উন্নত দেশগুলোর উপর কার্বন দূষণ কমানোর চাপ বৃদ্ধি করতে হবে

আফরোজা আখতার পারভীন 

জলবায়ু তহবিলে অর্থায়ন করার চেয়ে উন্নত দেশগুলোর উপর কার্বন নিঃসরন কমানোর বিষয়ে চাপ বাড়াতে হবে। এ কাজে তাদের দেশের সিভিল সোসাইটিকে ব্যবহার করতে পারলে বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হতে অতি দূষণকারী দেশগুলোকে আগ্রহী করা যাবে।

বিসিপিসিএল ইপি ক্লাইমেট টকসের আলোচনায় অংশ নিয়ে এমন মন্তব্য করেন বাংলাদেশ এনার্জি  সোসাইটির  প্রেসিডেন্ট এবং সাবেক মুখ্যসচিব ও এসডিজি বিষয়ক সেলের মূখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।

তিনি বলেন, একবার কথা উঠেছিল, কখনও কি অডিট করে দেখা হয়েছে কত কার্বন ব্যায় করে সম্মেলনে যোগদান করলেন, আর অর্জণ কি। গত কপ সম্পর্কে অনেকেই নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। আমি কিন্তু পজিটিভ দেখি। সেখানে কার্বন নিঃসরন ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কথা বলা হয়েছে। প্যারিস চুক্তিতে বলা হয় ওয়েল বিলো ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস দিয়ে শুরু চেষ্টা করবে। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রিতে ধরে রাখার প্রশ্নে কপ ২৬ সবার ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে কোন মহামারির পরে মানুষ অনেক বেশি ভোগবাদী হয়ে যায়, উৎপাদন বেড়ে যায়, বিদ্যুতের ব্যবহার বেড়ে যায়, কোভিডের পরও তাই হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপে রাশিয়ার  সরবরাহ বন্ধ রাখছে, কখনও নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ার তেল-গ্যাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ইউরোপ মধ্যপ্রাচ্য থেকে কিনছে, এতে করে চাহিদার তুলনায় যোগান কম, দাম প্রচন্ডভাবে বেড়েছে।

গ্রীস্মকালে আমরা দেখলাম ইউরোপ প্রচন্ড গরম, অনেক জায়গায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটেছে, বনে আগুন লেগেছে ঘরে আগুন লেগেছে, প্রচন্ডভাবে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে। অনেক জায়গায় লেকগুলো শুকিয়ে গেছে। এতে খাদ্য উৎপাদন কমে যাবে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, কপ-২৭ কী দেবে তা বড় আলোচ্য। ইউরোপের অনেক দেশ কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করেছে, নিউক্লিয়ার চালু করছে। আমরা ফসিল ফুয়েল চালু করলে তারা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখান। অথচ তারা কোন চিন্তাভাবনা ছাড়াই কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু করলো। তাদের নতুন ভূমিকায় কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। আমার মনে হয় ইউরোপসহ বিশ্বের এখনও বোধটা আসেনি, তারা এখন ভোগের মধ্যেই আছে, উৎপাদন বাড়বে। আমি মনে করি এবার কপে যুবকরা, পরিবেশবাদীরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করবে। যারা কার্বন নিঃসরণ বেশি করছেন তাদের উপর চাপ তৈরি হবে।

এখন উন্নত দেশগুলো এনার্জি ঝূঁকিপুর্ন হয়ে পড়েছে। এসব কারণে সারাবিশ্বে জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে। আমরা যখন লস এন্ড ড্যামেজের জন্য যাচ্ছি, আমার ধারনা, যে টাকাটা আমার জন্য দেওয়ার কথা বলবে, সেটাকা নিজের জন্য ব্যায় করবে। বলবে আমিতো আমার দেশেই বিনিয়োগ করছি। জলবায়ূ তহবিলে উন্নত দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা ছিল, তারা তা দেয়নি, ২০২৫ সাল পর্যন্ত জলবায়ু তহবিলে ৫শ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা, কিন্তু পাওয়া যাবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে এবারও চাপ অব্যাহত রাখতে হবে।

জলবায়ূ তহবিলের অর্থ ২০ শতাংশ সহায়তা, ৮০ শতাংশ ঋণ হিসেবে দেওয়া হয়। কথা ছিল সফট ঋণ হিসেবে দেওয়ার কথা। এখনতো প্রচলিত ঋণের মতোই হচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন কোভিড পরিস্থিতির কারণে উন্নয়নশীল দেশগুলোর রপ্তানি কমেছে, আমদানি বেড়েছে, সাপোর্টটা পেলে ঘাটতি মেটানো যেতো, সেটা করা যাচ্ছে না। চাপ বাড়াতে হবে, এলডিসি গ্রুপের আওয়াজ আরও বাড়াতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মৌলিক ও মানবাধিকার যে ক্ষুন্ন হচ্ছে সেগুলো নিয়ে কথা বলতে হবে। ড্যামেজ কিন্তু থেমে নেই, সিত্রাংয়ে লাইফ ড্যামেজ নেই, কিন্তু সম্পদের ড্যামেজতো অনেক। কার্বন নিঃসরনের কারণে ক্ষতির বিষয়টি অনেকেই স্বীকারেই করতে চাইছে না। এটার অডিটিং যদি ঠিকমতো না হয়, তাহলে এর ভালো ফল পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু সঠিক পথেই রয়েছি ১০টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিযেছি, আমি মনে করি গুরুত্বটা এখানে বেশি দিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য উন্নত দেশের সিভিল সোসাইটি দিয়ে নিজ নিজ সরকারের উপর চাপ বাড়াতে হবে, তাদের আওয়াজ জোরদার করতে হবে। দেশে দেশে যুবকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ নিজে অনুসরণ করে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে। নিজে ১০টি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। ক্লিন এনার্জির দিকে যেতে যাচ্ছে। স্থলভাবে সেভাবে বায়ু বিদ্যুতের সুযোগ কম। কিন্তু আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান বলছে সাগরে ২০ হাজার মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুতের সুযোগ রয়েছে।

রেল লাইনের উপর, সড়কের উপর, ক্যানেলের উপর সোলার প্যানেল বসানোর সুযোগ রয়েছে। ক্যানেলগুলোতে ভাসমান প্যানেল বসানোর সুযোগ রয়েছে। অনেক সরকারি বেসরকারি ভবনের ছাদ পড়ে রয়েছে, অনেক সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পতিত জমি রয়েছে, সেগুলো ব্যবহার করা উচিত।

আমাদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে, এ কথা আমি অস্বীকার করি না। গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড পাওয়ার প্রসেস খুবই জটিল। এটি আরও সহজতর করা উচিত। কার্বন ইমিশনের কমানোর পাশাপাশি মিথেন ইমিশন কমানোর জন্য বৃক্ষ রোপন কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।

আমাদের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে আরও জোরদার করা দরকার। অনশোর অফশোরে আরও অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। কয়লাতে না গিয়ে ক্লিন ফুয়েল এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমেই চাহিদা পুরণ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন আবুল কালাম আজাদ।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

5 × 2 =