আসিয়ানে যোগদানের প্রচেষ্টায় অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্ভাবনা তুলে ধরেছে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশসমূহের আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হওয়ার প্রচেষ্টা জোরদার করছে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সুবিধাসমূহকে আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার মূল চাবিকাঠি হিসেবে তুলে ধরেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের ১৭ কোটিরও বেশি জনসংখ্যা আসিয়ানকে একটি বৃহৎ বাজার ও আঞ্চলিক শিল্পের জন্য দক্ষ জনশক্তি সরবরাহ করতে পারে। পাশাপাশি দেশের অপ্রচলিত অর্থনৈতিক সম্ভাবনা যৌথ সহযোগিতা ও প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করছে।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটির জাতীয় বার্তা সংস্থা বারনামা’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, বিনিয়োগের অনেক অনাবিষ্কৃত খাত রয়েছে, যা মিয়ানমারের সঙ্গে সহজে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। যেমন- আমরা গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকার করি না। অথচ আমাদের সামনে বিশাল সমুদ্র রয়েছে, কিন্তু কখনও তা কাজে লাগানো হয়নি। তাই মিয়ানমারকে সঙ্গে পেলে গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হবে। কারণ আমরা একই সমুদ্র ভাগাভাগি করি।

দক্ষিণ এশীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে আসিয়ানের সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার মর্যাদা পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। গত বছরের আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব¡ গ্রহণের পর থেকে অধ্যাপক ইউনূসের প্রচেষ্টার বিষয়টি নতুন গতি পেয়েছে।

নোবেল বিজয়ী এই অধ্যাপক গত ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়া সফরকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ও বর্তমান আসিয়ান চেয়ার আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।

তিনি বলেন, গত বছরের ৪ অক্টোবর আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফরের পর থেকে আমরা আসিয়ানে যোগদানের বিষয়টি নিয়ে কথা বলে আসছি। এ সফরে আমরা আবারও বিষয়টি উত্থাপন করি। এ প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে তিনি অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছেন।

তবে অধ্যাপক ইউনূস স্বীকার করেন, এ উদ্যোগে কিছু সদস্য রাষ্ট্র আপত্তি তুলতে পারে।

তিনি বলেন, এতে সময় লাগবে, তবে আমরা হাল ছাড়ব না। আমাদের যৌক্তিকতা আছে—আমরা প্রতিবেশী দেশ। আমরা এগিয়ে যাব। যখন আমরা দেখতে পাব আসিয়ানের মধ্যে আমাদের কিছু সমর্থক রয়েছে, তখন আমাদের জন্য এটি সহজ হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ২০০৭ সাল থেকে আসিয়ানের ‘ট্রিটি অব অ্যামিটি অ্যান্ড কো-অপারেশন ইন সাউথইস্ট এশিয়া (টিএসি)’-এর সদস্য। দেশটি আসিয়ান রিজিওনাল ফোরামেরও অংশগ্রহণকারী। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ আসিয়ানে প্রথম রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয় এবং ২০১৪ সালে ঢাকায় আসিয়ান কমিটি প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল আসিয়ানের প্রোফাইল উন্নত করা ও বাংলাদেশ-আসিয়ান সহযোগিতা জোরদার করা।

১৯৬৭ সালের ৮ আগস্ট গঠিত আসিয়ানের বর্তমানে ১০টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। এগুলো হলো ব্রুনাই, কম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম।

আসিয়ান ও বাংলাদেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমোন্নতির দিকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিশ্বে জিডিপির আকারের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৫তম এবং ক্রয়ক্ষমতার সক্ষমতায় ২৫তম।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

1 × 4 =