নীলাঞ্জনা নীলা
বয়স যত বেড়ে চলছে অভিনেত্রী সালমা হায়েকের সৌন্দর্য যেন আরও প্রকাশ পাচ্ছে। সব মিলিয়ে ট্রেন্ডিংয়ে উঠে এসেছেন সালমা। নিজের ফ্যাশন, স্টাইল আর জীবনযাপন নিয়ে বরাবরই বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলে থাকেন। সালমা হায়েকের সঙ্গে তার পোষা প্রাণীদের সম্পর্ক খুবই মধুর। মেক্সিকান এই অভিনেত্রী প্যাঁচা পোষেন। সেই প্যাঁচাকে নিয়ে প্রচ্ছদও করেছে নিউইয়র্ক আর পিপল ম্যাগাজিন। সে কথা বলতেই হেসে দিলেন হায়েক। বলেন, ‘আমার ঘোড়া আর অ্যালপাকাসও (পেরুদেশীয় মেষবিশেষ) আছে। ছোট ছোট খরগোশ আর মুরগিও আছে। তবে মুরগিগুলো খুবই ফানি। একটুও স্মার্ট নয়। আমার যখন মুড অফ থাকে, আমি ওদের দেখি। ওদের কিচকিচ, চিকচিক শুনি। ওরা কীভাবে হাঁটে, তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে লক্ষ করি। আর মন ভালো হয়ে যায়। আমার বুড়ো একটা ঘোড়া আছে। ওর বয়স ৩৮। ও বোধ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বুড়ো ঘোড়া। আমি নিশ্চিত নই। আমি ওদের প্রত্যেককে খুব ভালোবাসি।’
এ সাক্ষাৎকারেই সালমা প্রথম নিজের পোষা প্রাণীদের নিয়ে এতটা খোলামেলা আলাপ করলেন। লন্ডনের বাড়িতে বসে স্বামী ফ্রান্সিস হেনরি পিনাট ও মেয়ে ভ্যালেন্টিনাকে নিয়ে জুম কলে চলে এই আলাপ। এ সাক্ষাৎকারে সালমা কথা বলেছেন ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও। অন্যদিকে, ফ্রাঙ্কো ৬০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদের মালিক। বিশ্বের সেরা ধনীদের একজন তিনি। এ জন্য সমালোচকেরা প্রায়ই বলে, ফ্রাঙ্কোকে নয়, তার সম্পদ আর স্ট্যাটাসের প্রেমের পড়ে তাকে বিয়ে করেছিলেন সালমা। এ অভিযোগের কড়া সমালোচনা করে সালমা বলেছিলেন, অর্থ দিয়ে নাকি তার হৃদয় কেনা যায় না। এবার জানালেন, তিনি ভাগ্যবান। কেননা, জীবনে তার সত্যিকারের ভালোবাসার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে। ১২ বছরের দাম্পত্যজীবন আর ১৫ বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক নিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘১৫ বছর পেরিয়ে গেল। আমার এখনো ওকে আগের মতোই ভালো লাগে। আমরা এখনো একজন আরেকজনকে হাসাই, বুঝি। আমি আমার বিয়ে আর সন্তান নিয়ে খুবই গর্বিত। খুব কম সৌভাগ্যবান মানুষেরই জীবনে ভালোবাসার সঙ্গে দেখা হয়। আমি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন।’
তার ফ্যাশন নিয়ে বরাবরই চলে অনেক আলোচনা। অসাধারণ ফ্যাশন সেন্সের জন্য প্রশংসিত হন। ২০২৪ সালে কানের লালগালিচায় তাকে দেখা যায় চুমকি লাগানো কালো স্ট্র্যাপলেস গাউনে। বয়স যে কোনোভাবেই তাকে কুপোকাত করতে পারেনি, সেটাই যেন আবারও নীরবে মহাসমারোহে জানিয়ে দিলেন তিনি। পোশাকের নকশার মতোই সালমা হায়েক দ্যুতি ছড়াচ্ছিলেন চারদিকে। কালো গাউনের সঙ্গে জ্যামিতিক নকশার একটি সোনালি ব্যাংগেল পরেছিলেন সালমা হায়েক। হাতে ছিল কালো চামড়ার পার্স। প্রবাল রঙের পাথর, কালো পাথর আর হীরা দিয়ে সাজানো চোকারের সঙ্গে নজর কেড়েছে সোনার শিকলে ঝুলতে থাকা ফুলের বড় লকেটটিও।
সালমাকে ‘দ্য এলেন ডিজেনারাস শো’তে জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনার কী কী পোষা প্রাণী আছে? উত্তরে সালমা বলেন, ‘পাঁচটি ঘোড়া, চারটি অ্যালপাকা (পেরুদেশীয় মেষ), একটি হ্যামস্টার, পাঁচটি পেঁচা, কিছু মাছ, কচ্ছপ, বানি খরগোশ, টার্কি মুরগি, দুটি হাঁস…আরও আছে নিশ্চয়ই। আমি মনে করতে পারছি না। মনে হচ্ছে অস্কারের মঞ্চে ধন্যবাদ দিচ্ছি। কে বাদ গেল, কে বাদ গেল?’ এ সময় এলেন জিজ্ঞেস করেন, পাঁচটি পেঁচা? তখন সালমা বলেন, ‘আমি কিনেছিলাম দুটি। আমাকে বলা হয়েছিল, ওরা (পেঁচারা) সাধারণত বাচ্চা দেয় না। তবে আমার মনে হয়, আমাদের বাড়ির বাতাসে কিছু একটা আছে। খুব প্রেম করতে ইচ্ছা করে! আর এ কারণেই আমার একটি হ্যামস্টার! আর ওদিকে দুটি থেকে আটটি কুকুর!’ সালমার কাছে তার পেঁচাগুলো অবস্থান নাকি জীবনসঙ্গীর ঠিক পরেই! সালমা হায়েক পোষা প্রাণী যতটা ভালোবাসেন, তার জীবনসঙ্গী ফরাসি ধনকুবের ফ্রঁসোয়া-অঁরি পিনোর ততটাই ‘এলার্জি’। শুরুতে সালমার একটা কুকুর ছিল। এরপর একদিন সালমা তার জীবনসঙ্গীকে অনুনয়-বিনয় করে বলেন, ‘শোনো, তুমি সারাক্ষণ কাজে থাকো। আমাকে সময় দাও না। আমার আর ভালো লাগছে না। আমার আনন্দময়, স্মৃতিমধুর সঙ্গ চাই…’ সালমাকে থামিয়ে দিয়ে ফ্রঁসোয়া বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘প্লিজ বোলো না তুমি ঘরে আরও একটা কুকুর আনতে চাও।’ এবার সালমা বলেন, ‘ও ডার্লিং, ও অলরেডি বাসায়। দেখো, কী সুন্দর মানিয়ে নিয়েছে। ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাচ্ছে। খেলছে। কী সুন্দর দেখাচ্ছে দুজনকে, বলো?’
আগে দুটি বানরও ছিল। ‘ডেসপারেডো’ (১৯৯৫) সিনেমায় একটি বানর ‘অভিনয়’ করেছিল। সেই বানর, আন্তোনিও বান্দেরাস আর সালমা হায়েকের মধ্যে সেটে নাকি ‘ত্রিভুজ প্রেম’-এর মতো একটা সম্পর্কও তৈরি হয়েছিল। দুই দিন ধরে সালমা সেটে আর বানরটাকে দেখছিলেন না। সেটে একদিন সালমার জন্মদিন ছিল। কেক কাটা শেষে সালমাকে একটি বড় ব্যাগ উপহার দিলেন সহকর্মী আন্তোনিও বান্দেরাস। ব্যাগ খুলতেই একলাফে বেরিয়ে এল সেই বানর! এটা নাকি সালমার জন্মদিনে পাওয়া অন্যতম সেরা উপহার!
এভাবেই ধীরে ধীরে উন্মুক্ত চিড়িয়াখানায় রূপ নিয়েছে সালমার বাড়ি। সালমা হায়েকের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ১৯৫ কোটি টাকা (২০০ মিলিয়ন ডলার)। অন্যদিকে সালমার জীবনসঙ্গী ফ্রঁসোয়া-অঁরি পিনো ৭৬ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার মালিক (৭ বিলিয়ন ডলার)। ফ্রঁসোয়া-অঁরি পিনোর বাবা ৮৭ বছর বয়সী ফ্রঁসোয়া পিনো ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা সমমূল্যের সম্পদের (৩১ বিলিয়ন ডলার) মালিক। ফ্রান্সের সেরা ধনীদের একজন তিনি। সালমা আর ফ্রঁসোয়া-অঁরি যে আলিশান ম্যানশনে থাকেন, সেটার দামই কয়েক শতকোটি টাকা! সেখানেই এই পরিবারের সদস্য হিসেবে থাকে এই প্রাণীরা।
১৯৯৫ সালে নিও-ওয়েস্টার্ন ‘ডেসপেরাডো’র মাধ্যমে হলিউডে প্রথমবার নজর কাড়েন এই অভিনেত্রী। যেখানে অভিনেতা আন্তোনিও বান্দেরাসের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন তিনি। তবে মেক্সিকান শিল্পী ফ্রিদা কাহলোর ভূমিকায় ‘ফ্রিদা’ ছবিতে তার অভিনয় আর রূপে মুগ্ধ হন দর্শকরা। এমনকি এই সুবাদে অস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর মনোনয়নও পেয়েছিলেন তিনি।
এক সংবাদমাধ্যমে জানায়, সফল চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের সুবাদে এই সম্পদ গড়ে তুলেছেন হায়েক। অস্কারে সেরা অভিনেত্রী বিভাগে প্রথম মেক্সিকান হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া, পাশাপাশি তিনি ‘ওয়াইল্ড ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’, ‘গ্রোন আপস’ ও ‘ইটারনালস’র মতো বিভিন্ন ব্লকবাস্টার উপহার দিয়েছেন। তার অভিনয় জীবন শুরু হয়েছিল ৯০ দশকের গোড়ার দিকে, যখন তিনি লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে এসেছিলেন ইংরেজি ও অভিনয় শেখার জন্য। একপর্যায়ে অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাতেও নাম লেখান তিনি। অভিনেত্রীর প্রযোজনা সংস্থার নাম ‘ভেনটানারোসা’। অন্যদিকে, একজন জনহিতৈষী হিসেবেও সুনাম রয়েছে এই অভিনেত্রীর। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন তিনি। সহিংসতার শিকার নারীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে একবার ২৫ হাজার ডলার দান করেছেন। এ ছাড়াও করেছেন প্রচুর মানবিক কাজ।
লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন: সেলিব্রেটি