ঈদের সিনেমাকে চোখ রাঙাচ্ছে পাইরেসি

সিনেমার জন্য পাইরেসি এক জটিল ব্যাধি, যা একটি ভালো সিনেমাকে ধ্বংস করে দেয়। পাইরেসির কারণে সারা বিশ্বের নির্মাতা ও প্রযোজকেরা আতঙ্কে থাকেন। অনেক সময় প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির দিনেই অনলাইনে ফাঁস হয়ে যায় সিনেমা। নির্মাতা-প্রযোজক পড়েন বিপাকে। আমাদের দেশে মাঝে কিছুটা সময় পাইরেসির প্রকোপ কম দেখা গেলেও এখন আবার সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তবে পাল্টেছে পাইরেসির ধরন। এখন পুরো সিনেমা নয়, সিনেমার গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য ফাঁস করে দেওয়া হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।

ঈদে মুক্তি পাওয়া পাঁচটি সিনেমা নিয়ে দর্শকের মাঝে বেশ সাড়া দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টিও বাধা হতে পারছে না। টিকিট না পেয়ে সিনেমা না দেখে দর্শকেরা ফিরে যাচ্ছেন, এমন দৃশ্যও দেখা যাচ্ছে। এর মাঝেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ঈদের কয়েকটি সিনেমার বেশ কিছু দৃশ্য। অনেকে আবার রিভিউর নামে শেয়ার করছেন হলে ধারণ করা ভিডিওগুলো। গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যগুলো দেখার ফলে বা আগে থেকেই গল্প জেনে গেলে সিনেমার প্রতি দর্শকের আগ্রহ কমে যায়। এমন প্রেক্ষাপটে বিপাকে পড়েছেন সিনেমাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তাঁদের ধারণা, অনেকে ইউটিউব বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের প্রোফাইল বা পেজের রিল, ভিডিওর ভিউ বাড়াতে এমনটা করছেন। আবার কেউ কেউ সিনেমার ক্ষতি করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করছেন।

এমন পরিস্থিতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবাইকে সতর্ক করে পোষ্ট দিয়েছেন ‘প্রিয়তমা’ সিনেমার পরিচালক হিমেল আশরাফ। অন্যদিকে এমন কাজ না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমার নায়িকা তমা মির্জা।

এ বিষয়ে নির্মাতা হিমেল আশরাফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এমন কাজ মোটেও কাম্য নয়। সিনেমার প্রশংসা কিংবা গঠনমূলক সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু সিনেমার দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়াটা একদম ঠিক নয়। আমরা ইতিমধ্যে সাইবার ক্রাইমে বিষয়টি জানিয়েছি। যে লিংকগুলো পাচ্ছি, সেগুলো সাইবার ক্রাইমে পাঠাচ্ছি। শিগগির তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

হিমেল আশরাফ আরও বলেন, ‘আমরা যেসব পোস্ট শনাক্ত করেছি, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছে, সংঘবদ্ধ একটা চক্র ইচ্ছাকৃতভাবে এমন কাজ করছে। প্রিয়তমা ভালো চললে তাদের কী ক্ষতি, সেটাই বুঝতে পারছি না। সিনেমা ভালো ব্যবসা করলে তো পুরো ইন্ডাস্ট্রির জন্য মঙ্গলজনক। আমি অনুরোধ করছি, যাঁরা ভিডিওগুলো আপলোড করেছেন, তাঁরা যেন সরিয়ে ফেলেন। আমরা কারও সঙ্গে শত্রুতা চাই না। কেউ বিপদে পড়ুক, সেটাও চাই না।’

সুড়ঙ্গ সিনেমার পরিচালক রায়হান রাফী বলেন, ‘একটা গ্রুপ পরিকল্পনা করে এমনটা করছে। এর আগে “পরাণ” সিনেমার সঙ্গেও এমন করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সফল হতে পারেনি। আমার বিশ্বাস, এবারও আটকাতে পারবে না। আমরা ইতিমধ্যে আইডিগুলো চিহ্নিত করে সাইবার ক্রাইমে জানিয়েছি। দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

অন্যদিকে, ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘ক্যাসিনো’ সিনেমার পরিচালক সৈকত নাসির বলেন, ‘সিনেমা হল থেকে ভিডিও ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া বিরাট ক্রাইম। এর ফলে সিনেমার অনেক ক্ষতি হয়। এমনিতেই সিনেমায় বিনিয়োগকারীর সংখ্যা কমে গেছে। এমনটা চলতে থাকলে সিনেমায় লগ্নিকারী খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে।’

সৈকত নাসির আরও বলেন, ‘বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে বলতে হবে। কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক হতে হবে, যেন হলে কেউ ভিডিও করতে না পারে। এরপরেও এমনটা ঘটলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। চুপচাপ বসে থাকলে সমাধান হবে না।’

বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদের দিন থেকে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের ভিড় নতুন করে আশা জাগালেও চোখ রাঙাচ্ছে পাইরেসি। শেষ পর্যন্ত সব বাধা পেরিয়ে ঈদের সিনেমাগুলো ব্যবসায়িকভাবে কতটা সাফল্য পায়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

3 + 17 =