সালেক সুফী
প্রতিপক্ষের উপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করার বদলে যাওয়া কৌশলে পরিবর্তিত বাংলাদেশ এই পর্যায়ে একমাত্র টেস্টের প্রথম দিনেই কোনঠাসা করে ফেলেছে টেস্ট ক্রিকেট স্বল্প অভিজ্ঞ আফঘানিস্থানকে। সবুজ ঘাসে ঢাকা উইকেট দেখে টস জয় করে প্রথম বোলিং নিয়ে আফগানিস্তান শান্ত – জয়ের মাইল ফলক দ্বিতীয় উইকেট জুটির ২১২ রানের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে দিনশেষে ৩৬২/৫ উইকেট স্কোর নিয়ে চালকের আসনে পৌঁছেছে। স্লো ওভার রেটের কারণে মাত্র ৭৯ ওভার না হয়ে ৯০ ওভার খেলা হলে বাংলাদেশের স্কোর ৪০০ অতিক্রম করতো। শান্ত এক দিনের ক্রিকেট ঢঙে ব্যাটিং করে ১৭৫ বল খেলে ১৪৬ রানের একটি ধ্রুপদী ইনিংস উপহার দেয়। বেশ কিছু দিন পরে দলে ফিরে মাহমুদুল হাসান জয় ধীর স্থির টেস্ট ক্রিকেট মেজাজে খেলে ৭৬ রান করে। দিনশেসে মুশফিক ৪১ এবং মেহেদী মিরাজ ৪৩ রানে অপরাজিত রয়েছে। ম্যাচের চালকের আসনে এখন বাংলাদেশ। ম্যাচে ফিরতে দ্বিতীয় দিনের সকালে চট জলদি দুই তিনটি উইকেট আফগানিস্তান তুলে নিতে না পারলে টেস্ট ম্যাচ হাত ছাড়া হয়ে যাবে সফরকারীদের।
অনুকুল পরিবেশে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ভালো শুরু করেছিল আফগানিস্তান। টেস্ট জীবনের প্রথম ওভারে প্রথম বলেই জাকির হাসানের উইকেট তুলে নিয়েছিল অভিষিক্ত আফগান পেসার নিঝাত মাসুদ। প্রথম কয়েক ওভার বল সুইং করছিলো, সিমের মুভমেন্ট ছিল। সতর্কতার সঙ্গে খেলছিল শান্ত, জয়। মাঝে মাঝে খোলস থেকে বেরিয়ে আক্রমণ করছিলো শান্ত। কিছু ক্ষণের মাঝেই খেই হারিয়ে ফেলে আফগানিস্তান বোলাররা। লাইন বা নিশানা কিছুই ঠিক ছিল না। অনেক নো বল, অতিরিক্ত শর্ট বোলিং করেছে ওরা। শান্তর প্রতি আক্রমণের মুখে খেই হারিয়ে ফেলে টেস্ট স্বল্প অভিজ্ঞ আফগান বোলিং। বার বার পরিবর্তন করেও রক্ষা হয় নি। অনেকটা সাদা বল ক্রিকেটের মেজাজে খেলে শান্ত বাংলাদেশ ইনিংসকে এগিয়ে নেয়। ওপর প্রান্ত দৃঢ়তার সঙ্গে আগলে রাখে জয়। ওদের পার্টনারশীপ ২১২ রানে পৌঁছে। নিজের তৃতীয় শতরান করে শান্ত। জয় অর্জন করে অর্ধশত। শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ওদের দ্বিতীয় উইকেট জুটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করে। আফগান অধিনায়ক বার বার বলার পরিবর্তন করেও সাফল্যের দেখা পায় নি। অবশেষে পার্ট টাইমার রহমাত শাহের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল অকারণে কাট করার চেষ্টায় উইকেট বিলিয়ে দেয় ৭৬ রান করা জয়। বঞ্চিত হয় শত রান করায়। সুযোগ ছিল মমিনুলের স্বস্তি জনক অবস্থায় শুরু করে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। শুরুটা মন্দ হয় নি। কিন্তু নিজের দুর্বল স্থান শরীর বরাবর শর্ট বলে উইকেট কিপারের হাতে ধরা পরে ব্যাক্তিগত ১৫ রানে আউট হয় মোমিনুল। মুশফিক এসে শান্তর সঙ্গে জুটি বাধে। আফগান দল হটাৎ করে চাঙ্গা হয়ে উঠলেও শান্ত আক্রমণাত্মক ধারা বজায় রেখে একের পর এক বাহারি স্টোকস খেলতে থাকে। হয়তো প্রচন্ড গরমে কিছুটা শ্রান্ত হয়ে ১৪৬ রান করা শান্ত একটি ভুল স্ট্রোক খেলে উইকেট বিসর্জন দেয়। কিছু আগেই মাসুদের একটি নো বলে সরাসরি বোল্ড আউট হয়ে বেঁচে গিয়েছিলো শান্ত। আরো একটু শান্ত থাকলে হয়তো ভালো হতো। যাহোক ওর দৃষ্টিনন্দন ইনিংস ২৩ চার আর ২ টি ছয়ে সাজানো ছিল। চা বিরতির পর আফগান বোলিং কিছু সময়ের জন্য চাঙ্গা হয়েছিল। অভিষিক্ত টেস্ট অধিনায়ক লিটন নামের প্রতি সুবিচার করতে পারে নি। বাম হাতি রিস্ট স্পিনার জাকির খানের বলে আউট হবার আগে ৯ রান করেছে লিটন। মুশফিক ( ৪১* ) এবং মিরাজ ( ৪৩*) অবিচ্ছিন্ন ষষ্ট উইকেট জুটিতে ৭২ রান জুড়ে দিয়ে দিনশেষে দলের রান পৌঁছে দিয়েছে ৩৬২/৫। সর্বসাকুল্যে খেলা হয়েছে ৭৯ ওভার। ৩১ অতিরিক্ত রানের ১৯ টি এসেছে নো বল থেকে। সহজেই অনুমেয় টেস্ট ক্রিকেটে লাল বল দিয়ে বোলিং করে নিতান্তই অনভিজ্ঞ আফগান দল। বাংলাদেশ ৪৫০-৫০০ রান করে হয়তো চেপে ধরবে অতিথিদের। উইকেট কিন্তু প্রাণ হীন নয়। বাংলাদেশের আক্রমণ পেস এবং স্পিনের সমাহারে অনেক ভারসাম্য পূর্ণ। যদি আজ প্রথম সেশনে দ্রুত কিছু উইকেট তুলে নিতে না পারে আফগান দল তাহলে ম্যাচের বাকি সময় ওদের পর্যায় এড়াতে লড়াই করতে হবে।