মন্তব্য প্রতিবেদন
আইরিন খাতুন: ৯ এপ্রিল শনিবার। বিকেল তিনটা। নিউজের কাজ শেষ। অফিসে ফেরার পালা। ফার্মগেটে সিগন্যাল বসে আছি। হঠাৎ আমাদের গাড়ির পাশে ঘেঁষে এক মুড়ালি বিক্রেতা (ভাসমান হকার) যাচ্ছে। যেতে যেতে আমাকে একটা নোংরা ইঙ্গিত। অবাক হই, চোখ কচলাই। আমাকেই কি এ ইঙ্গিত? এরপর আবারও নোংরা ইঙ্গিত? কি সাহস ভাবা যায়! গাড়ি থেকে নেমে পাশে দাঁড়ানো পুলিশ সদস্য আবদুলকে ঘটনাটি জানাই। ওই পুলিশ সদস্য জানান, কিছুক্ষণ পর এখান থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাবেন তাই তিনি কিছুই করতে পারবেন না….
সামনে আগাই এরই মধ্যে আমাদের জ্যেষ্ঠ ভিডিওগ্রাফার রেজওয়ান ভাইও এগিয়ে আসেন। হকার সামনে এগিয়ে গেলে আমি গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করি কেন, এমন করলেন? প্রশ্ন শুনে এবার ওই হকার গালি দেন। আর পুরো ঘটনাটি সেখানে দাঁড়ানো পুলিশদের বললে তারা হাসাহাসি করে! অবস্থা বেগতিক দেখে রেজওয়ান ভাই ওই হকারকে চড় দেয়। এমন সময় ঘটনাস্থলে হাজির হন হুজুর টাইপের দুজন। তারা কোন কিছু না শুনেই রেজওয়ান ভাইয়ের ওপর চড়াও হয়। আর ঘটনা শোনার পর, হুজুর টাইপের দুজনের বক্তব্য, পুরুষরা যা ইচ্ছা বলবে, যা কিছু করবে নারী হয়ে এসব সহ্য করতে হবে???
অথচ দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারায় বলা আছে, যদি কেউ কোনো নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে কথা, অঙ্গভঙ্গি বা কোনো কাজ করে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত যেকোনো মেয়াদের সাজা বা অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অধ্যাদেশের ৭৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কেউ কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে বা সেখান থেকে দৃষ্টিগোচরে স্বেচ্ছায় এবং অশালীনভাবে নিজ শরীর এমনভাবে প্রদর্শন করে, যা কোনো গৃহ বা দালানের ভেতর থেকে হোক বা না হোক, কোনো নারী দেখতে পায় বা স্বেচ্ছায় কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনো নারীকে পীড়ন করে বা তার পথ রোধ করে বা কোনো রাস্তায় বা সাধারণের ব্যবহার্য স্থানে কোনো অশালীন ভাষা ব্যবহার করে, অশ্লীল আওয়াজ, অঙ্গভঙ্গি বা মন্তব্য করে কোনো নারীকে অপমান বা বিরক্ত করে, তবে সেই ব্যক্তি ১ বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডে অথবা ২ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এ ঘটনা চাইলে কিন্তু পুলিশ আমাকে সাহায্য করতে পারতো। আইনও তাই বলে। তা না করে ওই হকারের গালি শুনে পুলিশ সদস্যদের হাসাহাসি, ইভটিজিং করতে আরো উৎসাহ জোগায় কিনা সেটা ও বড় প্রশ্ন? এ শহরে এমন নারী খুঁজে পাওয়া দুস্কর যে কখনো কোনো দিন ইভ টিজিংয়ের শিকার হয়নি! সে বোরকার নিচেই থাকুক কিংবা পশ্চিমা ধাচের পোশাকই পরুক। আর যে পেশাতেই থাকুক।
আজ আমি লিখছি। কাল হয়তো অন্য কেউ লিখবে। এভাবেই ‘টিজিং’ নামক নোংরামির সাথে পথ চলতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। হতাশায় ভুগে প্রতিবাদ না করে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। এ কেমন দেশে বাস করছি আমরা? কেন আমাকে রাস্তায় বের হলে টিজিং এর স্বীকার হতে হবে? পুরুষদের এ কী ধরনের বিকৃতি? প্লিজ এ বিকৃতি বন্ধে সবাই উদ্যোগ নিন। আজ আমার সঙ্গে হয়েছে কাল তো আপনার বোন, মেয়ে কিংবা নিকটাত্মীয় কারো সঙ্গে হতে পারে…! প্লিজ রুখে দাঁড়ান।
ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট, ইনডিপেনডেন্ট টিভি, ঢাকা