‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’: ১৫ দিনে ২১ প্রদর্শনী

‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নাটকের দৃশ্য। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার স্পর্ধার নতুন প্রযোজনাটির প্রাক-উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়

‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নাটকের দৃশ্য। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার স্পর্ধার নতুন প্রযোজনাটির প্রাক-উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়শুভ্র কান্তি দাশ

একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের নিয়ে ১৯৯৪ সালে আমি বীরাঙ্গনা বলছি নামে একটি বই লিখেছিলেন নীলিমা ইব্রাহিম। প্রায় তিন দশক পর সেই বই অবলম্বনে একই নামে মঞ্চনাটক নিয়ে আসছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে নাটকটির কারিগরি প্রদর্শনী হয়েছে।

নাটকে দুই বীরাঙ্গনা ময়না ও মেহেরজানের বয়ানে তাঁদের ওপর চলা নির্মমতার কথা তুলে ধরা হয়েছে। কারিগরি প্রদর্শনী শেষে সৈয়দ জামিল আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দায়বদ্ধতা থেকেই নাটকটি করেছেন তিনি।

নাটকে ‘মেহেরজান’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মহসিনা আক্তার। বয়স কম, শরীর কী, তা বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে নির্যাতিত হতে হয়েছে। তাঁর হৃদয়ের অন্তহীন হাহাকার আর আর্তনাদ দর্শকের মন ছুঁয়ে যায়।

প্রদর্শনী শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা বলি, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা, আমার চাচা মুক্তিযোদ্ধা; আমি নিজেও বলি, আমার শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা, আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করেছেন। কিন্তু কাউকে বলতে শুনি না, আমার মা বীরাঙ্গনা। আমরা পারিনি।’ আরেক বীরাঙ্গনা ‘ময়না’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শারমিন আক্তার। দুই বীরাঙ্গনার বয়ানের পাশাপাশি আমি বীরাঙ্গনা বলছি বই থেকে আরও নানা তথ্য উপজীব্য করে সাজানো হয়েছে নাটকটি।

টানা ১৫ দিন একই মঞ্চে নাটকটির ২১টি প্রদর্শনী করবে নাট্যদল স্পর্ধা: ইনডিপেনডেন্ট থিয়েটার কালেকটিভ। দলটি জানিয়েছে, ইতিমধ্যে পাঁচটি শোর সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে, আরও চারটি শোর আশি ভাগ টিকিট শেষ।

আজ শুক্রবার বিকেল চারটায় নাটকটির উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে; সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় থাকছে আরেকটি প্রদর্শনী। ১৭ জুন বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়; ১৮ থেকে ২২ জুন সন্ধ্যা ৭টায়; ২৩ ও ২৪ জুন বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়; ২৫ থেকে ২৭ জুন সন্ধ্যা ৭টায় নিয়মিত প্রদর্শনী রয়েছে। ২৮ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়; ২৯ জুন বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়; ৩০ জুন বিকেল ৪টায় ঈদের বিশেষ প্রদর্শনী ও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সমাপনী প্রদর্শনী থাকছে।

নাটকটি নির্দিষ্টসংখ্যক প্রদর্শনীর পর বন্ধ হবে কি না, জানতে চাইলে সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, ‘তিন মাস অমানুষিক পরিশ্রম করেছেন সবাই। এই পরিশ্রমের পর নাটকটি আরেকবার মঞ্চে আনতে গেলে আবারও পরিশ্রম করতে হবে। তার চেয়ে আরেকটা নাটকই করা যাবে।’

মূল দুই চরিত্রের বাইরে এতে আরও অভিনয় করেছেন বুড়ী আলী, শ্রাবণী ফেরদৌস, আরমীন মূসা, সোহেল রানা, সরওয়ার জাহান, সিফাত নওরীন, জৌপারী লুসাই, রিয়াসাত সালেকিন ও উম্মে আইমান।

নির্দেশনার পাশাপাশি মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা এবং সংগীতও নির্বাচন করেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। ড্রামাটার্গ ও পোশাক পরিকল্পনায় মহসিনা আক্তার, সহকারী নির্দেশনায় এম এস রানা, সংগীতে থাকছেন আরমীন মূসা ও ঘাসফড়িং কয়্যার।

মাঝে দীর্ঘ বিরতির পর ২০১৭ সালে রিজওয়ান দিয়ে মঞ্চে ফেরেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। এরপর ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর গঠিত হয় নাট্যদল স্পর্ধা। এরপর জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, ৪.৪৮ মন্ত্রাস, বিস্ময়কর সবকিছু মঞ্চে এনেছেন তিনি।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

17 + 6 =