আমাকে রোহিঙ্গা ভেবে ত্রাণ দিয়েছিল: আরশি

দেশের চলমান সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম রোহিঙ্গা সমস্যা। এটি মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কর্তৃক বিতাড়িত জনগোষ্ঠীর গল্প। কয়েক বছর আগে তারা ভর করে এদেশের ওপর। তাদের সেসময়ের সেই দূর্ভোগ পর্দায় তুলে ধরেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নির্মাতা সৈয়দ ওয়াহিদুজ্জামান ডায়মন্ড। ২০১৭ সালে শুরু হয় সিনেমাটির নির্মাণকাজ। পাহাড়, সাগরের বিভিন্ন দূর্গম অঞ্চলে দৃশ্যধারণের কাজ চলে রোহিঙ্গার। এতে অভিনয় করেছেন ঢালিউড অভিনেত্রী আরশি। একজন রোহিঙ্গা নারীর চরিত্রে রূপদান করেছেন তিনি। এই সিনেমায় অভিনয় করতে গিয়ে শহুরে জীবনে অভ্যস্ত আরশিকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছে অন্যভস্ত প্রতিকূল পরিবেশের সঙ্গে। এতে করে নানারকম অভিজ্ঞতা জমা পড়েছে তার ঝুলিতে। সেসব তিনি ভাগ করে নিলেন রঙবেরঙের সাথে।

রোহিঙ্গা সিনেমা নিয়ে প্রত্যাশা কেমন?

রোহিঙ্গা সিনেমাটা আমার কাছে একটা স্বপ্ন। এই ছবি করতে গিয়ে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমি এর আগে আরও দুটো সিনেমা করেছি। ওই সিনেমা দুটির তুলনায় এটি একেবারেই ভিন্ন। সেকারণে আমার স্বপ্নের জায়গাটা জুড়ে আছে ছবিটি। রোহিঙ্গা নিয়ে প্রত্যাশাটা তাই অনেক বেশি।

আমরা জানি রোহিঙ্গারা স্বভাবগতভাবে আগ্রাসী মনোভাব সম্পন্ন। তা ছাড়া অঞ্চলটাও দূর্গম। আপনি যখন সিনেমাটির সাথে যুক্ত হলেন এসব ব্যাপার ভেবে কি ভীত বা চিন্তিত ছিলেন?

না, আমার মধ্যে ভয় কাজ করেনি। আর আগ্রাসী যেটা বললেন সেটা ওরা এখন হয়েছে। শুরতে তো এমন ছিল না। এর আগে রোহিঙ্গা সম্পর্কে শুনেছি কিন্তু ওদের কাছে দেখা হয়নি। ওখানে গিয়ে ওদের দূর্দশা কাছে থেকে দেখেছি।

এই ছবিতে আপনি একজন রোহিঙ্গা। চরিত্রটির জন্য প্রস্তুতিটা কেমন ছিল?

যখন শুনি রোহিঙ্গা নামে একটা ছবি হবে তখন ভাবিনি এতটা গভীর থেকে তুলে ধরা হবে গল্পটা। এতটা বাস্তব চিত্র পর্দায় জীবন্ত করা হবে। চরিত্রটির জন্য আমাকে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে। ওদের ভাষা, আচরণগত বৈশিষ্টগুলো কাছে থেকে দেখতে হয়েছে। ওটাই আমাকে তুলে ধরতে হয়েছে। ছবিটি শুরুর আগে এসব ব্যাপার নিয়ে একাধিকবার পরিচালকের সঙ্গে আমরা বসেছি, চরিত্র নিয়ে কথা হয়েছে। কি ধরণের পোশাক আশাক হবে সেসব ব্যাপারেও নির্দেশনা মানতে হয়েছে।

আপনি এই ছবিতে কতটুকু রোহিঙ্গা হয়ে উঠতে পোরেছেন বলে মনে করছেন।

কতটুকু রোহিঙ্গা হয়ে উঠতে পেরেছি সেটা তো বলতে পারব না। এটা বলতে পারবে দর্শক। তবে হ্যাঁ, আমি আমার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। সবটুকু ঢেলে দিয়েছি।

ছবিটি করতে গিয়ে এমন কোনো ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছেন যা আজীবন মনে থাকবে?

হ্যাঁ, এরকম বেশকিছু ঘটনা আছে। একবার আমরা নাফ নদীতে শুটিং করছি। আমি তখন শুটিংয়ের কস্টিউম পরা। শুটিং শেষে ফেরার সময় আমি পেছনে পড়ে যাই। এসময় চেকপোস্টে প্রশাসনের লোক আমাকে রোহিঙ্গা ভেবে আটকে দেয়। তারা বিশ্বাসই করছিল না আমি শুটিং করছি। পরে নির্মাতা এসে আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। আর একটি ঘটনা আছে। এটিও মনে রাখার মতো। রোহিঙ্গাদের তখন অনেকেই এসে ত্রাণ দিত্ আমি তখন রোহিঙ্গার সাজে বসে আছি, শুটিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। এমন সময় দেখি এক ব্যক্তি সবাইকে ২০ টাকা করে দিচ্ছেন। তিনি আমার হাতেও ২০ টাকা গুজে দেন। আমি খুব ইতস্তত বোধ করছিলাম দেখে ওই ব্যক্তি বলেন, আরে নাও, এখন লজ্জা করার সময় না। আগে খেয়ে বাঁচো। এই ঘটনা দুটো মনে থাকবে আমার।

রোহিঙ্গা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আপনাকে যে পরিবেশে থাকতে হয়েছে এমন পরিবেশে আপনি অভ্যস্ত না। সেই হায়গা থেকে কাজটি করা কতটা চ্যালেন্জের ছিল?

হ্যাঁ এই ব্যাপারটা ঠিক বলেছেন। আমি ছোটবেলা থেকে ছিমছাম পরিবেশে বেড়ে ওঠা একটা মেয়ে। আর শুটিংয়ে গিয়ে আমাকেই পাহাড়ে সাগরে কাজ করতে হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শুটিং করতে হয়েছে। ধুলা বালি মেখে মাটিতে বসে থাকতে হয়েছে। এগুলোতো আমি অভ্যস্ত ছিলাম না। ওই জায়গা থেকে যদি বলি তবে মোটেই সহজসাধ্য ছিল না এটি।

আপনাদের দেখে কি রোহিঙ্গারা কৌতুহলী হয়নি তখন?

না, ওদের মধ্যে তখন খুব আতঙ্ক কাজ করত। মানুষ দেখলে তারা দৌড়ে পালাত। নিজেদের বাইরে কথা বলত না। আমি কাজ করতে করতে ওদের বাচ্চাদের সাথে কথা বলতাম। ওদের নারীরা খুব রোগা। ওদের বলতাম এই যে প্রতিরছর সন্তান জন্ম দিচ্ছেন এতে শরীর খারাপ করছে, ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। কিন্তু ওদের এক কথা, আল্লাহর দান আল্লাহ দেন।

রোহিঙ্গা সিনেমা দর্শককে কী বার্তা দেবে?

দেশের সবাই রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে শুনেছেন কিন্তু কাছে থেকে দেখেছেন খুব কম মানুষজন। এই ছবি দেখলে তারা রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতিগুলো ভালোভাবে জানতে পারবে। যেমন আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি যারা তারা নাটক সিনেমা দেখে বিষয়টি উপলব্ধি করতে চেষ্টা করছি। রোহিঙ্গা সিনেমাও তেমন। ওদের সম্পর্কে দর্শক জানতে পারবেন। আর একটা বিষয় হলো, আমরা যারা জীবন নিয়ে হতাশায় ভুগি তাদের এই ছবি দেখা উচিত। তাহলে তারা বুঝতে পারবে কতটা সংগ্রাম করে রোহিঙ্গারা জীবনযাপন করছে। কতটা কষ্ট করে তারা টিকে আছে। এসব দেখে নিশ্চয় হতাশায় ডুবে থাকা মানুষেরা জীবনের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবেন। জীবন মানে যে হতাশায় না ডুবে প্রতিনয়ত সংগ্রাম করে এগিয়ে যাওশা এটা উপলব্ধি করতে পারবে।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

three × 5 =