাটিং নিউক্লিয়াস হিসাবে ৫ নম্বরে ব্যাট করবে। লিটন ৬ নম্বরে ব্যাট করবে। দলে ফিরে আসা আফিফ হোসাইন ৭ নম্বরে ব্যাট করলে মুশফিক খেলবে ৮ নম্বরে।
আমি তাসকিন, শরিফুল এবং হাসান মাহমুদ/এবাদত তিন জন পেসার নিয়ে খেলার পক্ষপাতি। আফগান দলকে পেস বল দিয়েই ঘায়েল করতে হবে। তবে ম্যাচগুলোর ভাগ্য নির্ধারণ হবে বাংলাদেশ শুরুতে কিভাবে ফজল হক ফারুকী এবং তিনজন বিশ্বমানের স্পিনার রাশিদ খান, মুজিব উর রহমান, মোহাম্মদ নবীকে মোকাবিলা করে।
যতটুকু দেখেছি অভিজ্ঞ তামিম, সাকিব,মুশফিক স্বমূর্তিতে সক্রিয় থাকলে শান্ত, লিটনের সক্রিয়তায় তাওহিদ হৃদয় দলকে ম্যাচ জয়ের মতো পুঁজি এনে দিবে। এই সিরিজ ৩-০ জয় করলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো আইসিসি র্যাংকিংয়ে ৫ম স্থান অর্জন করতে পারবে।
বিশ্বকাপ সামনে রেখে সেটি দলের আত্মবিশ্বাসে বিশাল ভূমিকা রাখবে। সব কিছু বলার পর বলবো দুটি ব্যালান্সড দলের মুখোমুখি লড়াই। তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বিতা পূর্ণ হবে। দুটি দল বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হবে ধর্মশালায়। এই সিরিজটি সেই ম্যাচের ড্রেস রিহার্সেল হিসাবেই বিবেচিত হবে।
সালেক সুফী: আন্তর্জাতিক ক্রীড়া বিশ্লেষক