পরমাণু চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই ইরানে বড় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্র এবং সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালনো এই হামলায় নিহত হয়েছেন দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাসহ পরমাণু বিজ্ঞানীও।
ইসরায়েলের এই হামলার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের হাত আছে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও ইরানে হামলা শুরুর পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে স্পষ্টই জানিয়েছিলেন, এতে তাদের কোনও হাত নেই। খবর বিডিনিউজ২৪.কম
রুবিও বলেছিলেন, “ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে একতরফা পদক্ষেপ নিয়েছে। এই হামলায় আমরা জড়িত নই। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকারের বিষয় হচ্ছে ওই অঞ্চলে আমাদের স্বার্থ ও কর্মকর্তাদেরকে রক্ষা করা।
“ইসরায়েল আমাদেরকে জানিয়েছে যে, তারা বিশ্বাস করে আত্মরক্ষার স্বার্থে এই বিমান হামলা জরুরি ছিল।” ইরানকেও বার্তা দিয়ে রুবিও বলেছিলেন, পাল্টা হামলায় যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত না হানে।
রুবিও প্রকাশ্যে অস্বীকার করলেও ইরান সঙ্গে সঙ্গেই ইসরায়েলের এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগ করে। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কথায় বিষয়টি নিয়ে জল্পনা আরও জোরাল হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, শুক্রবার ট্রাম্প ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-কে বলেছেন, তিনি ও তার টীম ইরানে ইসরায়েলের হামলার পরিকল্পনা আগে থেকেই জানতেন।
‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ লিখেছে, ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্র কতগুলো নোটিস বা আগাম সতর্কবাণী পেয়েছে?- এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, “এটি সতর্কবাণী ছিল না। আসলে আমরা জানতাম কী ঘটছে।”
ট্রাম্প বলেন, তিনি বৃহস্পতিবারেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আবার শুক্রবারও নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার কথা আছে বলে জানান তিনি।
কেবল তাই নয়, ইরানে ইসরায়েলের হামলাকে ‘খুব সফল হামলা’ বলেও ট্রাম্প প্রশংসা করেছেন। যদিও সিএনএন এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানে হামলার আগে ট্রাম্প চাননি ইসরায়েল হামলা চালাক।
কিন্তু ইসরায়েলের হামলার পরে এ হামলায় অনেকটা প্রচ্ছন্ন সমর্থনের সুরই শোনা গেছে ট্রাম্পের কণ্ঠে। তিনি বলেছেন, “আমি অপরপক্ষকে (ইরান) বলেছি, আপনাদের চুক্তি (পারমাণবিক) করার জন্য ৬০ দিন সময় আছে।
“আর ৬১ তম দিনেই তারা (ইসরায়েল) হামলা চালাল। আজ আসলে ৬১ তম দিন। এ হামলা খুবই সফল ছিল।”
বাজারে এই হামলার কি প্রভাব পড়বে? এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, “আমি মনে করি বাজারের জন্য এটি খুবই ভাল হবে। কারণ, ইরানের কোনও পারমাণবিক অস্ত্র থাকবে না।”
ইরান যাতে পরমাণু অস্ত্র বানাতে না পারে তা নিশ্চিত করতে দেশটির একাধিক পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনা এবং সামরিক বাহিনীর কমান্ডার ও পরমাণু বিজ্ঞানীদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েল।
এতে নিহত হন ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডস কোরের প্রধান হোসেইন সালামিসহ এক শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং দুজন পরমাণু বিজ্ঞানী।
ইরান অবশ্য বলছে, নিহত পরমাণু বিজ্ঞানীর সংখ্যা ৬ জন। দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভির প্রতিবেদনে নিহতদের মধ্যে বেসামরিক নাগরিক ও শিশু থাকার কথাও বলা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকা লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য ছাড়া ইসরায়েলের পক্ষে ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে এমন নজিরবিহীন হামলা চালানো সম্ভব নয়।
ইরানের কয়েকটি পারমাণবিক কেন্দ্র মাটির অনেক গভীরে থাকায় সেখানে হামলা চালানোর জন্য বিশেষ বোমা প্রয়োজন। আর সেজন্যই যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য তাদের দরকার।
আবার ইরান পাল্টা হামলা চালালেও ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাইতে পারে। সেক্ষেত্রে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ, অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করা নিয়ে আলোচনার দিকে তাকিয়ে। আগামী রোববার ইরানের সঙ্গে ষষ্ঠ দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের।
যদিও ইরান বরাবরই বলে আসছে, তারা কোনও পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে না। শান্তিপূর্ণ কাজে তারা পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছে। তবে ইসরায়েল তা মানতে নারাজ।
শুক্রবার ইসরায়েল যে হামলা চালিয়েছে ইরান তার জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি একটি বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ‘কঠোর শাস্তি’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ওদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প খোদ ট্রুথ স্যোশালে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, “পারমাণবিক চুক্তি না করলে আরও ভয়ঙ্কর ইসরায়েলি হামলার মুখে পড়তে হবে ইরানকে। তখন আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।”
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে ইসরায়েলের হামলাকে প্রছন্ন সমর্থন দেওয়ার সুরে ট্রাম্পের কথাবার্তা, তার ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইরানকে তার এই হুঁশিয়ারি এমন ধারণাই পোক্ত করছে যে, ইসরায়েলি হামলার নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে।