কোয়ালিফাইং রাউন্ডে কৃতিত্বের সঙ্গে জয়ী হয়ে বাংলাদেশের মহিলা ফুটবল দল প্রথম বারের মত এশিয়া কাপের চূড়ান্ত রাউন্ডে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। আগামী মার্চ ২০২৬ অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে এশিয়া অঞ্চলের ১২ দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এশিয়া কাপের আসর। মূলত পাহাড়ী এবং দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের কিশোরীদের নিবেদিত অবদানে বাংলাদেশের মেয়েরা অনন্য সাফল্য অর্জন করেছে। সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখে বিশ্বকাপ এবং অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জনের। সিডনিতে সম্প্রতি টুর্নামেন্টের ড্র অনুষ্ঠিত হয়েছে। আশা করেছিলাম বাংলাদেশ দলের অধিনায়ককে অন্তত পাঠানো হবে। কেউ আসেনি বাংলাদেশ থেকে।
গ্রুপ বি: চীন, উত্তর কোরিয়া, বাংলাদেশ, উজবেকিস্তান।
বাংলাদেশ গ্রূপে আছে ৯ বারের চ্যাম্পিয়ন চীন, ৩ বারের চ্যাম্পিয়ন উত্তর কোরিয়া এবং বাংলাদেশের সমমানের দল উজবেকিস্তান। কঠিন গ্রূপ সন্দেহ নেই। চীন, উত্তর কোরিয়াকে টপকে বাংলাদেশ শীর্ষ স্থানে যেতে পারবে সেটি কল্পনা করাও কঠিন। কিন্তু পরিকল্পিত পথে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে বাংলাদেশ দুই দলের সঙ্গে হয়তো লড়াই করতে পারবে। সম্ভাবনা আছে উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় লাভ করার। দুটি ম্যাচ হবে সিডনিতে একটি পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। সময় সুযোগ হলে অবশ্যই মাঠে থাকতে চেষ্টা করবো বাংলার বাঘিনীদের উৎসাহিত করতে।
এখন প্রশ্ন হলো এখন থেকে মার্চ ২০২৬ পর্যন্ত কিভাবে বাংলাদেশের মেয়েদের উন্নত পরিবেশে যথাযথ অনুশীলন করিয়ে প্রস্তুত করা যায়। বাংলাদেশ বা দক্ষিণ এশিয়ার পরিবেশে প্রস্তুতি যথাযথ হবে না। অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ, আবহাওয়া, পরিবেশ ভিন্ন। সেখানে চীন, উত্তর কোরিয়ার মত অগ্রসর দলগুলোর সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা অর্জন করতে হলে অবশ্যই বাংলাদেশ দলকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।
আমি বাংলাদেশ দলের অধিকাংশ খেলা ডিজিটালি দেখেছি। মূল দল এবং অনুর্ধ ১৯ দলের অধিকাংশ খেলোয়াড়ের বেসিক স্কিল, ফুটবল সেন্স, খেলার কৌশল অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের। ৯০ মিনিট সমান তালে খেলার মত শারীরিক সক্ষমতা আছে। কিন্তু সেগুলো হয়ত দক্ষিণ এশিয়া পর্যায়ের দলগুলোর বিরুদ্ধে জয়ের জন্য পর্যাপ্ত। কিন্তু চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে কিভাবে এগুতে হবে সেটি নিঃসন্দেহে পিটার বাটলারের জানা আছে।
প্রথমেই বলবো দেশের দলের স্বার্থে বিদ্রোহী সেরা খেলোয়াড়দের কয়েকজনকে দলে ফিরিয়ে এনে অবিলম্বে প্রস্তুতির একটি রোড ম্যাপ প্রস্তুত করতে হবে। ফিফা উইন্ডোতে যতটা সম্ভব বাংলাদেশের চেয়ে রাংকিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোর সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ আয়োজন করে নিজেদের যাচাই করতে হবে। জানতে পেরেছি বিএফএফ সভাপতি পরিকল্পনা করছে।
চীন বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র। বাংলাদেশ দলকে কিছু দিনের জন্য চীনে পাঠিয়ে উন্নত পরিবেশে অনুশীলন করানো যায় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। পাশাপাশি ভিয়েতনাম, ফিলিপিন্স, মায়ানমার দলের সঙ্গে অনুশীলন ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশের গোল রক্ষণ, মধ্যমাঠ, আক্রমণ ভাগে কয়েকজন এশিয়ামানের উন্নত খেলোয়াড় (রূপনা, কৃষ্ণা, ঋতু পর্ণা, সাগরিকা) আছে। ওদের সঙ্গে সাবিনা, সুমাইয়া, মারিয়া মান্দাসহ কয়েকজন যুক্ত হলে শক্তি সামর্থ সুসংহত হবে। তবে সংহতির জন্য যা প্রয়োজন করতে হবে।
বাংলাদেশ অন্তত গ্রূপ পর্যায় শেষে ৮ দলের মাঝে থাকতে পারলে হবে বিশাল অর্জন। আমি নিঃসন্দেহে বলতে পারি এমনকি অস্ট্রেলিয়া সরকার বাংলাদেশের প্রস্তুতিতে সহায়তা করতে দ্বিধা করবে না।
ড্র দেখে শংকিত বা আতংকিত হবার কারণ নেই। বাংলাদেশের মেয়েদের মাঝে হার না মানার প্রতিশ্রুতি দেখেছি। সঠিক প্রণোদনা পেলে এবং যথাযথ প্রস্তুতির সুযোগ পেলে বাংলাদেশ অর্জনের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে জাতিকে গর্বিত করবে আশা রাখি।