বাংলাদেশ ২৩২/৬( স্বর্ণা আক্তার ৫১* , শারমিন আক্তার ৫০, নিগার সুলতানা ৩২, ফারজানা হক ৩০, রুবায়া হায়দার ২৫, মনকুলেক মালবা ২/৪২)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৯.৩ ওভারে ২৩৫/৭ ( চোলে ট্র্যায়ন ৬২* , মারিজানি কাপ ৫৬. নাদীন ডি ক্লার্ক ৩৭* , লরা উলভার্ড ৩১,নাহিদা আক্তার ২/৪৪)
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩ উইকেটে জয়ী।
শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের বিরুদ্ধেও ৪৯.৩ ওভার পর্যন্ত লড়াই করে ৩ উইকেটে হেরে গেলো নিগার সুলতান জ্যোতির বাংলাদেশ মেয়েদের ক্রিকেট দল। সীমিত সামর্থের সবটুকু নিংড়ে দিয়ে নিজেদের নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৩২/৬ রান সংগ্রহ করেছিল। ভালো বোলিং আর ফিল্ডিং করে একপর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের ৭৮/৫ এবং ১৯৮/৭ সীমিত রেখেছিলো।
প্রথম ১০ পাওয়ার প্লেতে অতিরিক্ত রক্ষণাত্মক খেলায় হয়তো ২০-২৫ রান কম ছিল। তার পরেও অভিজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই করিয়েছে বাংলাদেশ। ৪৯.৩ ওভার খেলে ২৩৫/৭ করে ৩ উইকেটে ম্যাচ জিতেছে প্রোটিয়ান মেয়েরা। হেরেছে বাংলাদেশ হরে নি বাংলাদেশ মেয়েদের ক্রিকেট।
বাংলাদেশের মেয়েরা কালেভদ্রে বিশ্ব ক্রিকেটে বড় দলগুলোর বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলার সুযোগ পায়। দেশেও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যত সামান্য। এবারে বিশ্বকাপের আগেও পর্যাপ্ত অনুশীলন বা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা নেয়নি বিসিবি। তারপরেও ন্যূনতম সুযোগ পুঁজি করে এই পর্যন্ত চার তুখোড় প্রতিদ্বন্দ্বী সঙ্গে খেলেছে তার জন্য প্রশংসা পেতেই পারে।
এযাবৎ খেলা চার ম্যাচের প্রথমটি দাপটের সঙ্গে খেলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতে শুভ সূচনা করে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ড এবং কাল দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে লড়াই করেই হারলো বাংলাদেশের মেয়েরা।
শুধুমাত্র নিউ জিল্যান্ডের (হোয়াইট ফার্ন) বিরুদ্ধে নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি। বাকি আছে খেলা দুর্ধর্ষ অস্ট্রেলিয়া, ভারত এবং সমশক্তির শ্রীলংকা দলগুলোর বিরুদ্ধে। অস্ট্রেলিয়া বা ভারতের সঙ্গে সম্ভাবনা দেখি না। জয়ের সুযোগ আছে শ্রীলংকার বিরুদ্ধে।
প্রতিটি ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ শিখছে। এই দলটিকে দেশে পর্যাপ্ত আধুনিক অনুশীলন এবং দেশ বিদেশে নিয়মিত প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ দেয়া হলে বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট অনেক এগিয়ে যাবে নিশ্চিত বলা যেতে পারে। দলের স্পিন সম্পদ সমৃদ্ধ-অফ স্পিনার, বাম হাতি স্পিনার, বিচিত্র লেগ স্পিনার আছে। নতুন বলে আছে প্রতিশ্রুতিময় সুইং বলার মারুফা। বলে কিছু ভেরিয়েশন রপ্ত করতে পারলে মারুফ অচিরে সম্পদে পরিণত হবে।
দেশে নিয়মিত লীগ ক্রিকেট এবং আঞ্চলিক ক্রিকেট আয়োজন হলে পার্বত্য অঞ্চল থেকে কয়েকজন মানসম্পন্ন পেস বোলার উঠে আসতে পারে। আমি মনে করি দলের ফিল্ডিং অনেক প্রাণবন্ত হয়েছে। ব্যাটিং সামর্থে কিছুটা সীমাবদ্ধতা আছে। কাল শুরুতে একটু অতিরিক্ত সতর্ক ছিল বাংলাদেশের ওপেনার যুগল ফারগানা হক পিঙ্কি আর রুবায়া আক্তার ঝিলিক।
১৬.১ ওভারে ৫৩ রান হয়তো ২০ রান কম হয়েছে। সেখান থেকে দল ৫০ ওভারে ২৩২/৬ করেছে মিডল অর্ডারে শারমিন সুপ্তার ৫০, নিগার সুলতানা জ্যোতির ৩২ এবং বিশেষ করে স্বর্ণা আক্তারের ৩৫ বলে ঝড়ো ৫১ রানের সুবাদে।
দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বোলিং বিশ্বমানের সেটি এই বিশ্বকাপেও প্রমাণিত। এমনি আক্রমণের বিরুদ্ধে ২৩২ রান নিঃসন্দেহে লড়াকু সংগ্রহ ছিল। হয়ত জয়ের জন্য ২০-২৫ রান কম ছিল।তবুও কোমর কোষে লড়াই করেছে। মারুফা যদি নতুন বলে প্রথম স্পেলে আঘাত হানতে পারতো হয়ত ভিন্ন পরিস্থিতি হতেও পারত।
প্রতিদিন সবার সমান যায় না। তবুও বাংলাদেশ ২২.১ ওভারে ৭৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে কোনঠাসা করে ফেলেছিলো প্রোটিয়ান মেয়েদের। সেখান থেকে ভালো ব্যাটিং করে মারজিয়ানি কেম্প (৫০) আর চোলে ট্র্যায়ন অপরাজিত (৬২) ষষ্ট উইকেট জুটিতে ৮৫ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে বিপদ মুক্ত করে।
এর পরেও ১৯৮ রানে ৭ উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু উইকেট টেকিং পেস বোলার না থাকায় যুদ্ধ করেও জয় ছিনিয়ে আনতে পারলো না বাংলাদেশের মেয়েরা। তবুও ম্যাচটি জিততে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলতে হয়েছে।
এমন পরাজয়ে কষ্ট আছে কিন্তু আছে তৃপ্তি। বিনাযুদ্ধে মাথা নত করেনি বাংলাদেশের মেয়েরা। ম্যাচ জয়ের কৃতিত্ব দেয়ালে পিঠ রেখে চোলে ত্রায়নের (৬২) চৌকষ ব্যাটিং নৈপুণ্যের জন্য। এভাবেই এগিয়ে চলা বাংলাদেশের মেয়েরা অনেক বেশি যত্ন দাবি প্রতিষ্ঠিত করেছে।