ইতিহাস সৃষ্টি করে ভারতের মেয়েরা দুর্দান্ত অস্ট্রেলিয়ানদের পরাজিত করলো

সালেক সুফী

কাল নারী বিশ্ব ক্রিকেটে দুই বিশ্বসেরা দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই মন ভরে উপভোগ করলাম। উপলক্ষ্য ছিল ২০২৫ আইসিসি মেয়েদের ওডিআই বিশ্বকাপে শিরোপাধারী অস্ট্রেলিয়া এবং শক্তিশালী ভারতের মধ্যে সেমি ফাইনাল। গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে প্রচন্ড দাপটে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা অস্ট্রেলিয়া অপরাজেয় মনে হচ্ছিলো। স্বাগতিক ভারত কিন্তু গ্রুপ পর্যায়ে পর পর তিনটি ম্যাচ হেরে একটু ব্যাকফুটে ছিল। নাভী মুম্বাই ব্যাটিং সহায়ক র্স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাটিং করে অস্ট্রেলিয়া ৩৩৮ রান করায় অনেকেই ধরে নিয়েছিল ভালো বোলিং এবং তুখোড় ফিল্ডিং করে ম্যাচ জিতে নিবে অস্ট্রেলিয়া। উপরন্তু ভারত ইনিংসের শুরুতে এই ম্যাচে প্রথম খেলা শেফালী ভার্মা এবং বিশেষ করে টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুন ফর্মে থাকা ভারতের স্মৃতি মান্দানা আউট হয়ে গেলে ভারতের পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত ভাবা হচ্ছিলো। কিন্তু এই সময় প্রথম বারের মোট ৩ নম্বরে ব্যাটিং করা জেমাইমা রড্রিগ ( ১২৭*) অধিনায়ক হার্মান প্রীতকে (৮৯) সাথী করে আস্থার সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ালো। তৃতীয় উইকেট জুটির ১৬৭ রানের জুটি ভারতকে ম্যাচ জয়ের প্লাটফর্ম গড়ে দিলো। হয়ত জীবনের শ্রেষ্টতম ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত রড্রিগ ভারতকে বিশাল স্কোর ( ৩৪১/৫) করে স্বস্তিদায়ক জয় উপহার দিলো। বিশ্বকাপ  ক্রিকেটে ছেলে অথবা মেয়ে কোনো দল এত বড় টার্গেট তাড়া করে জয় পায়নি। ৫ উইকেটে জয়ী ভারত এখন ফাইনাল খেলবে দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিরুদ্ধে। হতবাক অস্ট্রেলিয়ার অজেয় মিশন ছেদ পড়লো।

স্মরণে থাকতে পারে গ্রুপ পর্যায়ে একই ভাবে ভারতের সেট করা বিশাল টার্গেট তাড়া করে জয়ী হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। গুনে মানে অভিজ্ঞতায় অস্ট্রেলিয়ার মেয়ে দলটি প্রায় অপ্রতিদ্বন্দী। ভারতকেও খুব একটা পিছিয়ে রাখা যাবেনা। তবে বিশ্ব পর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ান মেয়েদের রেকর্ড অতুলনীয়। গ্রুপ পর্যায়ে তীরে এসে তরী ডুবা তিন ম্যাচ হেরে ভারত কিছুটা ব্যাকফুটে ছিল। উপরন্তু টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুন ফর্মে থাকা প্রতিকা রাওয়াল আহত হয়ে ছিটকে পড়ায় শেষ মুহূর্তে শেফালী ভার্মাকে খেলতে হলো। টিম কম্বিনেশন কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু কাল দলের অস্বস্তিকর সময়ে যেভাবে জেমিমা রড্রিগ অসামান্য দক্ষতা আর দৃঢ়তার সঙ্গে ব্যাটিং করেছে তুলনা মেলা ভার। সঙ্গে অধিনায়ক হামপ্রীত কাউর যোগ্য সাথী হয়ে বীরের মত লড়াই করেছে। নিঃশাস স্তব্ধ হয়ে যাওয়া ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্ত বিশ্ব জোড়া ক্রিকেট আমুদেরা দারুন উপভোগ করেছে। ম্যাচ শেষে রড্রিগের আবেগী উচ্চারণ থেকে অনুধাবন করেছে সবাই দলের জয়ের জন্য কিভাবে নিজেকে প্রয়োগ করে খেলেছে।

অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসে কাল কিন্তু অধিনায়ক এলিসা হিলি বরাবরের মত সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু হিলির ওপেনিং সাথী ফোৱে লিচফিল্ড কাল খেলেছে অনবদ্দ ১১৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি এলিসা পেরিকে (৭৭) সঙ্গী করে দ্বিতীয় উইকেট জুটির ১৬৫ রান অস্ট্রেলিয়াকে বিশাল স্কোর গড়ার ভিত গড়ে দিয়েছিলো। মিডল অর্ডারে আশলে গার্ডনার (৬৩) রান ছাড়া অন্যানোরা খুব বেশি কিছু করতে পারেনি। তবুও সেমি ফাইনালের মত স্নায়ু চাপের ম্যাচে ৩৩৯ রানের টার্গেট নিঃসন্দেহে বিশাল ছিল।

অস্ট্রেলিয়া কিন্তু ভারতের শেফালী ভার্মা আর স্মৃতি মান্দানার উইকেট স্বল্প রানেই তুলে নিয়েছিল। কিন্তু জয়ের জন্য কৃতকল্প জেমিমা রড্রগে আর  অধিনায়ক হারমান প্রীতের অনবদ্য ব্যাটিং ভারতকে জয়ের পথে এগিয়ে দেয়।  বিশেষ করে দলের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে রড্রিগ শেষ পর্যন্ত ১৩৪ বল খেলে অপরাজিত ১২৭ রান করে ভারতের জয় নিশ্চিত করে। ছোট ছোট অথচ কার্যকরী ইনিংস খেলে সহায়তা করে রিচা ঘোষ (২৬) এবং দীপ্তি শর্মা (২৪)। ৪৮.৩ ওভারে ৩৪১./৫ করে ৫ উইকেটে ম্যাচ জয় করে ভারত। এমনি ধরণের হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচ ক্রিকেটকে অনুপম সৌরভে সুরভিত করে। টেকনোলজির কল্লানে বিশ্বজোড়া ক্রিকেট অনুরাগীরা উপভোগ করে। এই ম্যাচে চাপে থেকেও তুখোড় এবং আগ্রাসী অস্ট্রেলিয়ান বোলিং মোকাবিলা করে যেভাবে দলকে জয়ী করেছে জেমাইমা সেটি দেখে তরুণ ক্রিকেটারদের অনেক কিছু শিক্ষার আছে।

ভারত এখন ফাইনালে ওপর শক্তিশালী দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলবে। হয়ত আরেকটা ব্লকবাস্টার ম্যাচ হবে। দেখার অপেক্ষায় থাকুন।

মেয়েদের ওডিআই বিশ্বকাপ ২০২৫

অস্ট্রেলিয়া ৩৩৮ আল আউট (ফোবে লিন্চফিল্ড ১১৯, এলিসা পেরি ৭৭, আশলে গার্ডনার ৬৩, শ্রী চারানি ২/৪৯, ডিপি শর্মা ২/৭৩)

ভারত ৩৪১/৫ (জেমাইমা রড্রিগ ১২৭*, হারমানপ্রীত কাউর ৮৯, রিচা ঘোষ ২৬, স্মৃতি মান্দানা ২৪, কিম গ্রাথ ২/৪৬, আন্নাবেল সাদারল্যান্ড ২/৬৯)

ভারত ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : জেমাইমা রড্রিগ

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

2 × 3 =