ই-পাসপোর্ট ও অনলাইনে জন্মনিবন্ধন

আশফাক আহমেদ

ই-পাসপোর্ট আবেদন
এমআরপি পাসপোর্টের আধুনিক রূপ ই-পাসপোর্ট। এতে সিম কার্ডের চিপেই থাকে পাসপোর্টধারীর সব ধরনের তথ্য। যেমন চোখের রেটিনা স্ক্যান, ১০ আঙুলের বায়োমেট্রিক ছাপ ইত্যাদি। ই-পাসপোর্ট করতে লাগবে: অনলাইন আবেদনের সামারি, আবেদনের কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, ঠিকানার প্রমাণপত্র বা ইউটিলিটি বিলের কপি, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের ফটোকপি ও আসল পাসপোর্ট, বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, পেশাগত সনদ বা চাকরির আইডি কার্ডের ফটোকপি ও নাগরিক সনদ বা চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট ইত্যাদি।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট করার জন্য িি.িবঢ়ধংংঢ়ড়ৎঃ.মড়া.নফ/ষধহফরহম এই ওয়েবসাইটে ঢুকে অ্যাপ্লাই অনলাইন মেন্যুতে ক্লিক করে, আঞ্চলিক অফিস ও থানা নির্বাচন করতে হবে। ই-মেইল ভেরিফিকেশন করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, পূর্ববর্তী পাসপোর্টের তথ্য, ঠিকানা, পিতা-মাতার তথ্য ও জরুরি যোগাযোগের ঠিকানার জায়গাগুলো পূরণ করুন। পাসপোর্ট ও ডেলিভারির ধরন সিলেক্ট করে আবেদন সম্পন্ন করুন ও প্রিন্ট কপি নিন। আবেদনের সময় খেয়াল রাখতে হবে ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা ও পিতা-মাতার তথ্য সঠিক আছে কি না। আবেদন সাবমিট করার পর, ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্টের ফি পরিশোধ করুন। সবশেষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদনটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিন।

পাসপোর্ট রিনিউ
দেশের সব জেলা পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম চালু রয়েছে। এমআরপি পাসপোর্ট নবায়ন করে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউ করার ফরম পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রেও জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া তথ্য অনুসরণ করতে হবে। অনলাইনে পাসপোর্ট রিনিউয়ের ক্ষেত্রে একটি নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে শুধু আইডি ডকুমেন্টস অপশন থেকে আগের এমআরপি পাসপোর্ট অপশনটিতে ক্লিক করুন ও বিস্তারিত তথ্য দিন। কেন আপনি নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছেন, তা জানাতে হবে। বেশ কিছু অপশন আসবে; মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া, হারিয়ে বা চুরি হয়ে যাওয়া, তথ্য পরিবর্তন, পাসপোর্ট নষ্ট বা ছিঁড়ে যাওয়া কিংবা অন্যান্য কারণ। এক্সপায়ার্ড বা মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। পুরোনো পাসপোর্ট দেখে পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ লিখবেন। বাকি ধাপগুলো স্বাভাবিক ই-পাসপোর্ট আবেদনের মতো সম্পন্ন করে সাবমিট করলেই হবে।

এরপর আবেদনের কপি এ-ফোর সাইজের কাগজের উভয় পৃষ্ঠায় প্রিন্ট করে নিন। পাসপোর্ট রিনিউ ফি পরিশোধ করুন। সঙ্গে আবেদনপত্রের প্রিন্ট কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ, মানি অর্ডার বা ব্যাংক সার্টিফাইড চেক, আগের পাসপোর্ট ও ডেটা পেজের প্রিন্ট কপি, সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে জিও বা এনওসির ফটোকপি দিতে হবে।

পাসপোর্ট রিনিউয়ের ফি নতুন পাসপোর্টের ফি’র মতোই। ৫ বছর মেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৪ হাজার ২৫ টাকা। ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৬ হাজার ৩২৫ টাকা। ১০ বছরমেয়াদি ৪৮ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং ৬৪ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট ফি ৮ হাজার ৫০ টাকা।

অনলাইনে জন্মনিবন্ধন
ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে শুরু করে সন্তানের স্কুলে ভর্তি সব জায়গাতেই জন্ম সনদ প্রয়োজন হয়। ঘরে বসে খুব সহজেই স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করে নেওয়া সম্ভব। জন্মনিবন্ধনের জন্য ওয়েবসাইট নফৎরং.মড়া.নফ প্রবেশ করুন। কোন এলাকা থেকে জন্মনিবন্ধন সনদ তুলতে চান সেটি নির্বাচন করতে হবে। শিশুর জন্ম যদি দেশের বাইরে হয় তাহলে বাংলাদেশ দূতাবাস নির্বাচন করতে হবে। আবেদনকারী যে এলাকা বা কার্যালয় নির্বাচন করবেন পরে সেখান থেকেই সনদ সংগ্রহ করতে হবে। আবেদনকারীকে একটি ফর্ম দেওয়া হবে। নিবন্ধনাধীন ব্যক্তির পরিচিতি অংশটি ভালোভাবে পূরণ করুন। এই অংশে আবেদনকারীর নামের দুটি অংশ (বাংলা ও ইংরেজি) দু’ভাবেই লিখতে হবে। ইংরেজিতে লেখার সময় অবশ্যই বড় হাতের অক্ষর ব্যবহার করতে হবে। আবেদনকারীর জন্ম তারিখ পরের দুটি ঘরে শিশু বাবা-মা’র কততম সন্তান ও লিঙ্গ উল্লেখ করতে হবে। শিশুর জন্মস্থান লিখুন। আবেদনকারীর দেশ, বিভাগ, বাংলায় ডাকঘর, ইংরেজিতে ডাকঘর। বাংলায় গ্রাম/ মহল্লা, ইংরেজিতে গ্রাম/ মহল্লা, বাংলায় বাড়ি/ রাস্তা, ইংরেজিতে বাড়ি/ রাস্তা এই ঘরগুলো পূরণ করতে হবে।

এরপর নিচের ডান দিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনটিতে ক্লিক করলে আরেকটি ফর্ম আসবে। সেই ফর্মের প্রথম ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার জন্ম সনদ নম্বর লিখতে হবে। পরের দুটি ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে বড় অক্ষরে লিখতে হবে। তারপরের দুটি ঘরে নিবন্ধনকারীর বাবার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জাতীয়তা লিখতে হবে। একইভাবে নিবন্ধনকারীর মা’য়ের তথ্যও পূরণ করতে হবে।
এই ঘরগুলো পূরণ করা হলে নিচের ডান দিকে থাকা ‘পরবর্তী’ বাটনটিতে ক্লিক করতে হবে। এখানে আপনার ঠিকানা লিখতে হবে। প্রথমেই ‘আপনি কি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানা স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করতে চান?’ অপশন থেকে কোনোটি নয় বাছাই করলে ঠিকানা দেওয়ার জন্য একটি পৃষ্ঠা আসবে। আপনার জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই হলে জন্মস্থানের ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা একই অপশনটিতে ক্লিক করুন। সক্রিয়ভাবে ঠিকানার তথ্যগুলো চলে আসবে। না হলে ঠিকানা আলাদা করে লিখুন।

ঠিকানা লেখার পর পরবর্তী বাটনে ক্লিক করে সেখানে আবেদনকারীর তথ্য দিতে হবে। আবেদনকারীর সঙ্গে নিবন্ধনকারীর সম্পর্ক, আবেদনকারীর মোবাইল নম্বর ও ই-মেইল দিতে হবে। নিবন্ধনকারী যদি ১৮ বছরের বেশি বয়সের হন তাহলে নিজেই আবেদন করতে পারবেন। সবশেষে সাবমিট বাটনটিতে ক্লিক করুন। জন্মনিবন্ধন আবেদনটি সঠিকভাবে সাবমিট হলে একটি আবেদন নম্বর দেওয়া হবে। এই নম্বরটি দিয়ে জন্মনিবন্ধনের অবস্থা জানা যাবে। ‘আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করুন’ বাটনে ক্লিক করে আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে নিন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রিন্ট করা কপিটি নিয়ে নির্দিষ্ট কার্যালয়ে গিয়ে জমা দিলেই জন্মনিবন্ধন সনদটি পেয়ে যাবেন।

২০১০ সাল থেকে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে। যাদের হাতে লেখা জন্মসনদ আছে তারা অনলাইনে এটি করে নিতে পারেন। প্রথমে যাচাই করে নিন আপনার জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল করা আছে কি না। এজন্য বাবৎরভু.নফৎরং.মড়া.নফ লিংকে গিয়ে আপনার জন্মতারিখ ও আগের জন্মসনদের নম্বর লিখলে জানতে পারবেন জন্মনিবন্ধন ডিজিটাল করা আছে কি না। ডাটাবেইজে না থাকলে নতুন করে জন্মনিবন্ধনের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে হবে।

জন্ম ২০০১ সাল বা তারপর হলে জন্মনিবন্ধন আবেদনের জন্য পিতা ও মাতার জন্মনিবন্ধন অবশ্যই অনলাইনে থাকতে হবে। জন্ম ২০০০ সাল বা তার পূর্বে হয়ে থাকলে বাবা-মায়ের জন্মনিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক নয়। এ ক্ষেত্রে আবেদনের সময় পিতা-মাতার নাম লিখে দেওয়া যায়। নফৎরং.মড়া.নফ লিখে গুগল বা যে কোনো ব্রাউজারে সার্চ করুন। উপরের জন্মনিবন্ধন মেন্যুতে ক্লিক করে নিবন্ধন সনদ পুনঃমুদ্রণ বা সাব মেন্যুতে ক্লিক করুন। হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন নম্বর এবং জন্মতারিখ দিয়ে অনুসন্ধান করুন। আইডি, জন্মতারিখ, নিবন্ধিত ব্যক্তির নাম, পিতার নাম, মাতার নাম ইত্যাদি দেখাবে। ‘নির্বাচন করুন’ বাটনে ক্লিক করে ‘কনফার্ম’ করুন। নিবন্ধক কার্যালয়ের নাম, আবেদনকারীর তথ্য, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য দিয়ে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করুন। আবেদনপত্রের নম্বর দেখাবে সেটি সংরক্ষণ করুন এবং প্রিন্ট করে নিন। আবেদনপত্রে স্বাক্ষর করে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভায় জমা দিন। কর্তৃপক্ষ ফি নিয়ে আবেদনটি জমা রাখবে। কয়েক দিনের মধ্যে বাংলা এবং ইংরেজি ভার্সনে আপনার জন্মনিবন্ধন সনদ পেয়ে যাবেন।

লেখাটির পিডিএফ দেখতে চাইলে ক্লিক করুন:টেক ট্রেন্ড

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

18 + one =