আশা ভোঁসলের জন্মদিন আজ

‘আমি চাই মানুষ আমাকে মনে রাখুক সেই নারী হিসেবে, যে সৎ মন নিয়ে আপ্রাণ কাজ করেছে। যে কাজ থেকে কখনো পালিয়ে যায়নি। যে কাজ পেলেই এনার্জি পেয়ে গেছে। যে মঞ্চে পারফর্ম করেই বসে থাকেনি। যে স্টেজ থেকে নেমে আবার সংসারটা চালিয়েছে। যে নিজে রান্না করেছে। যে পরিবারের সবাইকে দেখেছে। যে কর্তব্য সামনে দেখলেই নতুন এনার্জিতে ভরপুর হতে পেরেছে।’ কথাগুলো বলেছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী আশা ভোঁসলে। আজ তার জন্মদিন। ১৯৩৩ সালের আজকের দিনে মহারাষ্ট্রের সাংলিতে মঙ্গেশকর পরিবারে জন্ম তার। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন পুনে থেকে কোলহাপুরে এবং পরবর্তী সময়ে মুম্বাইয়ে। ১৯৪৩ সালে জীবনে প্রথমবার সিনেমায় গান করেন আশা। মারাঠি সিনেমা ‘মাঝা বাল’-এর ‘চালা চালা নভ বালা’ গানটি শোনা যায় তার কণ্ঠে। হিন্দি সিনেমার জগতে পা রাখা ১৯৪৮ সালে হংসরাজ বেহলের ‘চুনারিয়া’ দিয়ে। তবে হিন্দি সিনেমাতে আশার প্রথম একক গান শোনা গিয়েছিল ১৯৪৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রাত কি রানি’তে। ১৯৫০ সাল থেকে হিন্দি সিনেমার জগতে ধীরে ধীরে শুরু হয় তার উত্থান। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে গান করছেন কিংবদন্তি এ শিল্পী। তার গান শ্রোতাদের এখনো মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে। ভারতের বিভিন্ন ভাষায় গান করেছেন তিনি; গেয়েছেন সংগীতের বিভিন্ন ধারায়। সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ড করার জন্য গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে তার নামও রয়েছে। পেয়েছেন দাদাসাহেব ফালকে, পদ্মবিভূষণসহ নানা পুরস্কার। এখনো গান করছেন আশা। একবার সংবাদমাধ্যমে নিজের শেষ ইচ্ছার কথা জানান এভাবেÑ ‘যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে, ততক্ষণ গান গেয়ে যেতে চাই।’

এক জীবনে কত গান, কত বিচিত্র সুরেই না গেয়েছেন আশা। যে কণ্ঠে তিনি গেয়েছেন ‘ছোটাসা বালমা’, ‘মেরা মন দর্পণ’-এর মতো রাগপ্রধান গান; তেমনি সেই কণ্ঠে তুলেছেন ‘ভোমরা বড়া নাদান’, ‘ঝুমকা গিরা রে’, ‘পিয়া তু আব তো আজা’, ‘দম মারো দম’, ‘চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে’-এর মতো আসর জমানো গান। আজও এসব গানে কনসার্ট তুঙ্গে ওঠে। এখনো এসব গানের রিমিক্স হয়। শুধু কি হিন্দি সিনেমার গান? সেই সময়ের সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় শাসিত ভারতীয় বাংলা সিনেমায় ঢুকতে খুব বেশি সময় লাগেনি আশার। চলচ্চিত্রের গানের পাশাপাশি নানা ধরনের নিরীক্ষামূলক গানেও পারঙ্গমতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। গুলাম আলির সুরে ‘মিরাজ-ইয়ে-গজল’ সংকলন, হরিহরণের সুরে গজল সংকলন ‘অবসর-ইয়ে-গজল’, জয়দেবের সুরে ‘সুরাঞ্জলি’ তারই উদাহরণ। কোনো কোনো বিরূপ সমালোচনাকে ছাপিয়ে আশার গাওয়া রবীন্দ্রসংগীতের অ্যালবামও দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছে শ্রোতামহলে। আবার নজরুলের গান কণ্ঠে নিয়েও সংগীতপ্রিয় শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

12 + nine =