উষ্ণ গ্যাবায় অবিস্মরণীয় ক্রিকেট

সালেক সুফী

অস্ট্রেলিয়ার ঐতিহাসিক টেস্ট ভেন্যু উলন গ্যাবায় কাল বর্ডার – গাভাস্কার টেস্ট সিরিজের গুরুত্বপূর্ণ তৃতীয় টেস্টের দ্বিতীয় দিনে অবিস্মরণীয় খেলা উপভোগ করলাম। ১-১ সমতায় থাকা এই টেস্ট ভারত অস্ট্রেলিয়া দুই দলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৃষ্টি বিঘ্নিত দিনে মাত্র ১৩.২ ওভার খেলা হয়েছে। কাল ছিল প্রচন্ড গরম। বিশ্ব সেরা খেলোয়াড়দের ব্যাট বলের তীব্র লড়াই দেখলাম। মারকুটে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেড (১৫২) এবং এই যুগের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান স্টিভ স্মিথের (১০১) জুটিতে দীর্ঘ দিন মনে থাকার মত ২৪১ রানের জুটির সুবাদে দিন শেষে ৪০৫/৭ করে অস্ট্রেলিয়া চালকের ভূমিকায়। কঠিন এই উইকেটে ম্যাচে বল নিয়ে একা লড়াই করেছে অনেকের মতে বর্তমান মুহূর্তে বিশ্বসেরা বোলার জাসপ্রিত বুমরা (৫/৭২)।  আজ টেস্টের তৃতীয় দিন। বৃষ্টি বাগড়া দেয়ার পূর্বাভাস আছে। হয়তো চতুর্থ পঞ্চম দিনেও বৃষ্টি বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু খেলা হলে ভারতকে হয়তো কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। ছেলে শুভ্রকে নিয়ে দারুন উপভোগ করেছি কালকের খেলা।

আগেই বলেছি প্রথম দিনের খেলার প্রায় পুরোটা বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিলো। চেষ্টা করেও প্রথম দিনের টিকেট পাইনি।  মার্সডেন টাভর্নে বসে বৃষ্টির মাঝে চোখ রেখেছিলাম বড় পর্দায়। মাত্র ১৩.২ ওভারে টস পরাজিত অস্ট্রেলিয়া ব্যাটিং করে বিনা উইকেটে ২৮ রান সংগ্রহ করেছিল। কাল দ্বিতীয় দিনে মিক্সড জোনে ভারত সমর্থক পরিবেষ্টিত নীল সাগরে বসার সুযোগ হয়েছিল। উইকেটে ছিল বাউন্স আর গতি। বুমরা, সিরাজ, আকাশ দীপ নাভি শাস তুলেছিল অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের। দিনের শুরুতেই বুমরা খাজা আর মাৎসুইনিকে অল্প রানের ব্যাবধানে ফিরিয়ে দিলো। উইকেটে এসে স্মিথ আর লেবুচাঙ ধুকছিল। একসময় নিতেশ রেড্ডির বলে লেবুচাঙ ফিরে গেলে জুটি বাধলো স্মিথের সঙ্গে মারকুটে ট্রাভিস হেড। ইদানিং হেড ভারতের বোলারদের জন্য রীতিমত আতংক। যে উইকেটে অন্য ব্যাটসম্যানরা ছিল অস্তিত্বের লড়াইয়ে সেখানেই শুরু থেকেই প্রতি আক্রমণ শুরু করলো বাম হাতি স্ট্রোক মেকার হেড। ওর জিওন কাঠির পরশে জেগে উঠলো স্মিথ। এই জুটির রান প্লাবনে ভেসে গেলো ভারতের সকল প্রতিরোধ। তীব্র গরমে দর্শকদের মাঠে থাকা যখন কষ্টকর মাঠের মাঝে ভারতীয় বোলার ফিল্ডারদের পরিস্থিতি বুঝতেই পারেন। একেতো গরম তার পরে ট্রাভিস হেডের মারকুটে ব্যাটিং। কঠিন উইকেটে ১৬০ বলে ১৫২ রানের ঝকঝকে ইনিংসে ছিল চোখ চেয়ে দেখার মত ১৮ টি চারের মার। অন্যদিকে রানের জন্য সংগ্রাম করে স্মিথ ১৯০ বল খেলে দীর্ঘ দিন পরে করেছে ৩২ম টেস্ট সেঞ্চুরি। এই জুটির ২৪১ রান হয়তো সিরিজের ভাগ্য গড়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় নতুন বলে বোলিং করতে এসে ভুমরা দ্রুত স্মিথ, হেড আর মার্শকে ফিরিয়ে ভারতকে ম্যাচে ফেরার আশা জাগিয়ে রাখে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে সিরাজ বা আকাশ দ্বীপ জ্বলে না ওঠায় অস্ট্রেলিয়া ৪০৫/৭ রানে দিন শেষ করে চালকের আসনে আসীন হয়। আলেক্স ক্যারি ৪৫ রানে অপরাজিত ছিল। জাসপ্রিত বুমরা সারাদিন আক্রমনাত্বক বোলিং করে ৭২ রানে ৫ উইকেট তুলে নেয়। স্বল্প রান-আপে গতিময় বোলিং ব্যাটসম্যানদের কিন্তু ধাঁধায় ফেলে দেয়। ওর বিশেষায়িত একশনের কারণে ওর বোলিং বুঝতে ব্যাটসম্যানরা খাবি খায়।

শুনেছি গ্যাবা ভেঙে ফেলে নতুন করে স্টেডিয়াম নির্মাণ করা হবে অলিম্পিক অনুষ্ঠানের জন্য। তাই হতে পারে চলতি ম্যাচটি ঐতিহাসিক গ্যাবার শেষ টেস্ট। উইকেটে বাউন্স আছে। যদি বাকি তিন দিনের দুই দিন খেলা হয় বৃষ্টি বাধা পেরিয়ে ভারতের জন্য কঠিন হবে পরাজয় এড়ানো। আর এই টেস্ট অস্ট্রেলিয়া জিতে নিলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল খেলা ভারতের জন্য দুরূহ হয়ে যাবে। বাম হাতি মারকুটে ব্যাটসম্যান ট্রাভিস হেডের মোকাবিলায় অফ স্পিনার রবিচন্দ্র অশ্বিনকে না খেলানো হয়তো ভুল হয়েছে। অন্যদিকে কাল অন্তত শেষ ৩০ মিনিট অস্ট্রেলিয়া পরিশ্রান্ত ভারতকে ব্যাটিং না করিয়ে ভুল করেছে বলে অনেকের ধারণা। হয়তো এই সময় একটি বা দুটি উইকেট তুলে নেয়ার সুযোগ ছিল। বৃষ্টি কিন্তু চোখ রাঙ্গাচ্ছে মাঠের বাকি বড় অংশ ধুয়ে নেয়ার। যাহোক একটি উষ্ণ দিনে অত্যন্ত উঁচু মানের ক্রিকেট মাঠে বসে দেখার সৌভাগ্য হলো বর্ণিল গ্যালারিতে ভারত অস্ট্রেলিয়া সমর্থকদের নীল-সোনালী সাগরে ভেসে।

 

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

16 − eight =