আলী যাকের-ইরেশ যাকেরের জন্মদিন আজ

বাবা দেশের কিংবদন্তি অভিনেতা। ছেলে বাবার পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছেন। মজার বিষয় হচ্ছে এই বাবা-ছেলের জন্মদিন একই দিনে। তারা হচ্ছেন আলী যাকের ও ইরেশ যাকের। দুজনেই জন্মেছেন ৬ নভেম্বর। আজ বাবা-ছেলের জন্মদিন। মঞ্চ কাঁপানো অভিনেতা আলী যাকের। টিভি নাটকেও সমান আধিপত্য করে নেওয়া এ অভিনেতার ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্ম। চট্টগ্রামে ফিরিঙ্গি বাজার বলে একটি জায়গা রয়েছে, সেখানকার সদর স্ট্রিটের এক বাড়িতে তার জন্ম। বাবা মোহাম্মদ তাহের, মা রেজিয়া তাহের। বাবা তৎকালীন মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) ছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে বাবা নীলফামারীতে বদলি হলে সেখান থেকে ফেনী, ফেনী থেকে খুলনা, খুলনা থেকে কুষ্টিয়া, কুষ্টিয়া থেকে ঢাকা। এর মধ্যে কিছুদিন দার্জিলিংয়েও ছিলেন তিনি।

আলী যাকেরের রয়েছে দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ নাট্যজীবন। ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে মামুনুর রশীদের নির্দেশনায় মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকটিতে প্রথম অভিনয় করেন এই অভিনেতা। যার প্রথম প্রদর্শনী হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনে। ১৯৭২ সালের জুন মাসের দিকে আতাউর রহমান ও জিয়া হায়দারের আহ্বানে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। ওই দলে তিনি আতাউর রহমানের নির্দেশনায় ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ নাটকে অভিনয় করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে তিনি প্রথম নির্দেশনা দেন বাদল সরকারের ‘বাকি ইতিহাস’ নাটকে, যা ছিল বাংলাদেশে প্রথম দর্শনীর বিনিময়ে নাট্য প্রদর্শনীর যাত্রা। আলী যাকের এরপর টিভি নাটকে ব্যস্ত হন। পান অসীম জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের বেশিরভাগ নাটকে তার চরিত্রগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছে আকাশছোঁয়া। অভিনয় করেছেন চলচ্চিত্রেও। তবে মঞ্চের সঙ্গে তার সংযুক্তি ছিল আমৃতু্য। ছিলেন দারুণ সঞ্চালকও। দীর্ঘ সময় তিনি এই কাজটি সফলতার সঙ্গে করেছেন চ্যানেল আই ও বাংলাভিশনের পর্দায়। আলী যাকের অভিনয়ের পাশাপাশি দেশীয় বিজ্ঞাপনশিল্পের একজন পুরোধা ব্যক্তিত্বও বটে। বাংলাদেশের শীর্ষ বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটির কর্ণধার ছিলেন তিনি।

শিল্পকলায় অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদক এবং মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার লাভ করেছেন।

আলী যাকের একসময় নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের জন্য বিশ্বখ্যাত বিদেশি নাটকের বাংলা রূপান্তর আর নাটক নির্দেশনা- এসব কাজে তিনি ব্যস্ত ছিলেন। ১৯৭৩ সালে ওই দলে যোগ দেন সারা যাকের, যাকে শুরুতে চোখেই পড়েনি তার! একটি নাটকের প্রদর্শনীর আগের দিন একজন অভিনেত্রী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে গেলে সারা যাকেরকে দেওয়া হয় চরিত্রটিতে অভিনয় করতে। আলী যাকেরের ওপর দায়িত্ব পড়ে চরিত্রটার জন্য তাকে তৈরি করার এবং খুব দ্রম্নত চরিত্রটির সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেন সারা যাকের। এই প্রতিভায় মুগ্ধ হন আলী যাকের। ১৯৭৭ সালের এই ঘটনার রেশ ধরেই আলী যাকের আর সারা যাকেরের বিয়ে হয়। এই দম্পতির দুই সন্তান, পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের ও কন্যা শ্রিয়া সর্বজয়া।

আলী যাকের অভিনীত উলেস্নখযোগ্য কাজগুলোর মধ্যে হলো-

চলচ্চিত্র :আগামী, নদীর নাম মধুমতী, লালসালু, রাবেয়া, টেলিভিশন প্রভৃতি।

ধারাবাহিক নাটক :বহুব্রীহি, আজ রবিবার, একক নাটক, একদিন হঠাৎ, নীতু তোমাকে ভালোবাসি, পাথর সময়, অচিনবৃক্ষ, আইসক্রিম, পান্ডুলিপি, গণি মিয়ার পাথর প্রভৃতি।

মঞ্চ নাটক :কবর, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, বাকি ইতিহাস, বিদগ্ধ রমণীকুল, তৈল সংকট, এই নিষিদ্ধ পলস্নীতে, দেওয়ান গাজীর কিস্‌?সা, সৎ মানুষের খোঁজে, অচলায়তন, কোপেনিকের ক্যাপ্টেন, ম্যাকবেথ, টেমপেস্ট, নূরলদীনের সারাজীবন, কবর দিয়ে দাও, গ্যালিলিও, কাঁঠাল বাগান প্রভৃতি।

অন্যদিকে ইরেশ যাকের জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৬ সালের ৬ নভেম্বর। বিভিন্ন উপলক্ষে টিভি নাটকে তার দেখা মেলে। এখন চলচ্চিত্র ও টিভি নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছেন তিনি। ছেলে ইরেশ বলেন, ‘আমার আর বাবার জন্মদিন একই দিনে এটা ভাবতেই অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে। বড়বেলার জন্মদিনের চেয়ে ছোটবেলার জন্মদিন বেশি মজার ছিল। তবে জন্মদিনটায় আমি বাবার জন্মদিনটাকেই বেশি গুরুত্ব দিই।’

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

four × three =